নামিবিয়ার সরকার আটটি চিতা ভারতকে উপহার দিল।
নামিবিয়ার সরকার আটটি চিতা ভারতকে উপহার দিল। দুর্জনে প্রশ্ন করতে পারে যে, সাত দশক পরে দেশের জঙ্গলে চিতা ছাড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনটিকেই বেছে নেওয়া হল কেন? প্রশ্নটি অবশ্য নিতান্তই আলঙ্কারিক, কারণ ভারতবাসীমাত্রেই জানেন যে, প্রচারের যাবতীয় আলোকে নির্দ্বিধায় নিজের দিকে টেনে আনতে প্রধানমন্ত্রী অতি দক্ষ। আইএনএস বিক্রান্তের সমুদ্রযাত্রাই হোক বা জঙ্গলে চিতা ছেড়ে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর বার্তাটি পাল্টায় না— তিনি ছিলেন বলেই রচিত হল ইতিহাস। নামিবিয়ার চিতা তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারতে পৌঁছলেও সেই প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল এক যুগেরও বেশি আগে, ইউপিএ আমলে, এই কথাটি নরেন্দ্র মোদী বেমালুম চেপে গিয়েছেন। তিনি ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফারসম সাজপোশাক করে, ডিএসএলআর ক্যামেরা বাগিয়ে ভারতের জঙ্গলে চিতার পুনরভিষেক ঘটালেন, এবং ইতিহাস রচনার কৃতিত্ব দাবি করলেন। গোটা দেশ মেতে উঠল উৎসবে, অথবা তরজায়— যেন চিতার অভাবের তুল্য আর কোনও সমস্যা ভারতের দিগন্তরেখায় ছিলই না। যেন দেশে মূল্যবৃদ্ধি নেই, বেকারত্ব মুছে গিয়েছে বেবাক, যেন কোনও দলিত নির্যাতিত হয় না আর, যেন জেল থেকে ছাড়া পায়নি বিলকিস বানোর ধর্ষকরা। প্রধানমন্ত্রী চিতাকে বেছে নিলেন তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রে। দেশ তাঁকে অনুসরণ করল।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মোদী-ম্যাজিক বলে যদি কিছু থাকে, তবে তা এই— সম্পূর্ণ অবান্তর কোনও বিষয়কে জাতীয় চর্চার প্রতিপাদ্য বানিয়ে তোলার ক্ষমতা। এবং আরও আশ্চর্যের, ভারতের আলোচনা আর সেই বিষয়ের গভীরেও প্রবেশ করে না। চিতার ক্ষেত্রেই যেমন প্রধানমন্ত্রী বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ইত্যাদির কথা বলেছেন। বন্যপ্রাণ ও বাস্তুতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা ঘোর সন্দিহান যে, বিদেশ থেকে কয়েকটি চিতা আমদানি করে আদৌ কোনও লাভ হবে কি না। তার কারণ বহুবিধ। যে অভয়ারণ্যে চিতা ছাড়া হয়েছে, তার মাপ চিতার স্বাভাবিক চারণভূমির তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম, ফলে সেখানে বংশবিস্তারের বিশেষ সম্ভাবনা নেই বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। তার চেয়েও বড় কথা হল, চিতা আমদানির দেখনদারিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে অধিকতর প্রয়োজনীয় কাজগুলিকে অবহেলা করা হবে বলেই তাঁদের আশঙ্কা। অর্থাৎ, আফ্রিকা থেকে চিতা আনার সিদ্ধান্তটি ইউপিএ-র ভুল ছিল, নরেন্দ্র মোদী তাকে মহাসমারোহে আপন করে নিলেন।
স্বভাবতই, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ-হেন খুঁটিনাটি কখনও বিবেচ্য হয়ে ওঠেনি। তিনি নোট বাতিলের ভয়াবহতার কথা না ভেবেই তাকে দেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারেন, আর এ তো সামান্য কয়েকটি চিতা। ইতিহাসে নিজের নাম লিখে যাওয়ার উদগ্র তাগিদ তাঁকে তাড়না করে ফেরে। তার জন্য তিনি কখনও ঐতিহ্যমণ্ডিত রাজপথের নাম পাল্টে করে দেন কর্তব্যপথ, কখনও আবার ‘মধ্যরাত্রির অভিসার’-এর ইতিহাসটিকে দখল করতে অহেতুক রাত বারোটায় জিএসটি-র উদ্বোধন করেন। কেউ ভাবতে পারেন, কেন। হয়তো এই কারণেই যে, ভারতের ইতিহাস এখনও কোনও গৈরিক জাতীয়তাবাদীকে কোনও ইতিবাচক কারণে মনে রাখেনি। হয়তো সেই খামতি পূরণ করার তাগিদটিই প্রধানমন্ত্রীকে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের পথে ঠেলে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy