বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। — ফাইল চিত্র।
পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। ওই ঘটনায় ‘অস্বস্তিতে’ পড়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। কিন্তু ভোটপর্ব মেটার আগে দলের ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না তারা।
যদিও বিজেপির একাংশের দাবি, ভোটপর্ব মিটে গেলে বিষ্ণপ্রসাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মনস্থির করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি বিধায়কের ‘বিদ্রোহ’ ভাল চোখে দেখছেন না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে আপাতত সাবধানি বিজেপি। কারণ, বিষ্ণুপ্রসাদ যে সব দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন, তা দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের বেশিরভাগ মানুষের ‘মনের কথা’। তাই ভোটপর্ব শেষ হওয়ার আগে বিষ্ণুপ্রসাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না বলেই বিজেপি সূত্রে খবর।
পৃথক রাজ্যের দাবির পাশাপাশি পাহাড়ের ভূমিপুত্রকে দার্জিলিঙের সাংসদ করার কথা জানিয়ে ‘বিদ্রোহী’ হয়েছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। পাহাড়ের মানুষের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি দীর্ঘ দিনের। নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়ে নিজের সেই দাবির কথাই তুলে ধরে প্রচার শুরু করেছেন পদ্মের বিধায়ক। সঙ্গে বলছেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে পৃথক গোর্খাল্যান্ড দেওয়ার আশ্বাস দিয়েই ভোটে দাঁড় করানো হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর কেটে গেলেও সেই দাবি নিয়ে বিজেপি কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। কিন্তু আলাদা গোর্খাল্যান্ডের আশ্বাস দিয়ে ২০০৯ সাল থেকে লাগাতার তিন বার দার্জিলিং আসন গোর্খাদের সমর্থনে জিতে এসেছে বিজেপি। প্রতি বারই ‘বহিরাগত’ প্রার্থীদের সাংসদ হিসাবে পাচ্ছেন পাহাড়বাসী। কখনও যশবন্ত সিংহ, কখনও সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, কখনও রাজু বিস্তাকে টিকিট দিয়ে দার্জিলিং থেকে সংসদ সদস্য করেছে বিজেপি। এমনই সব অভিযোগ তুলে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোট চাইছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। এই পরিস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে চাইছে না বিজেপি। ‘সেফটি পিন’ প্রতীক নিয়ে ভোটে লড়াই করা বিষ্ণুপ্রসাদকে নিয়ে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে বাংলার প্রধান বিরোধীদল।
দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, ভোটের আগে বিষ্ণুপ্রসাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করলে পাহাড়ের মানুষের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দার্জিলিঙের ভোটারদের সহানুভূতি পেতে পারেন ‘বিদ্রোহী’ বিষ্ণুপ্রসাদ। তাতে বিজেপি প্রার্থী রাজুর লড়াই কঠিন হতে পারে। দার্জিলিং লোকসভায় ভোট দ্বিতীয় দফায়। ২৬ এপ্রিল রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট লোকসভার সঙ্গে ভোট হবে দার্জিলিঙে। মনে করা হচ্ছে, তার পরেই বিষ্ণুপ্রসাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে বিজেপি। জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি শৃঙ্খলাপরায়ণ দল হিসেবেই পরিচিত। তাই লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলেরই বিধায়কের নির্দল প্রার্থী হওয়াকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব লঘু ভাবে দেখবেন না বলেই মনে করছেন রাজ্যের নেতারা।
বিষ্ণুপ্রসাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাঁকে নিরস্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কালচিনির বিজেপি বিধায়ক তথা দার্জিলিং লোকসভায় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশাল লামাকে। তাঁকেও দল আপাতত বিষ্ণুপ্রসাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। পাহাড়ের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার লোকসভাতেও গোর্খা জনজাতির ভোট রয়েছে। তাই প্রথম দু’দফায় সেখানকার ভোট মিটে গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে চায় বিজেপি। তবে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের অধীন এক বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘‘বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা যে সব দাবির কথা বলেছেন, তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু নিজের দাবিতে অনড় থেকে যে ভাবে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। গত তিন বছরে তিনি একাধিক বার বিধানসভায় পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ধর্না দিয়েছেন। তাতে অস্বস্তিতে পড়লেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কখনও বিষ্ণুপ্রসাদকে কিছু বলেননি। এই বিষয়টি তাঁর মাথায় রাখা উচিত ছিল।’’ ওই বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘রাজনীতিতে অনড় অবস্থান চলে না। বিষ্ণুপ্রসাদ সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী রাজুকে ‘বহিরাগত’ বলছেন। তিনি নিজেও জানেন, রাজু দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার। তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলার কোনও অর্থ হয় না। এ ভাবে দলের কাছেই খারাপ হচ্ছেন বিষ্ণপ্রসাদ। সতীর্থের প্রতি আমাদের সহানুভূতি থাকলেও আমরা তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy