Advertisement
E-Paper

পরিবেশ প্রসঙ্গ

পৃথক ভাবে উল্লেখ করিয়াছেন নির্মাণ-বর্জ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণের কথা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১১
Share
Save

কেন্দ্রীয় বাজেটে পরিবেশ দূষণের উল্লেখ ও তাহার প্রতিকারের সন্ধান নূতন নহে। প্রতি বৎসরই সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন দাওয়াইয়ের প্রসঙ্গ উঠে, ব্যয় বরাদ্দও হইয়া থাকে। ২০২১-২২ আর্থিক বৎসরের কেন্দ্রীয় বাজেটেও তাহা উপস্থিত। ইহার মধ্যে কিছু পরিকল্পনার উল্লেখ ইতিবাচক এবং ক্রমবর্ধমান দূষণের প্রেক্ষিতে জরুরিও বটে। যেমন, নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করিলেন, দেশের ৪৩৭৮টি পুরসভার ২.৮৬ কোটি ট্যাপ-সংযুক্ত বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের কথা। গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। পানীয় জলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের সমীক্ষা এক ভয়াবহ চিত্র তুলিয়া ধরিতেছে। রিপোর্টে প্রকাশ, ১৯৫১ সালে যেখানে বৎসরে মাথাপিছু পরিস্রুত জলের পরিমাণ ছিল ৫১৭৭ কিউবিক মিটার, ২০১৯ সালে তাহা কমিয়া দাঁড়াইয়াছে ১৩৬৮ কিউবিক মিটারে। দেশের বেশ কিছু স্থানে ভূ-গর্ভস্থ জলে আর্সেনিক-ফ্লোরাইড দূষণও মাত্রা ছাড়াইতেছে। আশা, পানীয় জলের সরবরাহ বৃদ্ধি সেই দূষণের হাত হইতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে মুক্ত করিবে। বাজেটে গুরুত্ব পাইয়াছে বায়ুদূষণও। অর্থমন্ত্রী শুধুমাত্র ‘ক্লিন এয়ার’ প্রকল্পেই ২২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। পৃথক ভাবে উল্লেখ করিয়াছেন নির্মাণ-বর্জ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণের কথা। ২০ বৎসরের পুরাতন ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ১৫ বৎসরের পুরাতন বাণিজ্যিক গাড়ি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাশ না করিলে তাহা বাতিল করিবারও কথা বলিয়াছেন। ‘স্বচ্ছ ভারত, সুস্থ ভারত’ প্রকল্পের অধীনে তরল নিকাশি-বর্জ্য পরিশোধন, উৎস হইতে জঞ্জাল পৃথকীকরণ এবং এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাইবার প্রস্তাব করা হইয়াছে, যাহা পরোক্ষে গঙ্গাদূষণ রোধে কার্যকর প্রমাণিত হইতে পারে। সর্বোপরি, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দের সঙ্গে পানীয় জল ও নিকাশি মন্ত্রকের বরাদ্দকে জুড়িয়া স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হইয়াছে। অর্থাৎ, দূষণের সঙ্গে স্বাস্থ্য যে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কযুক্ত, তাহারও স্বীকৃতি জুটিল।

পরিবেশ লইয়া এই ভাবনা স্বাগত। কিন্তু সন্তুষ্ট হইবার অবকাশ নাই। বেশ কিছু ফাঁক এখনও রহিয়া গেল। লক্ষণীয়, অর্থমন্ত্রী পরিবেশ লইয়া, জল লইয়া যাহা বলিয়াছেন, তাহা অশ্রুতপূর্ব নহে। পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ, এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ— উভয়ই বহু আলোচিত। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ যথানিয়মে চলিতেছে, বিভিন্ন স্থানে পানীয় জলের হাহাকারও পূর্ণমাত্রায় বজায় আছে। প্রতি বৎসরই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যয়বরাদ্দ হয়, দূষণ কমে না। কোভিড-কালে বায়ুদূষণ যে আরও বহু সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির কারণ হইতে পারে, তাহা জানিবার পরেও না। দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে ৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হইয়াছে, তাহাও ‘জাতীয় স্বচ্ছ বায়ু প্রকল্প’-এর অধীন ১২২টি শহরের প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নহে। এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত পরিকল্পনার ন্যায় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমিয়াছে বলিয়া বিশেষজ্ঞদের মত। সুতরাং, মূল প্রশ্ন সদিচ্ছার, চিত্তাকর্ষক ঘোষণার নহে। সর্বোপরি, দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি লওয়া প্রয়োজন। বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর পদক্ষেপ করা হইলে সামগ্রিক ভাবে দূষণ কমিবে না। তাহার জন্য সম্ভাব্য দূষণের প্রতিটি ক্ষেত্রকে এক ছাতার নীচে আনিয়া সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করিতে হইবে। তাহাতেই পরিবেশ বাঁচিবে, দেশও।

Nirmala Sitharaman Pure drinking water union budget 2021

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}