Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Israel Palestine Conflict

জাতিবিদ্বেষ এবং

নিজের পথে অনড় থাকতে রাষ্ট্র নিজেই যখন আগ্রাসী পন্থা অবলম্বন করে তখন তার দ্বারা প্রভাবিত হয় জনসমাজ। আমেরিকার ঘটনায় সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ০৮:১৫
Share: Save:

গাজ়া তথা প্যালেস্টাইনের উপরে ইজ়রায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এপ্রিলের শেষ থেকে আমেরিকার বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয় প্যালেস্টাইন-পন্থী ছাত্র আন্দোলন। যুদ্ধাবসান, গাজ়ায় মানবিক সঙ্কটের সমাধান তথা ইজ়রায়েলকে সমর্থন করে এমন সংস্থা থেকে বিলগ্নিকরণের দাবি নিয়েই মূলত সরব হয়েছে পড়ুয়ারা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তথা প্রশাসন সে দাবি মানতে নারাজ। উল্টে ছাত্র আন্দোলন প্রশমিত করতে ছাত্রদের ধরপাকড়, গ্রেফতার ও বরখাস্তের মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে এই যুক্তিতে যে, তাদের এ-হেন প্রতিবাদের ছত্রছায়ায় ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে ইহুদি-বিদ্বেষী মানসিকতা। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতেই সেখানকার এক জাতীয় সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পরে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান ইহুদি আগের বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-ও তাঁর ভাষণে ইহুদি-বিদ্বেষের উদ্বেগজনক পুনরুত্থানের কথা তুলে ধরেন এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।

লক্ষণীয়, ইহুদি-বিদ্বেষ একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা এবং বিভিন্ন দেশে এটি এখনও বিভিন্ন ভাবে ক্রিয়াশীল। তবে গত ৭ অক্টোবরে হামাসের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে বিশ্ব জুড়ে ইহুদি-বিদ্বেষী ঘটনার যে লক্ষণীয় উত্থান ঘটেছে, সেই ইঙ্গিত মিলেছে এক আন্তর্জাতিক বার্ষিক রিপোর্টে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির মতো ইউরোপীয় দেশ তো বটেই, খাস আমেরিকায়, যেখানে শক্তিশালী ইহুদি-দরদি গোষ্ঠীর জেরে এত কাল এই ধরনের ঘটনা সে ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি, সেখানেও গত কয়েক মাসে এমন বিদ্বেষ দেখা দিয়েছে। এ-হেন টালমাটালের মাঝে সম্প্রতি কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ হয়ে যায় ইহুদি-বিদ্বেষী সচেতনতা আইন, যেটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈষম্য বিরোধী আইনে ব্যবহৃত ইহুদি-বিদ্বেষের সংজ্ঞাকে আরও প্রসারিত করবে। অভিযোগ, সেনেট-এ যদি আইনটি পাস হয়ে যায়, তবে আমেরিকার কলেজ-ক্যাম্পাসগুলিতে বাক্‌স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। সাম্প্রতিক প্রতিবাদ আন্দোলনগুলির পরিপ্রেক্ষিতে যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের।

প্রশ্ন হল, আমেরিকার কলেজগুলি যে ছাত্র আন্দোলনে মুখর হয়েছে, তা সত্যিই কি ঘৃতাহুতি দিচ্ছে ইহুদি-বিদ্বেষী ভাবনাকে? বলা বাহুল্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে একটি রাষ্ট্র এবং তার নীতির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দিয়ে কোনও এক বিশেষ জনগোষ্ঠীকে নিশানা করা হচ্ছে, প্রশাসন তেমন ইঙ্গিত দিলেও তার প্রমাণ অদ্যাবধি মেলেনি। বরং বিদ্বেষের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কিছু জায়গায় ইহুদি ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে ‘নট ইন আওয়ার নেম’ বা ‘অ্যানাদার জু (Jew) ফর ফ্রি প্যালেস্টাইন’-এর মতো স্লোগানকে সঙ্গী করে। সুতরাং ইঙ্গিত স্পষ্ট— রাজনীতির এক পুরনো খেলায় লিপ্ত হয়েছে আমেরিকান প্রশাসন। শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও যে-হেতু ইজ়রায়েল নীতিতে অনড় থাকতে বদ্ধপরিকর তারা, তাই বিরোধিতা প্রশমিত করতে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ইহুদি-বিদ্বেষের সমস্যা জুড়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। নিজের পথে অনড় থাকতে রাষ্ট্র নিজেই যখন আগ্রাসী পন্থা অবলম্বন করে তখন তার দ্বারা প্রভাবিত হয় জনসমাজ। আমেরিকার ঘটনায় সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।

অন্য বিষয়গুলি:

Israel Palestine Conflict US palestine Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy