Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

ক্ষুধার হার

রেশনে বিনামূল্যে চাল বিতরণ যথেষ্ট নহে। সার্বিক পুষ্টির ব্যবস্থা হইবে কী প্রকারে, জানাইতে হইবে কেন্দ্রকে।

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৫:২৯
Share
Save

উটপাখিকেও লজ্জিত করিল ভারত সরকার। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের যে চিত্র ফুটিয়াছে, তাহা দেখিয়া চক্ষু বুজিয়া থাকা সহজ নহে। অপুষ্ট ও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যার নিরিখে ভারতের স্থান আজ পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ বিবিধ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পশ্চাতে— ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম স্থানে। এই মূল্যায়নে ভারত সরকারের লজ্জিত এবং অনুতপ্ত হইবার কথা ছিল। অতিমারি সকল দেশের জীবন ও অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করিয়াছে, কিন্তু বহু দেশের সরকার খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইতে দেয় নাই। ভারতে অপুষ্টি বাড়িয়াছে। এই বিপুল ব্যর্থতার নিরসনে কেন্দ্র লজ্জিত হইবে, তাহার প্রতিকারে উদ্যোগী হইবে, গণতান্ত্রিক দেশে তাহাই প্রত্যাশিত। কিন্তু ভারতে গণতন্ত্র যেন ভোটপর্বেই সীমাবদ্ধ রহিয়াছে, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা অবধি অগ্রসর হয় নাই। তাই ফের বিভ্রান্তির ধূম দিয়া সত্যকে আচ্ছাদিত করিবার চেষ্টা শুরু হইয়াছে। মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে আপত্তি উঠিয়াছে যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংক্রান্ত সংস্থাটি (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজ়েশন) সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সূচক প্রস্তুত করিয়াছে। এই পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য নহে। সরকারের দাবিটি ভ্রান্ত। সূচক নির্মাণ করা হইয়াছে খাদ্য উৎপাদন, ক্রয় এবং অপুষ্টির বিবিধ সরকারি তথ্য-পরিসংখ্যান ব্যবহার করিয়া। খাদ্য নিরাপত্তা-সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা বুঝিতে জনসাধারণের মধ্যে সমীক্ষা হইয়াছে, কিন্তু সূচক প্রস্তুত করিতে তাহার ফল ব্যবহার করা হয় নাই। এক দশকের অধিক সময় ধরিয়া বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশ হইতেছে, তাহার পদ্ধতি লইয়া ভারত সরকার কখনও প্রশ্ন করে নাই। আজ কেন আপত্তি উঠিল? তাহার ফলটি কটু বলিয়াই কি?

কেন্দ্রের এই মনোভাবটি পরিচিত। নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা, কর্মহীনতা, শিশু-অপুষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে যখনই বিরূপ ফল প্রকাশ পাইয়াছে, তখনই কেন্দ্রীয় সরকার সমীক্ষার ফলে সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছে। সরকারি রিপোর্ট প্রকাশ হইতে দেয় নাই, আন্তর্জাতিক রিপোর্টকে জনসমক্ষে খারিজ করিয়াছে। অথচ, গত কয়েক বৎসরে প্রকাশিত বিবিধ জাতীয় সমীক্ষায় যে সকল ইঙ্গিত মিলিয়াছে, তাহাতে ক্ষুধার বৃদ্ধিকে কোনও ক্রমেই ‘অস্বাভাবিক’ বলিয়া মনে হয় না। পঞ্চম জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা দেখাইয়াছে, গত পাঁচ বৎসরে শিশু অপুষ্টি কমে নাই, বরং বাড়িয়াছে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় প্রকাশ, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের জন্য নাগরিক পূর্বের চাহিতে কম ব্যয় করিতেছেন। বিভিন্ন বেসরকারি সমীক্ষায় প্রকাশ, বেকারত্ব বাড়িয়াছে এবং মজুরি কমিয়াছে। মহিলাদের কর্মহীনতা মাত্রা ছাড়াইয়াছে। অতিমারি কালে কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে নামিয়াছেন। কোভিড কালে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও স্কুলগুলি বন্ধ থাকিবার জন্য শিশুরা পুষ্টিকর আহার পায় নাই। তৎসহ জ্বালানির দাম বাড়িবার ফলে খাদ্য-সহ সকল অত্যাবশ্যক দ্রব্যের দাম দ্রুত বাড়িয়াছে। ফলে যথেষ্ট খাদ্য কিনিবার সামর্থ্য নাই বহু পরিবারের।

এই পরিস্থিতিতে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি মানুষের বিপন্নতা কমাইতে পারিত। কিন্তু গত পাঁচ বৎসরে শিশুপুষ্টি-সহ বিবিধ সামাজিক সুরক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ ক্রমাগত কমাইয়াছে কেন্দ্র। শাক দিয়া মাছ ঢাকিবার মতো, শিশুপুষ্টি প্রকল্পগুলির হিসাব অন্যান্য প্রকল্পের সহিত জুড়িয়া সেই কৃপণতা গোপনের চেষ্টা করিয়াছে। অতিমারি তাহার বজ্রমুষ্টি আলগা করিতে পারে নাই। রাজ্যগুলিও খাদ্য নিরাপত্তাকে কেবল চাল-গম বিতরণে সীমাবদ্ধ করিয়াছে। অপুষ্টি বাড়িবে, তাহাতে আশ্চর্য কী? বৃথা বিতর্ক না তুলিয়া ক্ষুধা নিরসনের কর্তব্যটি পালন করা প্রয়োজন। রেশনে বিনামূল্যে চাল বিতরণ যথেষ্ট নহে। সার্বিক পুষ্টির ব্যবস্থা হইবে কী প্রকারে, জানাইতে হইবে কেন্দ্রকে। নাগরিকের পুষ্টির ব্যবস্থা না করিতে পারিবার লজ্জা কিছুতেই ঢাকিবার নহে।

Global Hunger Index

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।