জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, একটি শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ দেশ নির্মাণে সুরক্ষিত মানবাধিকার, সক্ষম নাগরিক সমাজ এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব কতটা, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি সে কথা তাঁকে বলেছেন। সাধু। তবে কিনা, প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাংবাদিকদের খবরটি জানিয়েছেন দিল্লিতে নয়, হ্যানয়ে। জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি কী বলেছেন, তা প্রচারমাধ্যমকে জানানোর জন্য কেন তাঁকে ভিয়েতনামে অবতরণ অবধি অপেক্ষা করতে হল? দিল্লিতে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাননি বলে? প্রশ্নটা সহজ। সাংবাদিকদের খোলামেলা প্রশ্নের জবাব দিতে নরেন্দ্র মোদীর দুর্মর অনীহার কথা ভূভারতে সর্বজনবিদিত। বিরূপ সমালোচনা বা অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে তাঁর প্রবল আপত্তি আজকের ব্যাপার নয়। জো বাইডেন বা অন্য অতিথিরাও হয়তো সেই আপত্তি তথা অনীহার শিকার।
মুক্ত, স্বাধীনচেতা, প্রশ্নবাচী সংবাদমাধ্যমের সামনে রাষ্ট্রক্ষমতার ধারক ও বাহকদের অস্বস্তি কেবল সঙ্গত নয়, কার্যত অনিবার্য। সাংবাদিকের ভূমিকা অতন্দ্র প্রহরীর। সরকারি কর্তা ও কর্মীরা তাঁদের কর্তব্য যথাযথ ভাবে সম্পাদন করছেন কি না, সে দিকে কঠোর ও তীক্ষ্ণ নজর রাখা এবং কোনও বিষয়ে ক্ষমতাবানদের আচরণে বিচ্যুতি ঘটলে তার স্বরূপ উদ্ঘাটন করাই ‘ফোর্থ এস্টেট’-এর স্বধর্ম। সংবাদমাধ্যম যাতে তার এই প্রাথমিক কাজটি স্বাধীন এবং নির্ভীক ভাবে সম্পাদন করতে পারে, তা নিশ্চিত করাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তার গণতান্ত্রিকতার অন্যতম প্রধান শর্ত। গণতন্ত্রের প্রতি যে রাষ্ট্রনায়কের প্রকৃত শ্রদ্ধা আছে, তিনি কেবল সাংবাদিকদের স্বাধীন ভাবে কাজ করার অধিকার রক্ষা করে ক্ষান্ত হবেন না, সেই অধিকার প্রয়োগে তাঁদের উৎসাহিত করবেন। সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাকে বাধা না দিয়েই তাঁর দায় মিটবে না, সংবাদমাধ্যম যাতে সমালোচনা করে তার অনুকূল ক্ষেত্র
প্রস্তুত রাখবেন, এমনকি তাঁদের সমালোচনা করার আহ্বান জানাবেন। লোকদেখানো নয়, আন্তরিক আহ্বান। যদি সমালোচনা ভুল হয়, বা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, রাষ্ট্র অবশ্যই তার তথ্য ও যুক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করবে, প্রয়োজনে আইনানুগ প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে, কিন্তু কোনও ভাবেই আইনের অপপ্রয়োগ করবে না। এরই নাম গণতন্ত্র।
বাস্তব এর সম্পূর্ণ বিপরীত। গত এক দশকে ভারতে সাংবাদিকের স্বাধীনতা ক্রমাগত আক্রান্ত, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে এ দেশের স্থান ক্রমশই অধোগামী। এক দিকে প্রশ্নবাচী সাংবাদিকদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অন্য দিকে শাসকের অনুগামী বা ধ্বজাধারী প্রচারকদের লজ্জাকর আত্মসমর্পণ— উভয়তই সংবাদমাধ্যমের ঘোর দুর্দিন। সাংবাদিকরা শাসকদের অপদার্থতা, অন্যায় এবং দুর্নীতির সত্য উদ্ঘাটনে তৎপর হলেই তাঁদের উপরে প্রশাসনিক আক্রমণ নেমে আসছে, কখনও আইনের ভয়াবহ অপব্যবহার করে, কখনও উর্দিধারী বা উর্দিহীন বাহিনীগুলিকে কাজে লাগিয়ে। নির্ভীক সাংবাদিকতা নয়, ভয়ার্ত সংবাদমাধ্যমই শাসকদের কাঙ্ক্ষিত। কেবল কেন্দ্র নয়, বিভিন্ন রাজ্যের শাসকরাও সেই ভয়ের দুঃশাসন কায়েম করতে তৎপর। বলা বাহুল্য, প্রতিবাদ বা সমালোচনার যথাযথ প্রত্যুত্তর দেওয়ার সৎসাহস থাকলে এই আচরণের প্রয়োজন হত না, দল ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত দুরাচারীদের কঠোর শাস্তি দিয়ে আত্মশুদ্ধির ইচ্ছা এবং সামর্থ্য থাকলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের মুখ বন্ধ করতে লেঠেল বা পেয়াদা পাঠাতে হত না। শাসক সত্যকারের গণতান্ত্রিক হয়ে উঠতে পারলে সাংবাদিককে ডেকে বলতেন: প্রশ্ন করুন, সত্য উন্মোচন করুন, অনাচার উদ্ঘাটন করুন, রাষ্ট্র আপনার পাশে আছে। অবাস্তব, অলীক, অসার কল্পনাবিলাস? হক কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy