—প্রতীকী চিত্র।
ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য শারীরিক অসুস্থতাকে ‘ঢাল’ হিসাবে ব্যবহার করে রেহাই পাবেন না কোনও সরকারি কর্মী। অসুস্থ হলে তিনি ভোটের কাজের পাশাপাশি ভোট না-মেটা পর্যন্ত নিজের সরকারি কাজও করতে পারবেন না জানিয়ে বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশিকা ঘিরে অসন্তোষ রয়েছে সরকারি কর্মীদের একাংশের মনে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিগত নানা ভোটের মতো এ বার লোকসভা ভোটের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি পেতে নানা কারণ দেখিয়ে প্রশাসনের কাছে একগুচ্ছ আবেদন এসেছে। তেমন আবেদন খতিয়ে দেখছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। তবে, যাঁরা অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি চেয়েছেন, প্রশাসনের সাম্প্রতিক নির্দেশ মূলত তাঁদের ঘিরেই। প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, এত দিন সাধারণ ভাবে যা হয়ে এসেছে, তা হল, শারীরিক অসুস্থতাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে কোনও কর্মী ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইলে তাঁকে মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে উপস্থিত হতে হয়। মেডিক্যাল বোর্ড ‘আনফিট’ বললে তবেই তিনি অব্যাহতি পান।
সূত্রের খবর, এ বার প্রশাসন এই চালু নিয়মেই বদল এলেছে। ভোটকর্মীদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মেডিক্যাল বোর্ড যদি কোনও সরকারি কর্মীকে ‘অসুস্থ’ বা ‘আনফিট’ বলে ঘোষণা করে, তাহলে তিনি ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত নিয়মিত সরকারি কাজও চালিয়ে যেতে পারবেন না। ভোট পেরোলে ‘ফিট’ শংসাপত্র নিয়েই তাঁকে ফের নিজের কাজে যোগ দিতে হবে। এবং বিষয়টি লিপিবদ্ধ করতে হবে।
নির্বাচনের জন্য চিহ্নিত ভোটকর্মীদের প্রতি প্রশাসনের এই বার্তায় চাপা অসন্তোষ ছড়িয়েছে কর্মীদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, হতেই পারে কারও স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা রয়েছে বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় কেউ ভুগছেন। কিংবা অন্য কোনও অসংক্রামক রোগে ভুগছেন। কিন্তু, নির্দিষ্ট নিয়েমে চেনা পরিবেশে সরকারি কাজ তাঁরা চালিয়ে যেতে পারলেও এই প্রবল গরমে তিন দিন ধরে ভোটের ধকল তিনি নিতে পারবেন না। ওই কর্মীদের প্রশ্ন, ‘‘মেডিক্যাল বোর্ড বললে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মী রেহাই পেতেন। কিন্তু, তার জন্য টানা ছুটি নিয়ে বসে থাকতে হবে কেন? কেনই বা সার্ভিস বুকে সেটা লিপিবদ্ধ করতে হবে?’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (পোলিং পার্সোনেল) বাবুলাল মাহাতো জানাচ্ছেন, ভোটের কাজে অব্যাহতি মিলবে না, সে কথা কিন্তু বলা হচ্ছে না। তবে, উপযুক্ত কারণের বাইরে ভোটের ডিউটি এড়ানোর রাস্তা খোলা নেই। তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটের কাজে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করা যাবে না। বহু কষ্টে টেনেটুনে স্থায়ী কর্মীদের ভোটের ডিউটির জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। রিজার্ভেও কর্মীসংখ্যা সীমিত। বেশি সংখ্যক কর্মীকে অব্যাহতি দিতে হলে ভোট করানোই শক্ত!’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চতুর্থ দফায়, ১৩ মে জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হবে। সেই জন্য ‘রিজার্ভ’ ধরে ১৪ হাজার ৮০৯ জন ভোর্টকর্মী লাগবে। ১২১৭ জন মহিলা ভোটকর্মীও প্রয়োজন। ভোটকর্মীদের যে সংখ্যা ঠিক করা হয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত কর্মীর সংখ্যা বেশি নয়।
কাজেই বেশি কর্মীকে অব্যাহতি দেওয়া সম্ভব নয় বলেই প্রশাসনের দাবি। বিশেষ করে প্রিসাইডিং ও থার্ড পোলিং অফিসারে অব্যাহতি নিলে ভোট পরিচালনা করাই মুশকিল হবে।
ইতিমধ্যেই ভোটকর্মীদের প্রথম পর্বের প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষণ হবে। কিন্তু, প্রশাসনের চিঠি পাওয়ার পর থেকে নানা কারণ দেখিয়ে অনেকেই ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন সরকারি কর্মীরা বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। তাঁদের মধ্যে শুধু অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে আবেদন এসেছে প্রায় ২০০। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘যাঁরা সেই আবেদন করেছেন, তাঁরা যে স্রেফ ভোটের ডিউটি এড়ানোর জন্য করেননি, তা নিশ্চিত করতেই ওই নির্দেশিকা দিয়েছে প্রশাসন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy