Advertisement
E-Paper

সর্বজনীন পণ্য

যে গ্রাহকরা উজ্জ্বলা যোজনার অন্তর্গত, অর্থাৎ যাঁরা সিলিন্ডারপ্রতি ২০০ টাকা ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা কতখানি উপকৃত হচ্ছেন এই ভর্তুকিতে?

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২২ ০৫:১৫
Share
Save

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কোথায় কোথায় আছে, জানতে হলে আগে দেখতে হবে যে, তা কোথায় কোথায় নেই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানালেন, এই ভর্তুকির খাতে কোনও অর্থ বরাদ্দই করা হয়নি। তা হলে কি ভর্তুকি নেই? বছর দুয়েক আগেও গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে কালেভদ্রে মেসেজ ঢুকত যে, এলপিজির ভর্তুকি বাবদ উনিশ টাকা বারো আনা বা সাড়ে পনেরো টাকার মতো অঙ্ক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। এখন আর সেটুকুরও দেখা মেলে না। কিন্তু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, ভর্তুকি আছে। গোটা দেশের ন’কোটি উজ্জ্বলা গ্রাহকদের বছরে সর্বাধিক বারোটি সিলিন্ডারের প্রতিটিতে ২০০ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দিয়েছিলেন, সরকার তা থেকে নড়েনি। তার জন্য ৬১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও আছে। তা হলে দাঁড়াল যে, উজ্জ্বলার বাইরে যে জনগোষ্ঠী, তার জন্য ভর্তুকি নেই। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, দেশের যত দরিদ্র মানুষ এলপিজি ব্যবহার করেন, সবাই উজ্জ্বলা যোজনার অন্তর্গত। কিন্তু, তার পরেও কি এই ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি যথাযথ? মধ্যবিত্ত বা তার চেয়ে বিত্তশালী জনগোষ্ঠীর জন্য এলপিজি-তে ভর্তুকি দেওয়া অন্যায়, তা নিয়ে তর্ক চলতে পারে না। ফলে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতিটিকে অন্যায় ভর্তুকি বন্ধ করার পদক্ষেপ হিসাবে দেখতে চাইতে পারেন কেউ। কিন্তু, সেই সংস্কার যতই বাঞ্ছনীয় হোক, সে কাজ চুপিসারে করার নয়। সরকার যদি অবস্থাপন্নদের জন্য এলপিজি-তে ভর্তুকি বন্ধ করতে চায়, তবে কাজটি করতে হবে যথাযথ পথে— সংসদে আলোচনা করে, জনপরিসরে ঘোষণা করে তবেই। অনুমান করা চলে, সেই স্বচ্ছতায় সরকারের রুচি নেই।

যে গ্রাহকরা উজ্জ্বলা যোজনার অন্তর্গত, অর্থাৎ যাঁরা সিলিন্ডারপ্রতি ২০০ টাকা ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা কতখানি উপকৃত হচ্ছেন এই ভর্তুকিতে? কলকাতায় এখন এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ১১০০ টাকা— অর্থাৎ ২০০ টাকা ভর্তুকি দিলেও গ্রাহকের পকেট থেকে সিলিন্ডারপ্রতি খরচ হয় ৯০০ টাকার কাছাকাছি। বহু পরিবারের কাছেই এই অঙ্কটি মাসিক আয়ের দশ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে এই অনুপাতটি আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। ফলে, ভর্তুকিপ্রাপ্ত সিলিন্ডারও বহু পরিবারের সাধ্যের অতীত। পরিসংখ্যানেও এই ছবিটিই ফুটে উঠছে বার বার— উজ্জ্বলা যোজনায় পাওয়া বিনামূল্যের প্রথম সিলিন্ডারটির পর আর গ্যাস নেওয়ার সাধ্য হয়নি বলে বহু পরিবার ফিরে গিয়েছেন পুরনো জ্বালানিতে। বিজ্ঞাপনের চওড়া হোর্ডিংয়ে জ্বলজ্বল করেছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ; দরিদ্র মহিলারা ফের ঢাকা পড়েছেন কাঠকুটো জ্বালানির বিষাক্ত ধোঁয়ার অন্ধকারে।

এলপিজি সিলিন্ডার সাধ্যের বাইরে থাকলে তার সম্পূর্ণ দায় এসে পড়ে মহিলাদের উপর। জ্বালানি জোগাড় করার দায়ও তাঁদের, রান্নার সময় ক্ষতিকর ধোঁয়া সহ্যও করতে হয় তাঁদেরই। এই পদ্ধতিতে জ্বালানির জোগাড় ও রান্না দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ কাজ, ফলে অন্য উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করার মতো সময়ের ঘাটতিও হয় মেয়েদেরই। তাতে তাঁদের ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াটি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই ক্ষতি দেশের অর্থব্যবস্থারও। কাঠকুটোর জ্বালানিতে যে বিপুল দূষণ ঘটে, অর্থব্যবস্থায় তারও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, এলপিজির ব্যবহারে যতখানি ইতিবাচক অতিক্রিয়া, এবং তার বিকল্প জ্বালানিতে যে নেতিবাচক অতিক্রিয়া, দুই দিকের কথা মাথায় রাখলে এই জ্বালানির উপভোগের প্রশ্নটি কি শুধু বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায়? রান্নার গ্যাসকে অন্তত ‘কোয়াসাই-পাবলিক গুড’ হিসাবে বিবেচনা করা জরুরি কি না, সে কথাটি ভাবার সময় এসেছে।

LPG cylinder subsidy Pradhan Mantri Ujjwala Yojana Ujjwala Yojna

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}