Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

ভোটের আগে বাঁধ নিয়ে ক্ষুব্ধ উপকূলের বাসিন্দারা

সুমিত্রা জানান, আয়লায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছিল গ্রামে। বহু মানুষের সঙ্গে ভেসে গিয়েছিল তাঁদের বাড়িঘরও।

গোসাবার পাখিরালয়ে দুর্বল নদীবাঁধের উপরে দাঁড়িয়ে দুর্যোগের সময়ে নদীর ভয়াবহ চেহারার বর্ণনা দিচ্ছেন সুমিত্রা।

গোসাবার পাখিরালয়ে দুর্বল নদীবাঁধের উপরে দাঁড়িয়ে দুর্যোগের সময়ে নদীর ভয়াবহ চেহারার বর্ণনা দিচ্ছেন সুমিত্রা। নিজস্ব চিত্র ।

প্রসেনজিৎ সাহা
গোসাবা  শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ০৮:১৫
Share: Save:

কালবৈশাখীর মরসুম চলছে। তার মধ্যেই চলতি মাসের শেষের দিকে বড় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথাও শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নদীবাঁধ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে উপকূলের বাসিন্দাদের। সামনেই নির্বাচন। ভোট প্রচারে এলাকায় ঘুরছেন প্রার্থীরা। বাঁধের কথা বললে প্রতিশ্রুতিও মিলছে। কিন্তু অভিযোগ, ভোট মিটলে আর কেউ ঘুরে তাকান না বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।

গোসাবার পাখিরালয়ে নদীর পাড়ে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বাস করেন সুমিত্রা মাইতি। বাঁধের কথা তুলতেই সুমিত্রা বলেন, “ভোট আসলেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। ভোট মিটলেই আর এই বাঁধের দিকে ঘুরেও তাকান না। ঝড়, বৃষ্টি যা-ই হোক, এই বাঁধ আগলে আমাদেরই পড়ে থাকতে হয়। বার বার বাঁধ ভেঙে জমি, বাড়ি সব গিলে খেয়েছে নদী। যেটুকু আছে, জানি না তা-ও আর ক’দিন থাকবে!”

সুমিত্রা জানান, আয়লায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছিল গ্রামে। বহু মানুষের সঙ্গে ভেসে গিয়েছিল তাঁদের বাড়িঘরও। সব কিছু সামলে যখন একটু থিতু হয়েছেন, তখনই পর পর আমপান, ইয়াসের মতো ঝড় আবার আছড়ে পড়ল সুন্দরবনের উপরে। ইয়াসে বাঁধ ভেঙে আবার সব ভেসে গেল। তাঁর কথায়, “ভাগ্যিস সে বার দিনের বেলায় বাঁধ ভেঙেছিল, না হলে কী যে হত জানি না!” একটা সময়ে সুমিত্রার বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিল নদী। তবে বর্তমানে ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির উঠোনও কার্যত তলিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে।

কালবৈশাখীর দাপট শুরু হতেই আশঙ্কায় দিনের বেশিরভাগ সময়ে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এই গৃহবধূ। তাঁর কথায়, “যে ভাবে নদীতে জলের ঘূর্ণি দেখা দিচ্ছে, তাতে মনে হয় খুব শীঘ্রই ফের দুর্যোগ আসবে।”

শুধু সুমিত্রা নয়। বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটে ওই গ্রামের বহু মানুষের। বাসিন্দারা জানান, বারো মাসের চিন্তা নিয়েই নদীর পাড়ে বাস করেন। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। জমি-জায়গা যা ছিল, বেশিরভাগই তলিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে। পর্যটন মরসুমে এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে। তখন ছোটখাটো ব্যবসা, হোটেলের কাজ করেই জীবনযাপন করেন।

গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মাইতির কথায়, “ভোট দিতে না গেলেও আমার ভোট পড়ে যাবে। অন্য কেউ দিয়ে দেবে। পঞ্চায়েতের সময়ে তো তাই হল! ফলে ভোট দিতে যাব। তবে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির জন্য গ্রামের মানুষ কত করে বলল সব নেতাদের, হল আর কই! কংক্রিটের বাঁধ না হলে এই গ্রাম টিকবে না।”

২০০৯ সালে বাম শাসনকালে আয়লার পরে সুন্দরবনে কংক্রিটের নদীবাঁধ তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৫০৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। কাজও শুরু হয়েছিল অনেক জায়গায়। কিন্তু ২০১১ সালে বামেদের বিদায় ঘটে সামান্য কিছু কাজ করার পরেই। বাঁধের কাজ শুরু করে তৃণমূল সরকার। বহু জায়গায় বাঁধ তৈরির জন্য জমিও অধিগ্রহণ হয়। কিন্তু মাত্র ১ হাজার কোটি টাকার মতো কাজ করার পরে বাকি কাজ করার
কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাই প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রে ফেরত চলে যায়।

রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “তৃণমূল সরকারের উদাসীনতার ফলেই আজও ভুগতে হচ্ছে সুন্দরবনের মানুষকে। অনেক চেষ্টা করে কেন্দ্রের তরফ থেকে টাকা জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু কাজটাই করল না এরা! কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হলে, বছর বছর এ ভাবে বাঁধ ভাঙত না।”

জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অশোক কান্ডারী বলেন, “ভোটে জিতে আমার প্রথম কাজ হবে সুন্দরবনের নদীবাঁধ যাতে কংক্রিটের হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ করা।”

এলাকার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ অনিমেষ মণ্ডল বলেন, “ইতিমধ্যেই বহু জায়গায় সরকার কংক্রিটের বাঁধ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। যে যে এলাকায় বাঁধের খারাপ অবস্থা, সেগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। কেন্দ্র একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় সুন্দরবনের নদীবাঁধের কাজ কিছুটা হলেও থমকে গিয়েছে। পঞ্চায়েতগুলি একশো দিনের কাজের টাকায়
বাঁধের সংস্কারের কাজ করে, সেটা ব্যাহত হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 gosaba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy