—প্রতীকী চিত্র।
মেছোভেড়ি, ইটভাটার ব্যবসার উপরে দাঁড়িয়ে আছে মিনাখাঁর অর্থনীতি। রাজনৈতিক দলের রং বদলালেও অভিযোগ, বদলায় না মিনাখাঁর দুষ্কৃতীরা। কোটি কোটি টাকার লেনদেন চালায় তারা। এলাকা থেকে যাদের বছরে কোটি টাকা আয়, তারা বড় একটা কাউকে ভয় পায় না। কারও বারণও শোনে না।
মিনাখাঁয় জমিদারি আমল থেকে শুরু করে বাম আমল হয়ে তৃণমূলের জমানাতেও মেছোভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে মারামারি, খুনখুনি, ঘর পোড়ানোর মতো ঘটনা লেগে রয়েছে। ভোটে কোন দল জয়ী হবে জিজ্ঞাসা করলে এক বৃদ্ধ বিরক্ত হয়ে বললেন, “লোকসভা নির্বাচনে আমাদের কী! গত লোকসভা, বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই এলাকায় যা সন্ত্রাস দেখেছি, তাতে ভোটের কথা শুনলে ভয় হয়।” এ বার তো কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। বৃদ্ধ বলেন, “আগের ভোটগুলিতেও তো কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ ছিল। তাতেও আমরা ভোট দিতে পারিনি। সে জন্য এই লোকসভা নির্বাচন নিয়ে আমাদের আর কোনও মাথা ব্যথা নেই।” ভয়ে ভয়ে সে কথা জানালেন মিনাখাঁর বামনপুকুর এলাকার গণেশ মণ্ডল, স্বপ্না কাহার, বরকত গাজিরাও।
এক সময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটিতে গত কয়েকটি নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জেতে তৃণমূল। স্থানীয় বাসিন্দা তপন আঢ্য, কৈলাশ মিত্র, ফজের আলি গাজির কথায়, “সিপিএমের শক্ত ঘাঁটিতে ঘাসফুল ফুটিয়েও গরিব মানুষগুলোর তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। বাঁধ কেটে ফসলের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে কৃষকদের পেটে লাথি মারা হয়েছে।”
এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের রূপালি সর্দার, হাবু মুন্ডা, পালক মণ্ডলেরা বলেন, “ইটভাটা, মেছোভেড়ি তৈরি হয় আমাদের জমিতে। অথচ, আমাদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটে না। প্রতিবাদ করতে গেল ছুটে আসে বোমা-গুলি। নয় তো ঘরে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামনপুকুর এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাই কোর্টে বিশেষ আবেদন জানিয়ে বামনপুকুর এলাকায় একটি আসনে নির্বাচন হয়েছিল। বিরোধী হিসেবে বিজেপির পক্ষ থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছিল। বামপুকুর অঞ্চলের ২৬টি বুথের মধ্যে ওই একটি বুথেই নির্বাচন হয়েছিল। বাকি কোনও বুথে নির্বাচন হয়নি। অভিযোগ, সেখানেও ভোট দিতে যাওয়ার পথে রাস্তায় আটকে হাতে জোর করে কালি লাগিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় অনেককে। চন্দন মণ্ডল, কৃষ্ণা দলুই, শ্যামা মুন্ডারা বলেন, “সেই কথা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এই লোকসভা নির্বাচনে আমরা কি আদৌ ভোট দিতে পারব?”
বামনপুকুর এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না পারে, সে জন্য মিনাখাঁ বিডিও অফিসের পাশে তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী হাতে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে। যারা সাহস করে মনোনয়ন জমা দিতে বিডিও অফিসে গিয়েছেন, তাঁরা ওই দুষ্কৃতী বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয়েছেন।”
রতন সাপুঁই, রপ্তান মাঝিরা বলেন, “কী ভাবে খোলা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বুথের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়, তা আমরা এলাকার মানুষ স্বচক্ষে দেখেছি। পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল, কিন্তু বাহিনীকে ঠিক ভাবে পুলিশ কাজে লাগায়নি। এই লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিলেও কোনও লাভ হবে বলে তো মনে হয় না।”
বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র বলেন, “সাধারণ মানুষ ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ভয় পান। গত পঞ্চায়েতে এখানে বিরোধীরা মনোনয়নই জমা দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটার পর একটা পঞ্চায়েত দখল করেছে। এ বার ভোট কেন্দ্র পৌঁছতে পারলে মানুষ তার যোগ্য উত্তর দেবে।”
সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দারের কথায়, “এত দিন বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে গ্রামের মানুষকে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে এক তরফা ভোট হয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী যদি তাদের কাজ করে, তা হলে ফল অন্য রকম হবে। কিন্তু রাজ্য সরকারের পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজ করতে দেবে বলে তো মনে হচ্ছে না।”
মিনাখাঁর বিধায়ক উষারানি মণ্ডলের দাবি, “ভোটে কোনও দুর্নীতি হয়নি। মানুষ বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ায়, আমাদের ভোট দিয়েছেন।” বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলাম বলেন, “মিথ্যা কুৎসা রটাচ্ছে বিরোধী সহ একশ্রেণির মানুষ। রাস্তা, আলো-সহ উন্নয়ন ও বিভিন্ন প্রকল্প মানুষ দেখে মানুষ আমাদের ভোট দেবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy