দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভুয়ো অডিয়ো ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার বিজেপি নেতা। — নিজস্ব চিত্র।
নিজের দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভুয়ো অডিয়ো তৈরি করে তা ভাইরাল করার অভিযোগে গ্রেফতার বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন মেজর ঋত্বিক পাল। পরিবার সূত্রে খবর, সোমবার রাত ১টা নাগাদ সাইবার থানার পুলিশ হিন্দমোটরের বাড়ি থেকে ঋত্বিককে গ্রেফতার করে। তাঁর দু’টি ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
ভোটের আবহে কিছু দিন আগে দু’টি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়। একটিতে শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী কবীরশঙ্কর বসুর কথোপকথন ছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। আর একটি অডিয়োয় কবীর টাকা দিয়ে বিজেপির টিকিট কিনেছেন, এমন দাবি ছিল। কোনও অডিয়ো ক্লিপেরই সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ক্লিপ দু’টি ভাইরাল হতেই কল্যাণ এবং কবীর, দু’জনে চন্দননগর পুলিশে অভিযোগ জানান। চন্দননগর পুলিশের সাইবার থানা ‘আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক’ করে ঋত্বিকের খোঁজ পায়। তার পর সোমবার রাতে বিজেপি নেতা ঋত্বিককে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ঋত্বিকের বাবা হিমাদ্রিশেখর পালের দাবি, এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে, কেন তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করা হল। হিমাদ্রি বলেন, ‘‘ওদের কথায় বুঝতে পারলাম একটি ফেক অডিয়ো ক্লিপের প্রেক্ষিতে আমার ছেলেকে গ্রেফতার করেছে। তার দু’টি ল্যাপটপই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
এ ব্যাপারে শ্রীরামপুরের বিজেপি প্রার্থী জানিয়েছেন, দলের কর্মী গ্রেফতার হবেন, এটা তাঁরা চান না। এই অডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর কবীর অভিযোগ করেছিলেন যে, এই ভুয়ো অডিয়ো কথোপকথনের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র রয়েছে সিপিএমের। সরাসরি শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। ঘটনাচক্রে, সেই ঘটনায় গ্রেফতার হলেন বিজেপিরই নেতা। সব শুনে দীপ্সিতা বলছেন, ‘‘আগেই বলেছিলাম, আমরা এর মধ্যে জড়িত নই। আরও বলেছিলাম, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরোবে। এখন তো দেখছি, কেউটেই বেরিয়েছে! যে বিজেপি নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে এ সব করে বেড়াচ্ছে, তারা কী করে বিকশিত শ্রীরামপুর উপহার দেবে? এই ঘটনা আবার ভোটারদের সামনে প্রমাণ করে দিল, বিজেপি আসলে কী।’’ শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি মোহন আদক বলেন, ‘‘ঋত্বিক পালকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা পুলিশের অতি সক্রিয়তা কি না বোঝা যাচ্ছে না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাঁকে ৪১ নম্বরে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। দরজায় ধাক্কা দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কবীরশঙ্কর বসুর অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। যদি কেউ দোষী হন, আইন তার মতো করে ব্যবস্থা নেবে। পুলিশের কাছে কী প্রমাণ আছে, তা না দেখে মন্তব্য করব না।’’
চন্দননগর পুলিশের কমিশনার অমিত পি জাভালগি জানিয়েছেন, ফেক অডিয়ো ভাইরাল সংক্রান্ত দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। এবং সেই সূত্রেই সোমবার রাতে গ্রেফতার হন ঋত্বিক পাল।
তবে এ বারই প্রথম গ্রেফতার হলেন না বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সেনাকর্মী ঋত্বিক। এর আগে, গত ৭ জানুয়ারি ডানকুনিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বাইক মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি করে অভিযুক্তদের ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কয়েক দিন জেলে ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন মেজর। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তখন থেকে জল্পনা শুরু হয়, তা হলে কি এ বার শ্রীরামপুরে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন ঋত্বিক? যদিও সেই জল্পনায় জল ঢেলে বিজেপি প্রার্থী করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন জামাই কবীরকে। যে কবীর ২০২১ সালে শ্রীরামপুর বিধানসভায় বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু হেরে যান। সূত্রের খবর, কবীরের প্রার্থিপদ মেনে নিতে না পেরেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন ঋত্বিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy