—ফাইল চিত্র।
বিদ্যালয় শুধু পড়াশোনা শেখারই জায়গা নয়, নীতিশিক্ষা আর মূল্যবোধেরও পাঠশালা, এ বিশ্বাসটি ভারতীয় তথা বাঙালি সংস্কৃতিতে প্রোথিত। অভিভাবকেরা একদা শিক্ষকের হাতে ছেলেমেয়েদের এক রকম সঁপে দিতেন, গড়েপিটে মানুষ করার স্বপ্নে। তার মানে এমন নয় যে তাঁরা মুক্তকচ্ছ হয়ে থাকতেন, স্কুল আর বাড়ি ছিল পরস্পরের পরিপূরক: পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনেরও নানা শিক্ষায়। একুশ শতকে এসে এই দু’টি পরিসরের ভারসাম্য কোথাও কি ব্যাহত হচ্ছে? কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুলে সম্প্রতি শুরু হয়েছে কাউন্সেলিং— শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়, অভিভাবকদেরও। মা-বাবাদের স্কুলে ডেকে, কখনও পেশাদার কাউন্সেলরদের সাহায্য নিয়ে বোঝানো হচ্ছে— বাড়িতে তাঁরা কী ভাবে খেয়াল রাখবেন ছেলেমেয়েদের, এবং সেই সঙ্গে নিজেদেরও।
আধুনিক প্রযুক্তি, আন্তর্জাল, সমাজমাধ্যম ইত্যাদির সূত্রে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার বাইরের জগতের খবরও রাখে অনেক বেশি। কিন্তু এই সবই তাদের মনে কোন প্রভাব ফেলছে, তা ভাল না মন্দ তার খোঁজ রাখা উত্তরোত্তর কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে— শিক্ষকদের পক্ষে তো বটেই, অভিভাবকদের পক্ষেও। একুশ শতকে ব্যস্ত ও ব্যয়বহুল জীবনে ছেলেমেয়েদের প্রতি সময় ও মনোযোগের ঘাটতি বহু অভিভাবক পূরণ করতে চান তাদের হাতে প্রযুক্তির বিনোদন তুলে দিয়েই। তাতে সেই ক্ষতি পূরণ হয় না, উপরন্তু অনেক সময় অগোচরে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়— প্রচারমাধ্যমে চার পাশে ঘটে চলা নিত্য অনিয়ম-বেনিয়ম, সিনেমা-ওয়েব সিরিজ়ে অন্যায়ের জবাবে নায়কের হিংস্র প্রতিশোধ কিংবা আইন হাতে তুলে নেওয়া— এই সবই দেখে অল্পবয়সিদের মনে হতে পারে এটাই জগতের নিয়ম, এই হিংস্রতা বা আইন লঙ্ঘনই স্বাভাবিক। জীবন ও বাস্তবতা যে ভিন্ন, তা বুঝিয়ে দেওয়ার মানুষটি বাড়িতে মেলে না। তার জেরে ছাত্রছাত্রীদের আচরণগত পরিবর্তনগুলো ধরা পড়ে শিক্ষকদের চোখে, কারণ ছেলেমেয়েরা দিনের একটা বড় সময় কাটায় স্কুলে। কোন ছেলে বা মেয়েটি দিনের পর দিন বিষণ্ণ হয়ে থাকছে, কে পড়াশোনায় আগে তুখোড় ছিল কিন্তু ইদানীং উদাস বা অমনোযোগী, সহপাঠীর সঙ্গে শিশুসুলভ ঝগড়ার প্রতিক্রিয়ায় কোন পড়ুয়া আচমকা হিংস্র হয়ে উঠছে, এই সবই তাঁদের চোখে ধরা পড়ছে রোজ।
এই কারণেই অভিভাবকদের কাউন্সেলিং অতি জরুরি। তাঁদের বুঝতে হবে, অণু পরিবার বা প্রযুক্তির উপর দোষ চাপিয়ে এই সমস্যাকে পাশ কাটানো যাবে না। চার পাশের অন্যায় বা হিংস্র ঘটনাগুলি থেকেও অল্পবয়সিদের ভুলিয়ে বা চোখ বন্ধ করে রাখা যাবে না— অন্তত এই সময়ে দাঁড়িয়ে। তা উচিতও নয়, তাতে বাস্তব সম্পর্কে ভুল বার্তা পাবে পড়ুয়ারা, অভ্যস্ত হয়ে উঠবে পর্দায় দেখা অমানবিক বা অতিমানবিক আচরণের অনুকরণ-অনুসরণে। এহ বাহ্য, চার দেওয়ালের ভিতরের পরিবেশটিও অতি গুরুত্বপূর্ণ। মনোবিদরা বলছেন, যে শিশু রোজ মা-বাবা বা পরিবারের সকলের একে অন্যের প্রতি ঝগড়া অবহেলা উপেক্ষার সাক্ষী, তার মধ্যে বাসা বাঁধে নিরাপত্তাহীনতা, তা ঢাকতে সে নিজেও হয়ে ওঠে অসহিষ্ণু, হিংস্র। শিক্ষক ও অভিভাবকের মিলিত দায়বদ্ধতা এই সঙ্কটে পথ দেখাতে পারে। শিক্ষকেরা তো আছেনই, অভিভাবকদেরও এ বার মনোযোগী ছাত্র হওয়া দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy