Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Digital Divide

বিরাট অন্যায়

‘ডিজিটাল ভারত’-এর রূঢ় বাস্তব ইহাই যে, বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বিশেষত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ইন্টারনেট পরিষেবা হইতে এখনও বঞ্চিত।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৯
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশের দলিত ছাত্র প্রিন্স জয়বীর সিংহ বম্বে আইআইটি-তে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তির ফি জমা করিতে পারেন নাই। শুধুমাত্র এই কারণে তাঁহার আইআইটি-তে পড়িবার সম্ভাবনাটি বিনষ্ট হইলে বিরাট অন্যায় হইবে— এমনই অভিমত জানাইল সুপ্রিম কোর্ট। জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষায় সংরক্ষিত বিভাগে জয়বীরের স্থান ৮৬৪। সেই সূত্রে আইআইটি বম্বের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় পড়িবার সুযোগ মিলিয়াছিল। কিন্তু অর্থের অপ্রতুলতা এবং পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তিগত গোলযোগের কারণে টাকা জমা দিবার শেষ তারিখটি পার হইয়া যায়। কর্তৃপক্ষের তরফে এই বিষয়ে সাহায্য মিলে নাই। নিরুপায় জয়বীর আদালতের দ্বারস্থ হইয়াছিলেন। ইহার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে অতিরিক্ত আসন তৈরি করিয়া জয়বীরকে ভর্তির নির্দেশ দিয়াছে।

প্রশ্ন উঠিতে পারে, এক জন ছাত্রের ভর্তি লইয়া দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে হইল কেন? ইহার উত্তরে ভারতের সংরক্ষণ আইনটির কথা স্মরণ করাইতে হয়। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, সামাজিক, এবং শিক্ষাগত দিক হইতে যে কোনও অনগ্রসর শ্রেণির উন্নতিকল্পে বিশেষ সুবিধার বন্দোবস্তটি রাষ্ট্রকে করিতে হইবে। এই আইনের পশ্চাতে দীর্ঘ বঞ্চনা এবং অবহেলার ইতিহাস পর্যালোচনায় না গিয়াও বলা যায়, অনগ্রসর শ্রেণির শিক্ষার্থী যোগ্যতার সমস্ত মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হইলে সে যাহাতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করিতে পারে, সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সেই চেষ্টা করা উচিত। এই ক্ষেত্রে সেই উদ্যোগ দেখা যায় নাই। দ্বিতীয়ত, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা ছাত্রটির প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সময়ে ফি জমা করিতে না পারিবার যুক্তিটি উড়াইয়া দিবার নহে। ‘ডিজিটাল ভারত’-এর রূঢ় বাস্তব ইহাই যে, বিস্তীর্ণ অঞ্চল, বিশেষত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ইন্টারনেট পরিষেবা হইতে এখনও বঞ্চিত। যেখানে ইন্টারনেট পৌঁছাইয়াছে, সেখানেও তাহা অত্যন্ত শ্লথ গতির। দৈনন্দিন কাজকর্মের উপযুক্ত নহে। এই সমস্যা বোঝা গিয়াছে অতিমারি কালে শিক্ষাক্ষেত্রে। ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ কথাটির উদ্ভব অকারণে হয় নাই। সুপ্রিম কোর্টও এই কারণে বলিয়াছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনগ্রসর সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা যাহাতে ইন্টারনেট বা ব্যাঙ্কিং পরিষেবা হইতে বঞ্চিত না হয়, তাহা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব, অন্যথায় আইআইটি শুধুমাত্র শহরের পড়ুয়াদের গন্তব্য হইয়া উঠিবে। দুর্ভাগ্য, কেন্দ্রীয় সরকার এত দিনেও সেই দায়িত্বটি ঠিকমতো পালন করিয়া উঠিতে পারে নাই।

সুতরাং, জয়বীরের ক্ষেত্রে তাঁহার সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা, এবং ফি প্রদানের অনলাইন মাধ্যম— এই দুইটি বিষয়ই উপেক্ষিত হইয়াছে। সেই কারণেই বিষয়টির গুরুত্ব সমধিক। তবে, ইহার পরও একটি সংশয়ের জায়গা থাকিয়া যায়— কোনও ছাত্রকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কী ভাবে ভর্তি করা হইবে, অতিরিক্ত আসনের ব্যবস্থা করিয়া, না কি অন্য কোনও উপায়ে, তাহার নির্দেশ কি বিচার বিভাগ দিতে পারে? তাহা কি একান্ত ভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিদ্ধান্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় নহে? প্রতিষ্ঠানের নিয়ম দেশের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেই আইন এবং কর্তব্যের কথাটি স্মরণ করাইয়া দেওয়াই যথেষ্ট। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনের অধিকারটি লঙ্ঘিত হয়। গণতান্ত্রিক দেশে সেইরূপ না হওয়াই কাম্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Digital Divide Supreme Court of India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy