২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে থাকা প্রায় ২৬ হাজার (আদতে ২৫,৭৫৩) জনের চাকরি বৃহস্পতিবার বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। রায় কার্যকর হলে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষক সঙ্কট হতে চলেছে, এমনই আশঙ্কা। এর ফলে মাধ্যমিক স্তরের পাশাপাশি ব্যাহত হতে চলেছে রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিকের পঠনপাঠনও।
রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন স্কুলে ইতিমধ্যেই হাহাকার শুরু হয়েছে। দমদমের শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক অসীমকুমার নন্দ জানিয়েছেন, মোট তিনজনের চাকরি বাতিল হয়েছে যাঁরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের বিষয়গুলি পড়াতেন। তিনি আরও বলেন, “আমরা চরম অসুবিধায় পড়েছি। আর্থিক সঙ্কট হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের খরচেই পঠনপাঠন চালু রাখতে দ্রুত তিনজন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।”
অন্যদিকে সোমবার থেকে উচ্চমাধ্যমিকে তৃতীয় সিমেস্টারের ক্লাস শুরু হতে চলেছে। শিক্ষকের অভাবে সেখানেও গভীর প্রভাব পড়তে চলেছে বলে অনুমান। বর্তমানে বৃত্তিমূলক বিষয় বাদে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৬টি বিষয় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয়। তার মধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অনুমোদনে পড়ানো হয় শুধুমাত্র ৩৪টি বিষয়। অন্যান্য বিষয়ের জন্য মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই পাঠদান করে থাকেন। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, এতগুলি বিষয়ের পঠনপাঠন আগামী দিনে কী ভাবে হবে, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হবে শিক্ষা সংসদ।
নারায়ণদাস বাঙুর স্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকই যদি না থাকে, একাদশে সেই বিষয়টি নিয়ে পড়ুয়াও ভর্তি নেওয়া হবে না। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে বহু বিষয়ে আমাদের শিক্ষক নেই। এই পরিস্থিতিতে নতুন সিমেস্টারের ক্লাস শুরু করব কী ভাবে?” একই ভাবে দেগঙ্গার চৌরাসিয়া হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক শাহারিয়ার ইসলাম জানিয়েছেন, বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ জন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। পাশ্ববর্তী স্কুল থেকেও শিক্ষক-শিক্ষিকা পাওয়া অসম্ভব। কী ভাবে ক্লাস শুরু হবে, তা জানা নেই।
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী চাকরি বাতিল হলেও যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, পার্ক ইনস্টিটিউশনের মতো বেশ কিছু স্কুলে শুক্রবার শিক্ষক শিক্ষিকারা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “আমরা যে হেতু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও নির্দেশ পাইনি। তাই তাঁকে আমরা ক্লাস নিতে বারণও করিনি। তা ছাড়াও স্কুলে সামিটিভ পরীক্ষা চলছে, তাই গার্ডও দিয়েছেন তাঁরা।”
নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে সুপারিশপত্র দেয় এসএসসি। তারপর সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগপত্র দেয়। সেই চিঠি ডিআইদের মাধ্যমে পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে। কিন্তু এখনও সরকারের তরফে চাকরি বাতিলের ম্যাচিং অর্ডার বের করা হয়নি। যার ফলে এসএসসির তরফেও শিক্ষকদের অনুমোদনপত্র বাতিল হয়নি। পর্ষদের তরফেও প্রার্থীদের নিয়োগপত্র বাতিল করা হয়নি। তাই ২০১৬ সালের প্যানেলে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে যাবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। এর আগে ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টের একটি রায়ের ফলে এই পদ্ধতি মেনেই ৬১৮ জনের চাকরি বাতিল হয়েছিল।
শুক্রবার বিকাশ ভবনে এই সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “স্কুলে যাচ্ছেন না, আমার মনে হয় এই তথ্য ঠিক নয়। বিশেষত, গতকাল মুখ্যমন্ত্রী যে বার্তা দিয়েছেন, সেই বার্তায় পরিষ্কার করে তাঁদের কী করণীয় আর কী করণীয় নয় সেটা বলে দিয়েছেন। আমাদের কাছে এ রকম কোন তথ্য নেই যে তাঁরা স্কুলে যাচ্ছেন না।” তা হলে তাঁরা কি স্কুলে যেতে পারেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি তো এ রকম কথা বলতে পারি না। মুখ্যমন্ত্রী কাল যেটা বলেছেন, এবং বিচারপতি যেটা বলেছেন, তার পরও টেকনিক্যাল বা আইনি ব্যাখার প্রয়োজন রয়েছে। সেই বিষয়ে এসএসসি জানিয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টে একটা আইনি ব্যাখা বা লিগ্যাল ক্ল্যারিফিকেশন চাইবে।” এই পরিস্থিতিতে বাতিল হওয়া প্যানেলভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্লাস করাবেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।