নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণায় এ বছর থেকে সাধারণতন্ত্র দিবসের উদ্যাপন শুরু হচ্ছে আজ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন থেকে। প্রত্যেক বাঙালি তথা ভারতীয়ের কাছে তা গর্বের মুহূর্ত হতে পারত। কিন্তু, নেতাজির জন্মদিনকে ‘পরাক্রম দিবস’ ঘোষণা কতটা তাঁর শৌর্যের সনিষ্ঠ উদ্যাপন, আর কতটাই বা বিধানসভা নির্বাচন মাথায় রেখে বিজেপি-বিরোধী পশ্চিমবঙ্গের মন তথা ভোট পাওয়ার ছল, ধন্দ জেগেছিল আগেই। সে ধন্দ গাঢ় হয়েছিল গত বছর দিল্লিতে সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের ‘নেতাজি ১২৫’ ট্যাবলো বাদ পড়ায়, পরে ইন্ডিয়া গেটে মোদী সরকারের ঘটা করে নেতাজির মূর্তি বসানোয়। কিমাশ্চর্যম্, এ বছর নেতাজির জন্মদিনে আরএসএস-এর উদ্যোগে কলকাতায় হচ্ছে ‘নেতাজি লহ প্রণাম’ অনুষ্ঠান! সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত কোন সুরে গাইবেন তা অনুমান করা যায়, এরই মধ্যে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতাজির সঙ্গে আরএসএস-প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারের সাক্ষাৎ-প্রসঙ্গ তুলে ধরে আজ়াদ হিন্দ ফৌজ ও আরএসএস-এর সমকক্ষতা নির্ধারণের চেষ্টা প্রাণপণে প্রতিষ্ঠিত।
সুভাষচন্দ্র স্রেফ আরএসএস-এর শৃঙ্খলাবোধটুকুরই তারিফ করেছিলেন, তদধিক এক বিন্দু নয়। আজকের ভারতে আরএসএস-এর আচরিত-প্রচারিত উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ নেতাজির ধর্মনিরপেক্ষ ভারত-ভাবনা থেকে বহু দূরে; নরেন্দ্র মোদী যেখানে স্রেফ ধর্মের ইঙ্গিতে মোগল ও ইসলামি শাসনকে বলেন ‘বারোশো বছরের দাসত্ব’, নেতাজির ভাবনায় সেখানে ব্রিটিশ-পূর্ব ভারত হিন্দু-মুসলমানের একত্র ইতিহাস। নেতাজির ভারত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বহুত্বের কথা বলে, সমাজ-রাজনীতিতে জাতপাতের গোঁড়ামি নির্মূল করতে চায়, সর্বোপরি উন্নত দেশ গড়ার পথে ধর্মান্ধতা ছুড়ে ফেলে আপন করে নেয় ধর্মনিরপেক্ষ বিজ্ঞানমনস্কতাকে। এর কোনওটিই আরএসএস-বিজেপির ঘোষিত পন্থা বা লক্ষ্য নয়, এখনও তাদের হাতিয়ার ধর্মীয় বিভাজন, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, বিভেদ, বিদ্বেষ। সাম্প্রদায়িকতা নেতাজি বরদাস্ত করতেন না, জিন্নার মুসলিম লীগের মতোই সাভারকরের হিন্দু মহাসভারও কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি।
তবুও বিজেপির নেতাজিকে চাই, কারণ হিন্দুত্ববাদীদের ঘরে এমন কোনও নেতা নেই, যাঁর দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ সংশয়ের ঊর্ধ্বে। ঘরের সেই অভাব ঢাকতেই নেতাজিকে আত্মসাৎ করার মরিয়া চেষ্টা। কৌশলটিও পরিচিত: যে জাতীয়তাবাদী নেতাদের সঙ্গে গান্ধী বা বিশেষত নেহরুর ‘সম্পর্ক ভাল ছিল না’ বলে আরএসএস বিশ্বাস করে, অথবা সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করাতে চায়— কংগ্রেস তাঁদের উপেক্ষা করেছে, এই ধুয়ো তুলে বিজেপি-আরএসএস তাঁদের আত্মসাৎ করতে উদ্যোগী। স্ট্যাচু অব ইউনিটি গড়ে পটেলকে নিয়ে যে রাজনীতি করেছে বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে সুভাষচন্দ্রকে নিয়েও সেই রাজনীতির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তবে, নেতাজিকে আত্মসাৎ করা যে হিন্দুত্ববাদীদের সাধ্য নয়, ইতিহাসের সামান্য বোধ থাকলেই তা নিয়ে সংশয় থাকে না। ধর্মনিরপেক্ষ, সর্বজনীন ভারতের ধারণার প্রতি তাঁর অটল আনুগত্যের সম্মুখে সঙ্ঘের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি সর্বদাই অবৈধ। তাঁর আদর্শের কথা স্মরণ রাখাই তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রকৃষ্ট পথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy