কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, মাওবাদী হামলা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো গিয়েছে। প্রতীকী ছবি।
এগারো জন নিহত হয়েছেন মাওবাদী বিস্ফোরণের ঘায়ে, দন্তেওয়াড়ার সংবাদ। অনেক দিন পর এমন শোক-সংবাদ এল, অনেকখানি ভয় জাগিয়ে। যাঁরা নিহত, সকলেই নিরাপত্তাকর্মী, এক জন গাড়িচালক-সহ। অকারণে এতগুলি প্রাণ নিয়ে কার কী উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল জানা নেই, কেবল এইটুকু জানা যে, মাওবাদী বিশ্বদর্শনে এমন নির্দোষ ব্যক্তিদের মারা হয় কেবল তাঁরা চাকরিসূত্রে রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বলেই। রাষ্ট্র বনাম মাওবাদী সংঘর্ষের ফলে এই প্রাণবলি যে কোনও মূল্যে কমানো দরকার। কেউ বলতে পারেন, যে দুঃ-ঘটনা আগে নিয়মিত ছিল, তা যদি দুই বছর পর এক বার ঘটে, তা হলে সেই সংবাদকে ঘোর দুঃসংবাদ বলা যায় কি না। উত্তর একটিই। দু’বছর বা পাঁচ বছর পরে হলেও, এক জনও নির্দোষ নাগরিকের হত্যার দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে, এবং রাষ্ট্রকেই সমস্ত রকম উপায় কাজে লাগিয়ে যে কোনও প্রকারে এই নির্বিচার হত্যালীলা বন্ধ করতে হবে। ‘বন্ধ’ মানে একশো শতাংশ বন্ধ— কোনও ভগ্নাংশ ন্যূনতাও এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, মাওবাদী হামলা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো গিয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকায় জেলাসংখ্যা এই শতাব্দীর প্রথম দশকে দু’শোর উপরে ছিল, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯০-তে, এবং সন্ত্রাস ঘটে থাকে মাত্র ৪৫টি জেলাতেই। অন্ধ্রপ্রদেশে নাকি এমন জেলার সংখ্যা আপাতত শূন্যে এসে ঠেকেছে। তেলঙ্গানা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারেও বিপন্ন জেলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যখনই এ ধরনের হিসাব দেয়, বেশ একটি প্রসন্নতার উদ্ভাস তার মধ্যে টের পাওয়া যায়। ছত্তীসগঢ় একাই কিন্তু এই প্রসন্নতালোক-টিকে নিবিয়ে দিতে সক্ষম। গত কয়েক বছরে সংখ্যায় আক্রমণ কম হলেও আক্রমণের জোর কমেছে বলা যাবে না। নিহত নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা ২০১৮ সালে ৫৫ জন, ২০১৯-এ ২২, ২০২০ সালে ৩৬, ২০২১ সালে ৪৫ এবং ২০২২-এ ১০। প্রসঙ্গত মাঝে দুই বছর লকডাউন-কেন্দ্রিক সঙ্কটকাল কেটেছে, যখন মাওবাদীরা নিজেরাও বিশেষ অভাবক্লিষ্ট ও যোগাযোগরহিত থাকতে বাধ্য হয়েছে। বর্ষার আগে আক্রমণের জোর বাড়ানোর যে চিরাচরিত প্রথা রয়েছে, এ বারের হানাও তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সুতরাং, মাওবাদী সঙ্কটকে নির্মূল করা গিয়েছে ভেবে মন্ত্রকের মহিমাপ্রচার খানিকটা অর্থহীন।
আক্রমণের উৎসসন্ধান বুঝিয়ে দেয়, মাওবাদী হামলা কমার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই মুহূর্তে ছত্তীসগঢ়ের হাসদেও জঙ্গলে কয়লাখনি-সংক্রান্ত স্থানীয় ক্ষোভ তুঙ্গে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাওবাদীদের প্রতি সমর্থনও বিরাট— যা বুঝিয়ে দেয় কোথা থেকে রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে এত ঘৃণা জমা হয়। গণতান্ত্রিক পথে সেই ঘৃণা প্রকাশের পথটি না নিয়ে বিকৃত ভাবে তার প্রকাশ অবশ্যই ঘোর নিন্দনীয়— এই হত্যা-রাজনীতি মনুষ্যত্বের অবমাননা। কিন্তু তার সঙ্গে এও ঠিক যে, সরকারকে বুঝতে হবে, ক্ষমতার উন্নাসিকতায় উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থানীয় মানুষের মতামত তৈরির চেষ্টাকে বাদ দিয়ে চলা আখেরে কতটা বিপজ্জনক। বর্তমান সরকার যেন এ বিষয়ে পূর্বাপেক্ষাও অসংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির ঘোলা জলকে আরও কর্দমাক্ত করা হচ্ছে। এই ভাবে মূল সমস্যার সমাধান তো হবেই না, বরং পরিস্থিতি আরও অনেক জটিল হয়ে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy