Advertisement
E-Paper

সরকারি শাড়ি

‘তন্তুজ’ হস্তচালিত তাঁতিদের সমবায়ের শীর্ষ সংগঠন বলে কি সরকারকে পাওয়ারলুমে উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য একটি পৃথক ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করতে হচ্ছে?

An image of Saree

সস্তায় শাড়ি দিতে চাইলে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত বিপণিগুলিতে আরও কম দামে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে সরকার, নতুন দোকান খোলা হবে কেন? ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৩ ০৪:৫০
Share
Save

রাজ্যের প্রতি ব্লকে ‘বাংলার শাড়ি’ দোকান খুলবে সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণায় আশার চেয়ে সংশয় তৈরি হল বেশি। প্রধান প্রশ্ন এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এখানে কম দামি শাড়ি (তিনশো টাকা থেকে শুরু) পাওয়া যাবে। দাবিটি গোলমেলে, কারণ সরকারি বস্ত্রবিপণি ‘তন্তুজ’-এর দোকানগুলিতে মেলে বারো হাত ‘জনতা শাড়ি,’ যার দাম দেড়শো টাকার কম। তা ছাড়া বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে তন্তুজ, মঞ্জুষা, খাদি প্রভৃতি সরকারি বিপণিগুলিতে দামে প্রচুর ছাড় দেওয়া হয়। অতএব সস্তায় শাড়ি দিতে চাইলে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত বিপণিগুলিতে আরও কম দামে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে সরকার, নতুন দোকান খোলা হবে কেন? দ্বিতীয়ত, জনসাধারণের কাছে কোনও পণ্য সুলভ করতে রাজকোষের টাকা তখনই খরচ করা চলে, যখন সেই পণ্যটি উন্নত জীবনধারণের জন্য জরুরি, কিন্তু বাজারে সুলভ নয়। অন্ন এবং বাসস্থানের মতো, বস্ত্রও মানুষের এক মৌলিক প্রয়োজন। চল্লিশের দশকে বাংলায় বস্ত্রের তীব্র সঙ্কট দেখা গিয়েছিল। সে কথা ইতিহাসের বইয়ে ও সাহিত্যে আজও বেঁচে রয়েছে। কিন্তু আজ সঙ্কট উপভোক্তার নয়, উৎপাদকের।

মুখ্যমন্ত্রী সুলভে শাড়ি বিক্রির জন্য নতুন দোকান খোলার প্রতিশ্রুতি দিলে আশঙ্কা জাগে, সুলভে শাড়ি বিক্রির অছিলায় এগুলিতে কি কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি, মেশিনে বোনা শাড়ি বিক্রি হবে? শাড়ির উৎপাদন হস্তচালিত তাঁতের জন্য সংরক্ষিত, এই আইন বহাল থাকা সত্ত্বেও সরকার নিজস্ব বিপণিতে যন্ত্রে বোনা শাড়ি বিক্রি করলে তা হবে এক করুণ প্রহসন। ‘তন্তুজ’ হস্তচালিত তাঁতিদের সমবায়ের শীর্ষ সংগঠন বলেই কি সরকারকে পাওয়ারলুমে উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের জন্য একটি পৃথক ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করতে হচ্ছে? যন্ত্রে বোনা পলিয়েস্টার-মিশ্রিত শাড়িতে এখন শহরতলি ও গ্রামের হাট-বাজার উপচে পড়ছে। পলিয়েস্টার প্রভৃতি কৃত্রিম সুতোর দাম কম বলেই শাড়িগুলি সুলভ। ফলে কেবল সুলভ শাড়ি বিক্রির জন্য সরকারের নতুন দোকান খোলার প্রয়োজন নেই। অন্য দিকে, সুতি বা রেশমের মতো প্রাকৃতিক সুতোর দাম অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। ফলে শাড়ির দাম অতি সুলভ থেকে অতি দুর্মূল্য— দু’দিকেই প্রসারিত হচ্ছে। শৌখিন মসলিন, জামদানি বা ঢাকাই শাড়ি যাঁরা কেনেন, তাঁরাও সরকারি বিপণিতে ভর্তুকি পান। তবে সরকারি টাকায় অগ্রাধিকার দরিদ্রের। গরিব মেয়ের কি শাড়ির অভাব ঘটেছে?

আজ খাদ্যে ভর্তুকির সপক্ষে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল সরব, কিন্তু বস্ত্রে ভর্তুকির জন্য সওয়াল শোনা যায় না। বরং বার বার উঠে এসেছে হস্তচালিত তাঁতের শিল্পীদের দুর্দশার কথা। তাঁদের শ্রমের মূল্য পেতে হলে তাঁতের শাড়ির দাম সাতশো-আটশো টাকা ছাড়াতে বাধ্য। পাওয়ারলুমের অবাধ এবং অবৈধ ব্যবহারে কোণঠাসা তাঁতিরা অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। সরকারি সুরক্ষার প্রয়োজন বাংলার প্রাচীন, ঐতিহ্যময় তাঁত শিল্পের। যদি বাংলার তাঁতিদের হস্তচালিত তাঁতে উৎপাদিত সুতি বা রেশমের শাড়ি সুলভ করার কথা ভাবে রাজ্য সরকার, তাতে ক্রেতা ও উৎপাদক উভয়েরই লাভ হতে পারে, পরিবেশও বাঁচতে পারে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এমন নানা ‘ঐচ্ছিক’ কার্যসূচির জেরে রাজকোষের লজ্জা নিবারণ হবে কী করে, সে প্রশ্নটা অবশ্য থেকেই যাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Saree Tantuja State Government Mamata Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}