Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
UK Election 2024

পালাবদল

লিজ় ট্রাস-এর ৪৯ দিনের বিশৃঙ্খলাময় শাসনের শেষে ২০২২ সালের অক্টোবরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক।

UK Election 2024

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৩
Share: Save:

জনমত সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল আগেই। আশঙ্কা ছিল বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকেরও। সেই ইঙ্গিত ও আশঙ্কা সঠিক প্রমাণ করে এ বার পালাবদল হচ্ছে ব্রিটেনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে। এ বারের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজ়ারভেটিভ পার্টিকে (টোরি) কার্যত দুরমুশ করে দেশের রাশ হাতে নিল লেবার পার্টি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’-এ মোট আসন ৬৫০। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ৩২৬। লেবার পার্টি এ বার ৪১০-এর বেশি আসন পেয়ে ইতি টানল ১৪ বছরের কনজ়ারভেটিভ শাসনে। অন্য দিকে, কনজ়ারভেটিভরা কোনও ক্রমে দখলে রাখতে পারল মাত্র ১২১টি আসন। ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময় থেকে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, দেশের প্রখ্যাত জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস)-র ব্যাপক অবনতি, অভিবাসন সমস্যা-সহ সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধিতে ব্রিটেনের জনগণ বিরক্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছিল জনমত সমীক্ষাগুলিতে। তা ছাড়া ছিল স্থিতাবস্থাবিরোধী ক্ষোভও। পাশাপাশি, গত পাঁচ বছর ধরে টোরিদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, তিন বার প্রধানমন্ত্রী বদল ইত্যাদিও প্রভাবিত করেছে এ বারের ভোটকে।

লিজ় ট্রাস-এর ৪৯ দিনের বিশৃঙ্খলাময় শাসনের শেষে ২০২২ সালের অক্টোবরে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক। সকলের আশা ছিল, পূর্বসূরিদের টালমাটাল নেতৃত্বের পরে দল তথা দেশের রাজনীতিতে স্থিতি আনতে সক্ষম হবেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির কিছুটা উন্নতিও হয়। ১১ শতাংশের মূল্যবৃদ্ধির হারকে তিনি ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। কিন্তু কিছু উন্নতি সত্ত্বেও, ব্রেক্সিট-পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কট, কোভিড অতিমারির ধাক্কা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে দেশের যে দুরবস্থা দাঁড়িয়েছিল, তাতে বিশেষ নিরাময় ঘটানো যায়নি। মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্ক বৃদ্ধি, বাসস্থানের ঘাটতির মতো সমস্যা দুর্ভোগ বাড়িয়েছে ব্রিটিশ জনসাধারণের। অন্য দিকে, অভিবাসন নিয়ে টোরি সরকারের কার্যকলাপ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। দেশের নির্বাচন ২০২৫ সালের মধ্যে হওয়ার কথা হলেও, বিরোধীদের বিপাকে ফেলতে দ্রুত সাধারণ নির্বাচন করার পদক্ষেপ করেন সুনক। কিন্তু তাঁর এই রাজনৈতিক চালই সম্ভবত কনজ়ারভেটিভদের আরও সঙ্কটে ফেলল।

নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার ভোট প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারেই এ বার মন দেবেন। লেবার পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, চাকরিরতদের জন্য শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে না, আয়কর, জাতীয় বিমা বা ভ্যাট-এর প্রাথমিক, উচ্চ বা বাড়তি হারে কোনও বৃদ্ধি করা হবে না। স্টার্মার দাবি করেছেন, মানুষের কষ্ট লাঘব করতে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে, কাজের সময়ের বাইরে যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করেন তার জন্য দেওয়া হবে উৎসাহ ভাতা। সুনকের অভিবাসন নীতিও বর্জন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে, চোদ্দো বছর পর ক্ষমতায় এসে লেবার পার্টির সামনে এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ— যে সব প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিচ্ছেন, তা পালন করা বর্তমান পরিস্থিতিতে সহজসাধ্য নয়। এই কঠিন পথ তাঁরা কী ভাবে পরিক্রমা করবেন, তার উপরই নির্ভর করছে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy