Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly

উলুখাগড়া

গত সপ্তাহের শেষে বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নীতি (সংশোধনী) বিল, ২০২৩, পাশ হল— যা আবারও উলুখাগড়াদের অবশিষ্ট প্রাণ ওষ্ঠাগত করতে চলেছে।

WB Assembly.

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০১
Share: Save:

বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তা হলে উলুখাগড়াতেই পরিণত হল, তাদের প্রাণে বাঁচার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর। গত সপ্তাহের শেষে বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নীতি (সংশোধনী) বিল, ২০২৩, পাশ হল— যা আবারও উলুখাগড়াদের অবশিষ্ট প্রাণ ওষ্ঠাগত করতে চলেছে। এই বিল বলছে, উপাচার্য ‘সার্চ ও সিলেকশন কমিটি’তে এ বার থেকে চ্যান্সেলর বা আচার্য হিসাবে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি, উচ্চশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারপার্সন এবং ইউজিসি প্রতিনিধি থাকবেন— স্পষ্টতই জোর পড়েছে রাজ্যের অধিকারের উপর, যে-হেতু শিক্ষা একটি যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। মুশকিল হল, এই প্রয়াস এমন সময় করা হচ্ছে যখন রাজ্যপালের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ অন্যায় ভাবে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি একপাক্ষিক ভাবে ১৫ জন অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় এ ভাবে রাজ্যের অধিকার দলিত হওয়ায় এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে নিন্দাও প্রকাশিত হয়েছিল। অতঃপর সেই অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্যদের তিন জন— যাদবপুরের অমিতাভ দত্ত, মৌলানা আবুল কালাম আজ়াদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায় এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়কে জরুরি ভিত্তিতে পদত্যাগ করতে বলেছেন রাজ্যপাল মহাশয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ-নির্দেশ মানতে অনাগ্রহই যে তাঁর উষ্মার কারণ— অনুমানে অসুবিধা নেই। এমতাবস্থায় রাজ্যে এই নতুন বিল পাশ আসলে সম্মুখসমরের আহ্বান। বিল পাশের পরই বিরোধী বিজেপি বিধায়করা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এই বিলে যাতে রাজ্যপালের স্বাক্ষর না পড়ে, তার জন্য।

রাজভবন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সম্মুখসমরে গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন উচ্চশিক্ষা সমাজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন (জুটা) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন (ডব্লিউবি-কুটা) সেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনাও করেছে, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি রাখা হয়নি সার্চ কমিটিতে। নানা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনের বুলি কপচানো, এবং পাশে উপাচার্য নিয়োগের মতো বিষয়ে কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি না রাখা, এই দ্বিরাচার বুঝিয়ে দেয়, সরকারি দণ্ডচালনায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার উভয়েই সিদ্ধহস্ত। এক দিকে রাজভবন, অন্য দিকে বিকাশ ভবন— যুযুধান দুই পক্ষের মধ্যে অক্কা-পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে যে, তার নাম উচ্চশিক্ষা। শিক্ষাজগতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ কায়েম নিয়ে আজ কারও কোনও সংশয় নেই। অন্যত্র, বিশেষত দিল্লিতে, ঠিক এই পদ্ধতিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিজেপি নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের দায়িত্বও কিছু কম নয়। রাজনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার খেলায় রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তৃণমূল সরকারের আমলে ক্রমাগত আক্রান্ত ও বিপন্ন হয়েছে, তার স্বশাসনের আশা নির্বাপিত হয়েছে, সুস্থ বিদ্যাচর্চার পরিবেশ অস্তমিত হয়েছে। বামফ্রন্ট জমানাতেও এমনটাই হত, এবং এই পরিবেশ বাম জমানারই উত্তরাধিকার, এ কথা তথ্য হিসাবে একশো ভাগ ঠিক হলেও অজুহাত হিসাবে একশো ভাগ ভুল। গত বারো বছরে এই ‘উত্তরাধিকার’ গ্রহণ না করার বহু অবকাশ ছিল— ভুলে গেলে চলবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

university Mamata Banerjee CV Ananda Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy