Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Women Empowerment

গর্ব বনাম দুশ্চিন্তা

পশ্চিমবঙ্গের ছবিটিকে এই পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে স্পষ্ট হবে যে, এ রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র শিল্পক্ষেত্রে পুঁজির পরিমাণ সম্ভবত সর্বভারতীয় গড়ের তুলনাতেও অনেকখানি কম।

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৩৪
Share: Save:

রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস বা এমএসএমই) আধিক্য বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বেশ একটা গর্ব আছে। অন্তত এই বিষয়টিতে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অগ্রগণ্য, তা নিয়ে প্রচার চলছে। মহিলাচালিত এমএসএমই-র সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ দেশে প্রথম স্থানাধিকারী, পুরুষচালিত সংস্থার হিসাবে দ্বিতীয়। কিন্তু, ব্যবসার পুঁজির হিসাব দেখলেই সেই গর্ব আর থাকে না। দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশে মহিলা পরিচালিত অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে মোট যত পুঁজি আছে, তার মাত্র ৪-৫ শতাংশ আছে পশ্চিমবঙ্গের সংস্থাগুলিতে। এই গোত্রের উদ্যোগে সরকারি সহায়তা পাওয়ার জন্য উদ্যম নামক একটি পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের সংস্থাগুলি পিছিয়ে রয়েছে সেই নিরিখেও। কাজেই, পশ্চিমবঙ্গে এমএসএমই-র সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করার আদৌ কোনও কারণ আছে, না কি প্রকৃত প্রস্তাবে এটি দুশ্চিন্তার বিষয়, সে কথাটি ভেবে দেখা জরুরি।

ঘটনা হল, এমএসএমই নামক ক্ষেত্রটি বিস্তারে বিপুল— মোট মূলধনি পুঁজির পরিমাণ সর্বাধিক এক কোটি টাকা হলে তা মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ়; দশ কোটি টাকা হলে স্মল; এবং পঞ্চাশ কোটি টাকা অবধি হলে তা মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়। এই তিনটি ক্ষেত্রে নথিভুক্ত হয়ে গেলে সর্বোচ্চ বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ যথাক্রমে ১০ কোটি, ৫০ কোটি ও ২৫০ কোটি টাকা। অতএব, এমএসএমই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত হলেও কোনও সংস্থা এই বিপুল পরিসরের কোন প্রান্তে রয়েছে, সেটি প্রথম প্রশ্ন। ভারতে এমএসএমই-র সংখ্যা ছ’কোটি ত্রিশ লক্ষ— তার ৯৯ শতাংশের বেশি অতি ক্ষুদ্র; দেশে নথিভুক্ত ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা ৩.৩ লক্ষ, মাঝারি শিল্প মাত্র পাঁচ হাজার। এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সিংহভাগও ঘটে অতি ক্ষুদ্র শিল্পেই, কিন্তু সেখানে প্রতিটি সংস্থায় গড় কর্মীর সংখ্যা দু’জনেরও কম। অর্থাৎ, এই শিল্পগুলির একটি বড় অংশে যিনি মালিক, তিনিই একমাত্র কর্মী; সামান্য কিছু ক্ষেত্রে এক বা একাধিক কর্মী নিযুক্ত হন। অর্থাৎ, কাগজে-কলমে যা ব্যবসায়িক উদ্যোগ, প্রকৃত প্রস্তাবে তা কোনও এক জনের কর্মসংস্থানের মরিয়া প্রচেষ্টা মাত্র। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কোথাও চাকরি করলে এক জন যে পরিমাণ উপার্জন করতেন, এই গোত্রের ব্যবসায় তাঁর উপার্জন সে তুলনায় কম। তবুও তাঁরা এমন অতি ক্ষুদ্র শিল্প চালান, কারণ ঠিকঠাক চাকরি পাওয়া যায় না। কাজেই, অতি ক্ষুদ্র শিল্পের বিস্তারকে এক অর্থে যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাবের প্রতিফলন হিসাবেও দেখা চলে, গোটা দেশের ক্ষেত্রেই।

পশ্চিমবঙ্গের ছবিটিকে এই পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে স্পষ্ট হবে যে, এ রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র শিল্পক্ষেত্রে পুঁজির পরিমাণ সম্ভবত সর্বভারতীয় গড়ের তুলনাতেও অনেকখানি কম। রাজ্যে কর্মসংস্থানের অনুজ্জ্বল ছবিটির সঙ্গে তাকে মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, অনেকেই বেঁচে থাকার মরিয়া চেষ্টায় খুব ছোট মাপের কোনও ব্যবসা চালু করেছেন মাত্র। উদ্যম পোর্টালে নথিভুক্তিকরণের হার কম হওয়ার একটি কারণ সম্ভবত এই যে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতাও নেই, রাজ্য স্তরে যথেষ্ট সরকারি উদ্যোগও নেই। পরিস্থিতিটি গর্ব করার মতো নয়। এ কথা সংশয়াতীত যে, বৃহৎ শিল্পকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান এ রাজ্যে অদূর ভবিষ্যতে ঘটবে না। ফলে, এমএসএমই এই রাজ্যের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকবে। অতএব, ক্ষেত্রটিকে নিয়ে অহেতুক গর্ব করার বদলে তার দিকে মন দেওয়া প্রয়োজন। সুলভ ঋণ, পরিকাঠামোগত সুবিধা, প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পোর্টালে নাম তোলার মতো কাজে যতখানি সাহায্য প্রয়োজন, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই তার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং, কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে যে সুবিধাগুলি পাওয়া সম্ভব, রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পক্ষেত্র যাতে তা পায়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy