Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Child Labour

শিশুর দাবি

কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে, কিন্তু এই প্রবণতা শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২২ ০৫:৪১
Share: Save:

কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের এক জনপ্রিয় রেস্তরাঁকে ‘শিশুশ্রম-মুক্ত’ হওয়ার সনদ দিল শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। এমন সনদ আবাসন ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকেও দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কমিশন। এই উদ্যোগ স্বাগত। শিশুশ্রম দীর্ঘ দিনের কুপ্রথা। আইন তার মূলে কুঠারাঘাত করতে চায়, কিন্তু সমাজের নীরব সমর্থন তাকে বাঁচার রসদ জুগিয়ে চলেছে। কেবল শিশু নিয়োগকারীকে শাস্তি দেওয়ার নীতিই যথেষ্ট নয়। প্রথমত, নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা দুর্বল। দ্বিতীয়ত, অপরাধ প্রমাণ এবং শাস্তি প্রদানের পদ্ধতি দীর্ঘ, কঠিন, এবং অনিশ্চিত। তৃতীয়ত, শাস্তি দানের খবর কখনও-সখনও প্রকাশ পায় ঠিকই, কিন্তু সামাজিক ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে কতটুকু? শিশুশ্রমিক কমাতে গত দু’দশকে অনেক উদ্যোগ করেছে ভারত। সর্বশিক্ষা অভিযান এবং শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হওয়ায় অনেক বেশি শিশু স্কুলশিক্ষার আওতায় এসেছে। সেই সঙ্গে শিশুশ্রম আইনও আরও কঠোর হয়েছে ২০১৮ সালে। তার ফলে কার্পেট বা বাজি কারখানার মতো যে সব শিল্পে অতীতে বহু শিশু নিযুক্ত হত, সেখানে শিশুশ্রম কমেছে। কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের শ্রম দফতরের আধিকারিকরা স্বীকার করেছেন যে, সংগঠিত ক্ষেত্রে শিশুশ্রম কমলেও হোটেল, ধাবা বা ছোট কারখানায় শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। শিশুশ্রমিক পুনর্বাসনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ স্কুল ব্যবস্থাটিও কার্যত নিষ্ক্রিয়। ফলে শিশুশ্রমিকদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার কাজ কঠিনতর হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম নয়, সমগ্র বিশ্বেই শিশুশ্রমের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যদিও কোভিড অতিমারি পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে, কিন্তু এই প্রবণতা শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব অনুসারে, ২০১৬ সাল থেকে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা পঁয়ষট্টি লক্ষ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় আট কোটি। এদের মধ্যে ষোলো শতাংশই ভারতীয়। প্রায় দু’দশক শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কমার পর এখন আবার বাড়ছে, এ তথ্য উদ্বেগজনক। সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূল করার সঙ্কল্প করেছিল। সে লক্ষ্যপূরণ করা এখনও কঠিন। গত এক দশকে ভারতের আর্থ-সামাজিক অসাম্য বেড়েছে। কর্মহীনতা, রোজগারের অনিশ্চয়তা, সামাজিক অস্থিরতা, গার্হস্থ হিংসা বহু পরিবারকে বিপন্ন করেছে। ফলে শিশুরা কখনও রোজগারের তাড়নায়, কখনও বা পারিবারিক জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ থেকে বিচ্যুত হয়ে শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে।

একটি শিশুর দাবি কেবল তার পরিবারের কাছে নয়; রাষ্ট্র ও সমাজও শিশু-অধিকার সুরক্ষায় দায়বদ্ধ। এই সময়ে আবাসন, দোকান-বাজার, ধাবা-রিসর্ট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিশুশ্রম মুক্তির সনদ প্রদর্শন করলে তা এক সদর্থক দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে শিল্পগুলি তাদের পণ্যেও শিশুশ্রম মুক্তির স্বীকৃতি প্রদর্শন করতে পারে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ক্রেতা আন্দোলন, যা শিশুশ্রম-মুক্ত পণ্য ও পরিষেবাগুলিকে স্বীকৃতি দিতে সেগুলিকে অগ্রাধিকার দেবে। এমনকি, শিশুশ্রম-মুক্ত হওয়ার শর্ত আরোপ করবে সব ব্র্যান্ড, শপিং মল, রেস্তরাঁ, রিসর্ট প্রভৃতির উপর। পশ্চিমের ক্রেতা আন্দোলন দেখিয়েছে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অনৈতিক পথ বর্জনে বাধ্য করা যায় বৃহৎ সংস্থাগুলিকেও। নাগরিকও দেশকে পথ দেখাতে পারেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy