দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন। নিজস্ব চিত্র।
শতবর্ষে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম চালু করার স্বপ্ন বুনছে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন স্কুল দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন। ২০২৫-এর ২ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার এই প্রাচীন স্কুল পদার্পণ করছে ১০০তম বর্ষে। রয়েছে বছরব্যাপী নানা পরিকল্পনা। ২৪ নভেম্বর স্কুলের শততম বর্ষের উদযাপনের তালিকা প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে যে হারে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দিকে ঝোঁক বাড়ছে, তাতে বাংলা মাধ্যমে পড়ার প্রবণতা কমছে। তাই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম শুরু করার লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি।’’
১৯২৬-র ২ জানুয়ারি। স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা এক অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে গোটা দেশ। এরই মাঝে শ্যামবাজারে এক গাড়ি বারান্দায় তৈরি হল দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশন। ১০০ বছর আগে স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন কুলদাপ্রসাদ লাহিড়ী। বর্তমানে সেই ভারই সামলাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা।
বর্তমান প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘এই স্কুলকে ঘিরে রয়েছে একাধিক ইতিহাস। কখনও স্বাধীনতা আন্দোলনের ভার, কখনও বা নকশালের কবজা— সবেরই সাক্ষী ছিল এই স্কুল। প্রায় চার-পাঁচটি ঠিকানা বদলে শ্যামবাজারের পার্ক ম্যানসন হয়ে ওঠে তার স্থায়ী ঠিকানা।’’ তিনি জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পার্ক ম্যানসনের বাড়ি চলে যায় সরকারের দখলে। তখন কিছু দিনের জন্য ফের এই স্কুল অন্য ঠিকানায় ঠাঁই নিলেও পরে ফিরে আসে পার্ক ম্যানসনের ঠিকানায়। তবে জায়গা তো ভাড়ার, উঠে যেতে হতেই পারে আবারও যে কোনও সময়ে। সেই সময়ে দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং আরও কিছু শিক্ষকরা নিজে থেকে টাকা দিয়ে কিস্তির ভিত্তিতে স্কুলের জায়গা কিনে নেন। অবশেষে সমস্ত টাকা মিটিয়ে স্কুল তার নিজস্ব ঠিকানা পায়।
এক সময়ে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম দশের তালিকায় নাম থাকত দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়াদের। স্কুলের প্রাক্তনী তালিকায় রয়েছে বহু বিশিষ্ট নাম। বাংলার ক্রিকেটার অরুপ ভট্টাচার্য, শৈবাল রায়চৌধুরী, সাংস্কৃতিক জগতে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় থেকে বর্তমান দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। স্কুলের কথা উঠতেই মন্ত্রী বলেন, ‘‘স্কুলকে ঘিরে রয়েছে একাধিক স্মৃতি। খেলাধুলা আমি ছোট থেকেই পছন্দ করি খুব। স্কুলের পাশের মাঠে খেলা, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সব স্মৃতিই বড় মধুর।’’ সুজিত আরও বলেন, ‘‘সেই সময়ে স্কুলের পাশে ছোট্ট এক পুকুর ছিল। এক দিন বাড়িতে কিছু না বলেই স্কুলের পরে বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতার কাটতে চলে গিয়েছিলাম। পরে বাড়ি ফিরে ধরা পড়তেই মায়ের কাছে জোটে বকুনি।’’
স্কুলের উন্নতির স্বার্থে গত ৩৪ বছর পাশে রয়েছে দ্য পার্ক ইনস্টিটউশনের অ্যালামনি অ্যাসোসিয়েশন। বরাবরই স্কুলের জন্য কাজ করে প্রায় এক হাজার সদস্যের এই সংগঠন। ২৪ নভেম্বর সাংবাদিক বৈঠকে ১ লক্ষাধিক টাকার চেক স্কুলের হাতে তুলে দেয় প্রাক্তনীদের এই সংগঠন। অন্যতম সদস্য অরুণকুমার রায় বলেন, ‘‘সামনেই আমাদের স্কুল ১০০তম বর্ষে পা দিচ্ছে। বছর জুড়ে রয়েছে একাধিক অনুষ্ঠান। কী ভাবে স্কুলের আরও উন্নতি করা যায়, তার লক্ষ্যেই আমাদের এই পথচলা।’’
১৯২৬-এ শুরুর দিনগুলোয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ থাকলেও পরবর্তীতে শিক্ষা সংসদের হাতে যায় দ্য পার্ক ইনস্টিটউশন। প্রথমে ছেলে-মেয়েদের পঠনপাঠন চলত একসঙ্গেই। পরবর্তীতে মেয়েদের স্কুলকে আলাদা করে দেওয়া হয়। উত্তর কলকাতায় নামজাদা স্কুলের তালিকায় অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান। তার একটাই কারণ, স্কুলের একদা ভাল ফলাফল। তবে অতিমারি পরবর্তী সময়ে বেড়ে গিয়েছে স্কুলছুটের সংখ্যা। পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও ফর্ম ফিলাপ করিয়েছেন। ইংরেজি মাধ্যম শুরু করলে যাতে ছবিটা কিছুটা পাল্টায় তারই আশায় দ্য পার্ক ইনস্টিটউশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy