Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Union Budget 2023

পুরনো ব্যাধি

ছোঁয়াচে রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য যা বরাদ্দ, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে তার অর্ধেকেরও কম টাকা বরাদ্দ হয়েছে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবিটিসের মতো অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য।

Picture of Nirmala Sitharaman.

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৭
Share: Save:

কেন্দ্রের বাজেটে স্বাস্থ্যের অবস্থান এ বার কেমন, এক কথায় তার উত্তর— যথা পূর্বম্। বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন বটে, কিন্তু মূল্যস্ফীতির হিসাব কষলে বস্তুত সেই বাড়তি এসে দাঁড়াবে ঘাটতিতে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে (২০১৭) স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি-র অন্তত আড়াই শতাংশ করার যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, সে লক্ষ্যে এ বছরও পৌঁছনো গেল না। কোভিড অতিমারির মোকাবিলার তাগিদে জিডিপি-র ২ শতাংশের চৌকাঠ পেরিয়েছিল স্বাস্থ্য, এ বারেও দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই। নতুন লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী— ২০৪৭ সালের মধ্যে সিকল সেল অ্যানিমিয়া নির্মূল করা হবে। সিকল সেল অ্যানিমিয়ার প্রকোপ ভারতে জনজাতিদের মধ্যে বেশি, তাই সামাজিক ন্যায়ের নিরিখে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হয়। তবে এর আগে যে সব রোগ নির্মূল করার লক্ষ্য গ্রহণ করেছিল কেন্দ্র, তার অনেক লক্ষ্যই অধরা থেকেছে। সিকল সেল অ্যানিমিয়া নির্মূল করার কর্মসূচিকে রাখা হয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে, যার চল্লিশ শতাংশ ব্যয় বহন করে রাজ্য। ফলে রাজ্যগুলির অংশীদারি জরুরি। উপরন্তু, এই রোগটি নির্মূল করার লক্ষ্য ‘মিশন’ হিসাবে ঘোষণা করলেও, আগামী অর্থবর্ষে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। এমন অস্পষ্টতা কেন্দ্রের বাজেটে অনেক। যেমন, অর্থমন্ত্রী ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং’ খাতে বরাদ্দ ১৩৭ শতাংশ বাড়ানোর কথা যে ঘোষণা করেছেন, তাতে ধরা হয়েছে স্বাস্থ্য, মেডিক্যাল রিসার্চ, পানীয় জল, শৌচনিকাশিও। এতে বিভ্রান্তিই বাড়ে।

এ দেশে রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য খরচের ক্ষেত্রে সরকারের অংশ অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি একত্রে জিডিপি-র ১ শতাংশের সামান্য বেশি খরচ করে, চিন যেখানে ৩ শতাংশ, তাইল্যান্ড আড়াই শতাংশের বেশি। মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফার শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটেও দরিদ্রের উপর চিকিৎসার ব্যয়ভার চাপানোর প্রবণতা থেকে সরে আসার লক্ষণ দেখা গেল না। চিন্তা বাড়াচ্ছে বাজেটের এই তথ্য যে, ২০২২-২৩ সালে নির্দিষ্ট ভাবে স্বাস্থ্য দফতরের জন্য যত বরাদ্দ হয়েছিল, তত খরচ হয়নি। সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামোর সর্বাঙ্গে অভাব প্রকট হওয়া সত্ত্বেও টাকা খরচ হয়নি, এই তথ্য চিকিৎসা ব্যবস্থার স্বাস্থ্য সম্পর্কেই প্রশ্ন তোলে।

দূরদর্শিতার অভাব প্রকট অন্যত্রও— ছোঁয়াচে রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য যা বরাদ্দ, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে তার অর্ধেকেরও কম টাকা বরাদ্দ হয়েছে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবিটিসের মতো অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য। ‌অথচ, অসংক্রামক রোগে অসুস্থ ব্যক্তিদের ভাগ আজ মোট অসুস্থদের অর্ধেকেরও বেশি। তেমনই, শহরের জনস্বাস্থ্য ও প্রাথমিক চিকিৎসার পরিকাঠামো দুর্বল হয়ে রয়েছে, যদিও দেশে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন শহরবাসী। এই বাজেটেও বিষয়টি অবহেলিত। সুখবর বলতে দেড়শো নার্সিং কলেজ খোলার ঘোষণা, মেডিক্যাল গবেষণায় বাড়তি বরাদ্দ। ভারতের হাসপাতালে নার্সের অভাব বহু দিনের, গবেষণাতেও চলছে ভাটার টান। যথেষ্ট প্রশিক্ষিত কর্মী, গবেষণা চিকিৎসার ঘাটতি মেটাতে পারে, যদি টাকার অঙ্ক বাজেট-নথিতে সীমিত না থাকে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy