Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
Roads

রাস্তাদখল

রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা যেমন রাস্তাকে সঙ্কীর্ণ করে পথ-দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে, ঠিক তেমনই এর দূষণ সৃষ্টিকারী ভূমিকাটিও উপেক্ষা করার নয়।

roads.

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৩
Share: Save:

যে  কোনও সুপরিকল্পিত শহরে বড় রাস্তার সংলগ্ন সার্ভিস রোডটির ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ট্র্যাফিক-পূর্ণ, অতি দ্রুতগতিসম্পন্ন রাজপথটির পাশাপাশি থেকে মসৃণ ভাবে ও নিরাপদে মানুষকে নিকটস্থ নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি সে করে চলে। বিশেষত নিত্য যানজট এড়িয়ে সাইকেল, মোটর বাইক ও পথচারীদের অনায়াস যাতায়াতের কাজে এই রাস্তার উপযোগিতা উল্লেখযোগ্য। কলকাতা অবশ্য এ ক্ষেত্রে খানিক ব্যতিক্রম। এখানে বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশের সার্ভিস রোডগুলি ক্ষমতাশালীদের দাপটে আপাতত সিন্ডিকেটের গুদামে পরিণত। সেখানে রাতের অন্ধকারে একের পর এক ট্রাক এসে অবাধে জমা করে যায় টন টন বালি, পাথরকুচি। সকাল হতেই সেই সামগ্রী রওনা দেয় নির্দিষ্ট নির্মাণস্থলে। কোনও ক্ষেত্রে আবার সেই সরু রাস্তাতেই গড়ে উঠেছে অটো বা ট্রাকের স্ট্যান্ড। ফলে ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে তা সাধারণ মানুষের চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা যেমন রাস্তাকে সঙ্কীর্ণ করে পথ-দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে, ঠিক তেমনই এর দূষণ সৃষ্টিকারী ভূমিকাটিও উপেক্ষা করার নয়। প্রায় প্রতি বছর শীতের মুখে দিল্লির মারাত্মক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আপ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলির অন্যতম— নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য দিল্লি এবং সংলগ্ন অঞ্চলের সমস্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা। কারণ, বাৎসরিক এই দূষণের কারণ হিসাবে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে কৃষকদের ফসলের গোড়া পোড়ানোর প্রসঙ্গটি বহু আলোচিত হলেও বাস্তবে দেখা গিয়েছে, সেই বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি তীব্র এবং প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তারকারী দু’টি অনুঘটক হল গাড়ির ধোঁয়া এবং নির্মাণ বর্জ্য। বছর তিনেক আগে সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর এক রিপোর্ট জানিয়েছিল, ভারতের শহরগুলিতে নির্মাণ এবং ধ্বংসকার্যের কারণে যত পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার মাত্র এক শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। অর্থাৎ, বাকি অংশ বিনা ব্যবস্থাপনায় স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থেকে বাতাসে বিপজ্জনক কণার পরিমাণ বৃদ্ধি করে, নয়তো জলে ধুয়ে পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে মিশে জলদূষণ ঘটায়। কলকাতার বাগুইআটি, রাজারহাটের বিভিন্ন রাস্তার পাশে ফেলে রাখা নির্মাণ সামগ্রী ঘিরেও সেই দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। সেখানে হাওয়া দিলেই রাস্তার ধারের বাড়ি ও ফ্ল্যাট ভরে উঠছে ধুলোবালিতে, নর্দমায় তা জমা হয়ে নিকাশিতে বাধার সৃষ্টি করছে।

এই অন্যায় বন্ধ করবে কে? যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অধিকাংশের মাথাতেই শাসক দলের কল্যাণহস্তটি প্রসারিত। ফলে, নিজস্ব এলাকায় নির্মাণকাজ-সহ বহু বেআইনি কাজের অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে উঠলেও শাস্তি হয় না। সুতরাং, প্রশাসনের তৈরি করে দেওয়া রাস্তা, যার ব্যবহার নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে, গুদামের খরচ বাঁচাতে তাকেও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলতে এঁরা দ্বিধাবোধ করেন না। সার্ভিস রোডের এ-হেন চরিত্র বদলে নাকি আপত্তি রয়েছে পূর্ত দফতরেরও। তারা পুলিশের কাছে সময় চেয়েছে অভিযান চালিয়ে এই জবরদখল সরিয়ে দেওয়ার। অভিজ্ঞতা বলে, সেই সময় আসতে এখনও ঢের দেরি। কবে অভিযান চলবে, তার উত্তর সম্ভবত দফতরের কাছেও মিলবে না। তত দিন রাস্তা দখল চলছে, চলবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy