Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Education

শিক্ষার পথ

রাজ্য সরকারের সুলভ শিক্ষাঋণ প্রকল্পকে স্বাগত জানাইতে হয়। তবে, সরকারের সদিচ্ছার সহিত দরিদ্রের প্রাপ্তির প্রায়ই বিস্তর ফারাক থাকিয়া যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৬:০৫
Share: Save:

উচ্চশিক্ষার পথে বাধা সরাইবার উদ্দেশ্যে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ চালু করিল রাজ্য সরকার। ইহাতে শিক্ষাঋণ মিলিবে পূর্বের তুলনায় স্বল্প সুদে, শোধ করিবার সময় মিলিবে দশ বৎসর। ভারতে ১৮-২৩ বৎসরের তরুণ-তরুণীদের মাত্র ২৬ শতাংশ উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে প্রবেশ করিতে পারিয়াছেন। তফসিলি জাতি, জনজাতির মধ্যে ওই হার আরও কম। জাতীয় শিক্ষা নীতি (২০১৯) ২০৩৫ সালের মধ্যে এই অনুপাত ৫০ শতাংশ করিতে চায়। তাহার জন্য যেমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন, তেমনই উচ্চশিক্ষাকে সকলের জন্য সুলভ করাও প্রয়োজন। ভারতে তরুণ-তরুণীদের উচ্চশিক্ষা-বিমুখতার অন্যতম কারণ, পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের অভাব। প্রথমত, উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভারতে দ্রুত বাড়িতেছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার বেশ কিছু নূতন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্তন করিয়াছে, কিন্তু শিক্ষার বেসরকারিকরণে এ রাজ্যও ব্যতিক্রম নহে। ফলে, উচ্চশিক্ষা উত্তরোত্তর মহার্ঘ হইতেছে। দ্বিতীয়ত, সরকারি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরও দৈনন্দিন যাতায়াত, অথবা ছাত্রাবাসের খরচ বহিতে হয়। বইপত্র প্রভৃতি আনুষঙ্গিক খরচও কম নহে। যাহা বহু পরিবারের সাধ্যাতীত। পথের পাঁচালী উপন্যাসের কিশোর নায়ক কলিকাতায় অভুক্ত থাকিয়া কলেজের ক্লাস করিয়াছে, লজ্জায় কাহাকেও সে কথা বলিতে পারে নাই। আজও তেমন ‘অপু’-র সংখ্যা কম নহে।

স্বল্পবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের নিকট উচ্চশিক্ষা যাহাতে দুর্লভ না হইয়া ওঠে, তাহার জন্য অনুদান, ছাত্রবৃত্তি প্রভৃতি ব্যবস্থা রহিয়াছে। কিন্তু তাহার পরেও প্রয়োজন হয় শিক্ষাঋণের। এই পরিষেবা নূতন নহে— বহু দিন হইতেই ব্যাঙ্কগুলি শিক্ষাঋণের সুবিধা প্রদান করিয়া আসিতেছে। আক্ষেপ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহা দরিদ্রের নাগালের বাহিরে রহিয়াছে। প্রথমত, তাহার শর্তগুলি নমনীয় নহে। পঠনপাঠন, ছাত্রাবাস প্রভৃতির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-প্রদর্শিত মূল্যতালিকা ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় সাধারণত গণ্য করা হয় না। তাহার ফলে বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যেই ঋণ সীমাবদ্ধ থাকিয়া যায়। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ঋণ পাইতে সম্পত্তি বন্ধক না রাখিবার নিয়ম থাকিলেও, কার্যক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি বন্ধক না রাখিয়া ঋণ দিতে অস্বীকার করিয়া থাকে, অথবা ‘গ্যারান্টার’ দাবি করিয়া থাকে। এই সব শর্ত বহু পরিবারের সাধ্যাতীত। সরকার শিক্ষাঋণের শর্তগুলি নমনীয় না করিলে, সুলভ না করিলে বহু ছাত্রছাত্রী সাহস করিয়া অগ্রসর হইবেন না। তাঁহারা শিক্ষার সুযোগ হারাইবেন, দেশও দারিদ্রমুক্তি এবং সাম্যময় সমাজ প্রতিষ্ঠার সুযোগ হারাইবে।

অতএব, রাজ্য সরকারের সুলভ শিক্ষাঋণ প্রকল্পকে স্বাগত জানাইতে হয়। তবে, আশঙ্কা রহিয়া গেল। সরকারের সদিচ্ছার সহিত দরিদ্রের প্রাপ্তির প্রায়ই বিস্তর ফারাক থাকিয়া যায়। কৃষক, হস্তশিল্পী, হকার কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নানা রকম ঋণের প্রকল্প সরকার ইতিপূর্বে ঘোষণা করিয়াছে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এ সুবিধা যাঁহাদের প্রাপ্য, তাঁহাদের অধিকাংশই পান নাই। কখনও খাতায়-কলমে রহিয়া গিয়াছে, কখনও অপাত্রে দান হইয়াছে। সরকারি প্রকল্পের করুণাধারা প্রশাসনিক আলস্য-দুর্নীতির মরুপথে হারাইয়া না যায়, তাহাই দেখিতে হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy