সিউড়িতে প্রশাসন ভবনের জেলাশাসক তথা জেলা রিটার্নিং অফিসারের দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন দেবাশিস। নিজস্ব চিত্র।
বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের প্রার্থিপদ ‘বাতিল’ হওয়ার পর থেকেই জেলা বিজেপির কর্মীদের মধ্যে এক রাশ বিভ্রান্তি, হতাশা, সন্দেহ এবং সংশয় কাজ করছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেবাশিসের নামে এত এত দেওয়াল লেখা হয়েছে। ফেস্টুন-ব্যানার ছাপানো হয়েছে। মানুষ তাঁর মুখ চিনেছেন প্রার্থী হিসাবে। এখন সব নতুন করে করতে হবে। এবং সেটা কী করে সম্ভব, সে প্রশ্নই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্মীদের সামনে। কারণ, বীরভূমে ভোট ১৩ মে।
বিজেপির ঘোষিত প্রার্থী তথা প্রাক্তন পুলিশকর্তা দেবাশিস ধর বীরভূম আসনে মঙ্গলবারই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। টানা কুড়ি দিন ধরে প্রচারও করেছেন। বিজেপির দাবি, সরকারের তরফে কোনও বকেয়া না-থাকা সংক্রান্ত শংসপাত্র বা ‘নো ডিউজ়’ সার্টিফিকেট না-দেওয়ায় শুক্রবার দেবাশিসের মনোনয়ন মৌখিক ভাবে বাতিল ঘোষণা করেছেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক। কী কারণে বাতিল, সে ব্যাপারে এখনও লিখিত ভাবে জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে জেলাশাসক শশাঙ্ক শেট্টির কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ফোন ধরেননি, মোবাইলে পাঠানো বার্তার উত্তর দেননি। তবে, প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিজেপিকে লিখিত ভাবে প্রার্থিপদ বাতিলের কারণ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেবাশিসের মনোনয়নে যে নথিপত্রকেন্দ্রিক জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার আভাস মিলিছিল বৃহস্পতিবারই। যখন বীরভূম আসনে বিজেপির প্রতীকে মনোনয়নপত্র জমা দেন দেবতনু। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি ছিল, রাজ্য সরকারের ‘প্রতিহিংসার’ কারণে বিকল্প প্রার্থী দিতে হয়েছে তাঁদের। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। তার আগের ১০ বছরে সরকারের ঘরে বকেয়া আছে কি না, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে হয় প্রার্থীকে। জলের বিল, বিদ্যুতের বিল ও বাড়ি ভাড়া বাকি আছে কি না। দেবাশিসকে রাজ্য সরকারের একটি ‘নো ডিউজ়’ সার্টিফিকেট দেওয়ার ছিল। জগন্নাথের দাবি, ‘‘সরকারের ঘরে ওঁর কোনও বকেয়া ছিল না। বারবার আবেদন সত্বেও রাজ্য সরকার ওঁকে সেই সার্টিফিকেট দেয়নি। তা না-থাকায় রিটার্নিং অফিসার মনোনয়ন বাতিল করেছেন।’’
পরিবর্তিত পরিস্থিতে বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন, সত্যিই যদি এমন জটিলতার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল, তাহলে কেন আগাম সতর্কতা নেওয়া গেল না। দেবাশিস ধর এখন মনোনয়ন বাতিল ঘোষণার পরে হাই কোর্টে মামলা করেছেন। দলের কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘বিকল্প প্রার্থীর মনোনয়নই বলে দিচ্ছে, দলের নেতৃত্বের তরফে মনোনয়ন বাতিলের আশঙ্কা করে সেই মতো প্রস্তুতি ছিল। মাত্র এক দিনের নোটিসে কী করে কেউ লোকসভা আসনে মনোনয়ন দিয়ে দিলেন? তার জন্য অন্তত কয়েক দিনের প্রস্তুতি লাগে।’’ দেবতনু ভট্টাচার্য দলের হয়ে ‘ক্লাস্টার ইনচার্জ ’ছিলেন। হুট করে এসে শেষ মুহূর্তে তিনি কী করে মনোনয়ন দিলেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন কর্মীরা।
এখানেই শেষ নয়, দলে প্রশ্ন উঠেছে, দেবাশিসের মনোনয়ন বাতিলের পরে জেলায় যাঁদের নাম আগে প্রার্থী হিসাবে চর্চায় ছিল, তাঁদের মধ্যে থেকে কাউকে প্রার্থী করা হল না কেন। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার এক নেতা বলছেন, ‘‘যদি কোনও ভাবে আদালতের রায় দেবাশিসের পক্ষে যায় তখন কী হবে? নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন বাকি। প্রচার থামাতে হবে ৪৮ ঘন্টা আগে। এখনও স্পষ্ট নয় প্রকৃত প্রার্থী কে। তা হলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই কী ভাবে হবে?’’ জগন্নাথ বলেন, ‘‘দেবাশিস ধর আমাদের প্রথম প্রার্থী। বিকল্প প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য। তাঁর মনোনয়ন গৃহীত হয়েছে। যদি আদালতের রায় দেবাশিসের পক্ষে যায়, তখন তিনিই প্রার্থী। রায় পক্ষে না গেলে দেবতনু প্রার্থী।’’ বীরভূম জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, ‘নো ডিউজ়’ সার্টিফিকেট জমা না-পড়ার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে কমিশেনের তরফে নির্দেশ এসেছে, ওই শংসাপত্র থাকা আবশ্যিক। কমিশনের নির্দেশ পাওয়ার পরেই দেবাশিসের প্রার্থিপদ বাতিল করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy