Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র, প্রশ্ন জেলায়

অস্ত্র প্রদর্শনও নিষিদ্ধ। কিন্তু, এ দিন যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে বীরভূমে সেই নির্দেশ মান্যতা পেয়েছে বলা যাচ্ছে না।

রামনবমীর শোভাযাত্রায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় ও বিধায়ক বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী।

রামনবমীর শোভাযাত্রায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় ও বিধায়ক বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫২
Share: Save:

কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল না ঠিকই। তবে, ভোটের মরসুমে অস্ত্র-সহ রামনবমীর মিছিল করা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠল বীরভূমে।

সিউড়ির কড়িধ্যা কিংবা রামপুরহাট, এ দিন নানা জায়গায় রামনবমীর মিছিলে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল চোখে পড়ার মতো। রামপুরহাটের শোভাযাত্রায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ও সাংগঠনিক জেলা সভাপতির হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। বেজেছে দেদার ডিজে-ও। সারা জেলায় প্রায় দুশো শোভাযাত্রা বেরিয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু, অস্ত্র হাতে মিছিল হওয়া জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

প্রসঙ্গত, আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকাকালীন রামনবমীর মিছিলের নিরাপত্তায় বাড়তি নজর রেখেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, মিছিলে ২০০-র বেশি লোক রাখা যাবে না। অস্ত্র প্রদর্শনও নিষিদ্ধ। কিন্তু, এ দিন যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে বীরভূমে সেই নির্দেশ মান্যতা পেয়েছে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টিকে ‘প্রতীকী’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের দাবি, যা হয়েছে প্রকাশ্যে। ফলে, কমিশন বিষয়টি দেখুক। অন্য দিকে, বাম-কংগ্রেসের দাবি, রামনবমী ঘিরে ধর্মীয় মেরুকরণের শেষ সীমায় পৌঁছতে চাইছে তৃণমূল এবং বিজেপি।

রমনবমী বাইরে ধর্মীয় উৎসব হলেও ভিতরে রাজনীতির অঙ্ক রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে রামনবমীকে ঢাল করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছিল শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বিজেপি। সিউড়ি ঘেঁষা প্রাচীন জনপদ কড়িধ্যায় ১৯৮৯ সালে থেকে রামনবমীর মিছিল হয়ে আসছে। অলিখিত ভাবে শোভাযাত্রা আয়োজন করে গেরুয়া শিবির। এ বারেও সেই ধারা বজায় থেকেছে। প্রথা মেনে এ দিন কড়িধ্যার শালবনি গ্রামের রামমন্দির থেকে থেকে তেতুঁলতলা মোড় পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, শ্যামসুন্দর গড়াই, কালোসোনা মণ্ডল। ওই শোভাযাত্রায় ছোট থেকে বড় অনেকের হাতে অস্ত্র দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। শোভাযাত্রায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল, এই মর্মে একটি ভিডিয়ো ছড়িয়েছে। যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা। আগ্নেয়াস্ত্র আসল না নকল, জানা যায়নি, তা-ও

গত বছর কড়িধ্যায় রামনবমীর পৃথক শোভযাত্রা হয়েছিল জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে। এ বার তাঁর নেতৃত্বেই সিউড়ি শহরের চৈতালি মোড়ের রামসীতার মন্দির থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। নানা বাজনা, লোকশিল্পী, ঘোড়া নাচ, ছৌ, মুখোশ, রণ-পা সহযোগে সেই শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় ও শহরের অন্য নেতা০কর্মীরা। শতাব্দী বলেন, ‘‘রাম কারও একার নন। রামনবমী উদ্‌যাপনের অধিকারও সকলের। এই নিয়ে রাজনীতি করার মানে নেই।’’

সিউড়িতে যখন দু’টি পৃথক শোভাযাত্রা, তখন ভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছে দুবরাজপুরে। দুবরাজপুরের রামসীতা মন্দির থেকে রামনবমী উপলক্ষে একটি বিশাল ধর্মীয় শোভাযাত্রা হয়। সেখানে হাঁটতে দেখা গেল দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা, প্রাক্তন জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ সাহা, তৃণমূলের শহর সভাপতি স্বরূপ আচার্য ও অন্যান্য তৃণমূল কাউন্সিলরদের। দুই দলের নেতাদের দাবি, রামকে যাঁরা মানেন, তাঁরা সকলেই আসবেন। সেখানে রাজনীতির গণ্ডি টানা ঠিক নয়।

সৌহার্দ্য বিনিময়ের দৃশ্য দেখা গিয়েছে রামপুরহাট শহরে। এ দিন রমনবমীর শোভাযাত্রা রামপুরহাট স্টেশন সংলগ্ন ময়দান থেকে শুরু হয়ে পাঁচমাথা মোড়, মহাজনপট্টি, কামারপট্টি ছুঁয়ে ফেরত যায়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতারা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের জল, লাড্ডু, বোঁদে, মিহিদানা তুলে দিতে মহকুমাশাসকের কার্যালয় ঘেঁষে রাস্তার ধারে একটি শিবির করেছিল তৃণমূল। শহর তৃণমূল সভাপতি সৈয়দ সিরাজ ডিম্মি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শোভাযাত্রা উপলক্ষে একটি মঞ্চ গড়া হয়েছিল। সেখানে ছিলেন এলাকার বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিদিব ভট্টাচার্য, পুরপ্রধান সৌমনে ভকতেরা। রামপুরহাটের ওই শোভাযাত্রায় মহিলা-সহ ছোট বড় অনেকের হাতেই ধারালো অস্ত্র ছিল। পরে মিছিলে যোগ দেন বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধর এবং বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা। তাঁদের হাতেও অস্ত্র (তলোয়ার) ছিল অভিযোগ উঠে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি রামনবমীর মতো একটি ধর্মীয় উৎসবকে যে-ভাবে মেরুকরণের চেহারা দিচ্ছে, তা দেখে আমরা শঙ্কিত। এটা সমাজের জন্য ভাল বার্তা নয়। প্রতীকী হলে তো পিচবোর্ডের তৈরি রাংতা মোড়ানো হত। সেটা তো হয়নি।’’ বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এ দিন যা হয়েছে, সবই প্রকাশ্যে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’’

তবে, কমিশনের ‘অনুমতি’ না-নেওয়ায় এ দিন সকালে মুররাইয়ের ভাদীশ্বরে রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দিতে দেওয়া হয়নি দেবাশিস ধর ও ধ্রুব সাহাকে বলে অভিযোগ উঠছে। বিজেপির-র দাবি, স্থানীয় বিডিও এবং ওসি তাঁদের পথ আটকান। এই নিয়ে কিছুটা ঠেলাঠেলি হয় দু’পক্ষে। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। দেবাশিসের দাবি, ‘‘ব্যানার ফেস্টুন কিছুই ছিল না আমাদের সঙ্গে। আইনের কোন ধারায় আমাদের আটকানো হল, তার সদুত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন। আমরা হাই কোর্টে যাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Satabdi Roy TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy