E-Paper

অন্ধকারের দিনলিপি

আমরণ অনশন বা আত্মহননের ‘হুমকি’ থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনের ব্যারিকেড ভেঙে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা এবং জনজীবনে অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্যোগ কোনও আন্দোলনের ক্ষেত্রেই সমর্থনযোগ্য নয়।

Protest

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫১
Share
Save

সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি— নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদে চাকরিপ্রার্থীদের ‘এসএসসি যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চ’ সংগঠনের মুখপাত্র জানালেন, সাত দিনের মধ্যে স্কুলে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু না হলে তাঁরা এ বার আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারেন। মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি— ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় সফল চাকরিপ্রার্থীরা অবিলম্বে তাঁদের ইন্টারভিউয়ের প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিতে আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হয়ে দফায় দফায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সদর দফতরের সামনে পৌঁছনোর চেষ্টা করায় এবং পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করায় সল্ট লেকের করুণাময়ী এলাকা রণভূমিতে পরিণত হল। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষার ভুবনে এমন দিনলিপিই লেখা হয়ে চলেছে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। এক দিকে শিক্ষক নিয়োগে সাতমহলা দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর অভিযানের পর অভিযান এবং আদালতে মামলার পর মামলা, অন্য দিকে দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং শিক্ষক নিয়োগের কার্যত স্তব্ধ প্রক্রিয়া চালু করার দাবিতে কর্মপ্রার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন— সরকারি স্কুলশিক্ষার গোটা কাঠামোটিই বিপর্যস্ত। শিক্ষার পরিসরে অশান্তির অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়, কিন্তু এখন যা চলছে তার চরিত্র সম্পূর্ণত অভূতপূর্ব।

আমরণ অনশন বা আত্মহননের ‘হুমকি’ থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনের ব্যারিকেড ভেঙে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা এবং জনজীবনে অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্যোগ কোনও আন্দোলনের ক্ষেত্রেই সমর্থনযোগ্য নয়। চাকরিপ্রার্থীরাও তার ব্যতিক্রম হতে পারেন না। শিক্ষা প্রশাসন তথা সরকার তথা শাসক দল তথা তার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের উপর চাপ সৃষ্টির প্রয়োজন বিপুল, তার যৌক্তিকতাও গণতন্ত্রের এক অপরিহার্য অঙ্গ। প্রশাসন এবং তার রাজনৈতিক চালকরা যখন তাঁদের ন্যূনতম দায়িত্ব পালনেও অক্ষম বা অনিচ্ছুক, শিক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা সমস্ত ব্যাপারে ‘মুখ্যমন্ত্রী’ জপ করে নিজেদের দায় এড়াতে তৎপর, তখন চাপ সৃষ্টির প্রয়োজন আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু ঠিক সেই কারণেই আন্দোলনকারী বা প্রতিবাদীদের সতর্ক থাকা দরকার, গণতান্ত্রিক চাপ যেন নিছক বলপ্রয়োগের প্রকরণে পরিণত না হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই যেন প্রতিবাদের লক্ষ্য হয়ে না দাঁড়ায়। বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীদের আচরণে তেমন আশঙ্কা মাঝে মাঝেই প্রকট হয়ে উঠছে। তাঁদের ন্যায্য দাবিকে কাজে লাগিয়ে সঙ্কীর্ণ ও নীতিবহির্ভূত দলীয় রাজনীতি জল ঘোলা করতে তৎপর হলে শেষ অবধি সেই ন্যায্যতাই ব্যাহত হবে।

কিন্তু তার সহস্রগুণ বেশি দায়িত্ব প্রশাসনের নায়কনায়িকাদের। কর্মপ্রার্থীদের ন্যায্য দাবি পূরণের দায়িত্ব নয়, শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অনাচারের পর্বতপ্রমাণ জঞ্জাল সাফ করে শিক্ষার পরিসরে ন্যায় এবং সুস্থিতি ফেরাতে সর্বপ্রকারে যত্নবান ও তৎপর হওয়ার দায়িত্ব। জঞ্জাল সৃষ্টির দায় সম্পূর্ণত তাঁদের উপরেই বর্তায়, কিন্তু আজও সেই সত্যটি তাঁরা স্বীকার করতে নারাজ। তদুপরি, প্রতিকার এবং সংশোধনের কাজটিতেও প্রয়োজনীয় আন্তরিকতা এবং উদ্যমের এক শতাংশও তাঁদের আচরণে এ পর্যন্ত দেখা যায়নি, আদালতে বারংবার তীব্র ভর্ৎসনা এবং হুঁশিয়ারি শোনার পরেও নয়। উল্টে ‘মামলাবাজ’ বিরোধীদের উপরেই নিজেদের সমস্ত অপরাধ এবং অপদার্থতার বোঝাটি চাপিয়ে দেওয়ার লজ্জাকর অপচেষ্টা এখনও অব্যাহত। আন্দোলনকারীদের প্রতি যে ব্যবহার, পুলিশবাহিনীর এতখানি ধরপাকড়, দুই পক্ষের সংঘর্ষ-অশান্তি— তারও যে অনেকটাই অকারণ, এ হয়তো নেতানেত্রী নিজেরাও জানেন। এমন একটি প্রেক্ষাপটেই শিক্ষা প্রশাসনের আধিকারিকরা অম্লানবদনে জানিয়ে দিলেন, ২০২২ সালের নিয়োগ তাঁরা এখনই শুরু করতে পারছেন না এবং ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীদের এই মহাজ্ঞান বিতরণ করলেন যে, “মনে রাখতে হবে, টেট পাশ করা মানেই চাকরি নয়।” বটেই তো!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Case Protest Teachers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।