Advertisement
২৬ অক্টোবর ২০২৪
Israel-Hamas Conflict

হিংসায় উন্মত্ত

একুশ শতকের যুদ্ধ আজ এইখানে এসে দাঁড়িয়েছে— হিংস্রতা ও আগ্রাসনের অতলতলও স্পর্শের জায়গায়। নইলে আর যা-ই হোক, শরণার্থী শিবিরের উপর কখনও বিমানহানা হতে পারে না।

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ ০৮:২৯
Share: Save:

পঞ্চাশের কাছাকাছি মানুষ মারা গিয়েছেন গাজ়ার দক্ষিণে প্যালেস্টাইনি শহর রাফায়, ইজ়রায়েলি বিমানহানায়। আহত দু’শোরও বেশি। গত বছর অক্টোবর থেকে ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে হয়ে চলা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির তালিকায় সাম্প্রতিক এই ঘটনাকে স্রেফ একটি ‘সংযোজন’ ধরে নিলে তা হবে অমানবিক, অমার্জনীয় এক অপরাধ। কারণ রাফায় যে ভাবে সাধারণ প্যালেস্টাইনি মানুষ মারা গেলেন, তার বীভৎসতা মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘হলোকস্ট’-এর স্মৃতি। ইজ়রায়েলি বিমান থেকে মিসাইলে প্রায় সতেরো কেজি বিস্ফোরক ছোড়া হল নীচে যে এলাকায়, সেটি একটি শরণার্থী শিবির, শত শত তাঁবুতে ঘেরা। বিস্ফোরণের তাপে মুহূর্তে তাঁবুগুলির সঙ্গে ঝলসে গলে গেল মানুষের শরীর, তাঁবুর মধ্যেই পুড়ে মারা গেলেন সন্তান-সহ মায়েরা। ছাই হয়ে যাওয়া শরণার্থী শিবিরে মস্তকহীন প্যালেস্টাইনি শিশুর দেহ ক্যামেরার সামনে তুলে ধরছেন বাবা, এই করুণ বীভৎস ছবি দেখতে হল পৃথিবীকে।

একুশ শতকের যুদ্ধ আজ এইখানে এসে দাঁড়িয়েছে— হিংস্রতা ও আগ্রাসনের অতলতলও স্পর্শের জায়গায়। নইলে আর যা-ই হোক, শরণার্থী শিবিরের উপর কখনও বিমানহানা হতে পারে না। ঘরছাড়া যুদ্ধভীরু মানুষ প্রাণে বাঁচতে কোন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন, কতটা জায়গা জুড়ে তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই আর কত দূরে যুদ্ধক্ষেত্র, বিপক্ষের শিবির বা অস্ত্রভান্ডার, প্রযুক্তির দৌলতে এখন এ সবই হাতের মুঠোয়— সর্বাধুনিক যুদ্ধ-প্রযুক্তির অধিকারী ইজ়রায়েলের কাছে তো নিতান্ত জলভাত। রাফার ওই অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরের অবস্থান ইজ়রায়েল যে শুধু জানত তা-ই নয়, মাত্র কিছু দিন আগে তারাই গাজ়ার উপদ্রুত অন্য অঞ্চলে ঘোষণা করেছিল, সাধারণ মানুষ যেন প্রাণ বাঁচাতে রাফায় চলে যান। ইজ়রায়েলই প্রচারপত্র বিলি করে ওই এলাকাকে ‘হিউম্যানিটারিয়ান জ়োন’ হিসাবে ঘোষণা করে, যার অর্থ সেখানে তাদের ‘যুদ্ধ-স্বার্থ’ নেই, তাই সাধারণ মানুষের প্রাণের ভয় নেই। অথচ নিজেদেরই ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তারা সেখানে ভয়ঙ্কর আক্রমণ করল। শরণার্থী শিবিরের মধ্যে ঘাঁটি গেড়ে থাকা হামাসের দুই নেতাকে নির্মূল করতেই এই হানা— ইজ়রায়েলের এই যুক্তি যে নেহাতই সাফাই গাওয়া তা পরিষ্কার, আসল কারণ আগের দিন তেল আভিভে হামাসের রকেট হানা। এ তারই বহুগুণ জবাব, ঢিলের বদলে পাটকেল নয়, মিসাইল ছুড়ে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাষ্ট্রপুঞ্জ, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস-এর হুঁশিয়ারি তোয়াক্কা না করে, এমনকি রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর মতো সেবা সংস্থার মানবিক আবেদনেও সাড়া না দিয়ে ইজ়রায়েল যুদ্ধের নামে এক নজিরবিহীন অমানবিকতা দেখিয়ে যাচ্ছে বাকি বিশ্বের সামনে। রাফার হাসপাতালে গুরুতর জখম মানুষদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু সেখানে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী নেই, তাঁরাও যুদ্ধের বলি। মিশর-সীমান্তের পাশে বলে সে দিক দিয়ে রাফায় ত্রাণ পাঠাচ্ছে নানা দেশ ও প্রতিষ্ঠান, ইজ়রায়েল আটকে রেখেছে ত্রাণসামগ্রী বোঝাই ট্রাকের সারি। খাবার নেই, কাপড় নেই, ওষুধ নেই, নেই মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু, স্বভূমে উদ্বাস্তু মানুষগুলির শুধু ধুঁকতে থাকা জীবনটুকুই সম্বল ছিল— সেটুকুও কেড়ে নিচ্ছে যুদ্ধ। যুদ্ধের তবু শেষ আছে, এই হিংস্রতার কোনও শেষ নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Israel-Palestine Conflict Rafah gaza
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE