Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Strand Road

আগুন লইয়া খেলা

হয়তো কিছু আধিকারিক শাস্তি পাইবেন, কিছু ব্যবস্থা পরিবর্তনের সুপারিশ হইবে।

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৭
Share: Save:

জতুগৃহ প্রস্তুত ছিল, অগ্নিনির্বাপণের আয়োজনে ছিল প্রস্তুতির অভাব। তাই নয়টি প্রাণ গেল। কোনও বেসরকারি বাজার কিংবা দফতর নহে, এই প্রাণহানি ঘটিয়াছে রেলের দফতরে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্য, কেহই অগ্নিনিরাপত্তার একান্ত আবশ্যক দায়িত্বটুকু পালন করে নাই। রেল তাহার দফতরটিকে মৃত্যুফাঁদ করিয়া রাখিয়াছিল, দমকল বিভাগ সে দিকে নজরও দেয় নাই। আজ নয়টি মৃত্যুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাহারা পরস্পরকে দোষারোপ করিতেছে। এমন নির্লজ্জতা দেখিয়া রাজ্যবাসীর মৃত্যুশোক ছাপাইয়া উঠিতেছে ক্ষোভ। তবে কি জীবন্ত মানুষের অগ্নিদগ্ধ হইবার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারকেই স্পর্শ করে না? স্টিফেন কোর্ট, আমরি হাসপাতাল, নন্দলাল মার্কেট, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল— একের পর এক ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়াছে কলিকাতায়, আর তাহার পরে রাজ্যবাসী শুনিয়াছে অসার আশ্বাস। প্রতি বার জানানো হইয়াছে, বহুতল এবং বৃহৎ দফতর, বাণিজ্যিক ভবনগুলিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নজরদারি হইবে; বিধি না মানিলে জরিমানা হইবে; দমকলের তৎপরতা বাড়াইতে উন্নত প্রযুক্তি, কার্যকর পদ্ধতি আনা হইবে। পরবর্তী বৃহৎ অগ্নিকাণ্ড দেখাইয়া দিয়াছে, এ সকল অঙ্গীকারের কোনওটিই পালিত হয় নাই। দুর্নীতি এবং অব্যবস্থার কবল হইতে দমকল দফতরটি মুক্তি পায় নাই। বস্তুত, নিউ কয়লাঘাটের রেল ভবনটি সম্পর্কে যে সকল তথ্য জানা গিয়াছে, এবং তাহাতে অগ্নিকাণ্ডের মোকাবিলায় দমকল যাহা করিয়াছে, সেগুলি একত্র করিয়া একটি তালিকা প্রকাশ করা যায়। শিরোনাম: ‘কী করা উচিত নহে’। রেল ভবনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নাই, ভবনের নকশা নিরুদ্দেশ, অপরিকল্পিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, অবিন্যস্ত এবং বিপজ্জনক বিদ্যুতের তারসংযোগ— একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের কি এমনই ছবি হইবার কথা?

একই প্রশ্নের মুখোমুখি হইতে হইবে দমকল দফতর তথা রাজ্য সরকারকে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য উচ্চক্ষমতাশীল যন্ত্র, এবং উপযুক্ত পোশাক, মুখোশ প্রভৃতি সুরক্ষা-সরঞ্জাম অপরিহার্য। সেগুলির অভাব ইতিপূর্বে নানা অগ্নিকাণ্ডে অনুভূত হইয়াছে। এ বার সেগুলির অভাব পুনরায় স্পষ্ট হইল। উপরন্তু প্রশ্ন উঠিল কর্মীদের প্রশিক্ষণ লইয়া। অপরকে বাঁচাইবার উপযুক্ত নির্দেশ দিবে দমকল ও পুলিশ, এমনই প্রত্যাশিত। এই বাহিনীর কর্মীরাই লিফটে উঠিবার মতো নিয়মবিরুদ্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ কেন করিলেন? দমকলমন্ত্রী এই প্রশ্নকে ‘অহেতুক বিতর্ক’ বলিয়া এড়াইয়াছেন। তাঁহার এই মনোভাব বড়ই বিস্ময়কর। যে কোনও পরিস্থিতিতে কিছু নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি (‘প্রোটোকল’) থাকে। আপৎকালীন সিদ্ধান্ত লইবারও রূপরেখা রহিয়াছে, তাহা হঠকারী পদক্ষেপ হইতে পারে না। অগ্নিকবলিত চৌদ্দ তলায় লিফটে উঠিবার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর। সংবাদে প্রকাশ, নিহতদের তিন জন অস্থায়ী কর্মী, তাঁহাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ হয় নাই। অর্থাৎ, দমকল দফতরের কর্মী নিয়োগ এবং মানবসম্পদ প্রস্তুতির পরিকাঠামোতেও গলদ থাকিতে পারে। যাঁহারা অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় প্রস্তুত নহেন, তাঁহাদের আগুনের মুখে পাঠানো হইয়াছে, তাহার সম্ভাবনা যথেষ্ট। আগুন লইয়া খেলিবার কী মর্মান্তিক উদাহরণ।

আপাতত তদন্ত শুরু হইয়াছে। হয়তো কিছু আধিকারিক শাস্তি পাইবেন, কিছু ব্যবস্থা পরিবর্তনের সুপারিশ হইবে। তাহাতে সান্ত্বনা মিলিবে কি? নাগরিকের প্রতি তাচ্ছিল্য ও উপেক্ষার যে ভাবটি সরকারি ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়া আছে, তাহাই প্রকাশ পাইয়াছে দমকলের বিধিপালনের অনীহায়। নজরদারি হইতে নির্বাপণ, সকল বিষয়েই দমকল দফতর অনিয়মকেই নিয়ম করিয়াছে। ইহা কেবল অদক্ষতা বা আলস্য নহে। ইহা অমানবিকতা। অগ্নিদগ্ধের অন্তিম নিশ্বাসও সেই কৃষ্ণগহ্বর শুষিয়া লয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Deaths Fire Accident Strand Road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy