Advertisement
E-Paper

সঞ্চয়েও বৈষম্য

কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে মহিলাদের সুযোগ সীমিত। মাত্র তিন শতাংশ মহিলা কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

যে সমাজ যত বেশি লিঙ্গভূমিকা-নির্ভর, সেই সমাজে এই বৈষম্যের হারও তত বেশি হওয়া স্বাভাবিক।

যে সমাজ যত বেশি লিঙ্গভূমিকা-নির্ভর, সেই সমাজে এই বৈষম্যের হারও তত বেশি হওয়া স্বাভাবিক। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৬
Share
Save

অবসরের সময় পুরুষেরা যে পরিমাণ সম্পদ সঞ্চয় করেন, তার মাত্র ৭৪ শতাংশ করে থাকেন মহিলা কর্মীরা— এ বছরের ডব্লি‌উটিডব্লিউ গ্লোবাল জেন্ডার ওয়েলথ ইকুইটি রিপোর্টে পাওয়া গেল তথ্যটি। এই ফারাকের অন্যতম কারণ হিসাবে পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের বেতনের ব্যবধান ও কেরিয়ারে বিলম্বকে গণ্য করা হচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেখানে মহিলারা পুরুষদের সম্পদ সঞ্চয়ের ৯০ শতাংশ সঞ্চয় করে থাকেন, সেখানে ভারতে মহিলারা করেন মাত্র ৩৬ শতাংশ। এর একটি কারণ পুরুষ-মহিলা কর্মীদের বেতনের ব্যবধান, যা বিশেষ করে দেখা যায় পেশাদারি এবং প্রযুক্তিগত ভূমিকার ক্ষেত্রে। অন্য কারণটি, কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে মহিলাদের সুযোগ সীমিত। মাত্র তিন শতাংশ মহিলা কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

বিশ্ব জুড়েই মহিলাদের কাছে বেতনের এই ব্যবধান হল কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির অন্যতম। এবং এই ব্যবধান কেরিয়ারে অগ্রগতির সঙ্গে বাড়তে থাকে। এর একটি কারণ, কর্মক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কম সংখ্যক মহিলা কর্মীর উপস্থিতি। যেমন, কোনও প্রযুক্তি সংস্থায় যেখানে মহিলাদের অনেক বেশি প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট, ফিনান্স বা হিউম্যান রিসোর্স-এর কাজ করতে দেখা যায়, সেখানে পুরুষেরা আরও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেমন কনসাল্টিং, ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফিল্ড সেলস-এ চাকরি করেন। সংস্থার লাভ-ক্ষতিকে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে, এমন ভূমিকা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মীর ভূমিকা যত দূরে থাকে, তত বাড়ে বেতন বৈষম্য। কেরিয়ারের প্রাথমিক স্তরে পুরুষ ও মহিলা একই পর্যায় থেকে শুরু করলেও আট-দশ বছর পরে এই ব্যবধান বাড়তে থাকে মহিলাদের বিয়ে, মাতৃত্বকালীন ছুটি কিংবা সাংসারিক দায়িত্বের কারণে। পুরুষরা যেখানে অনেক সময় নির্ধারিত কাজের সময়ের থেকে বেশি সময় ধরে অফিসের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন, সেখানে নানাবিধ পারিবারিক চাপ এক জন মহিলাকে বিরত রাখে। মাতৃত্ব যে মহিলা কর্মচারীদের বেতনকে প্রভাবিত করে, তার প্রমাণ মেলে অর্গানাইজ়েশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর তথ্য থেকে, যার সমীক্ষা বলে যে, বিশ্ব জুড়ে মাতৃত্বের খেসারত হিসেবে প্রতি সন্তানপিছু মেয়েদের সাত শতাংশ আয় কমে যায়। ঠিক উল্টো ছবি পুরুষদের ক্ষেত্রে। এমন কিছু নিদর্শনও মেলে, যেখানে সন্তান সংখ্যার সঙ্গে পুরুষদের মজুরির এক ইতিবাচক সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায়। আর এই ‘পিছিয়ে পড়া’ই আগামী দিনে অবসর পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে মহিলা কর্মীদের ক্ষেত্রে।

অর্থাৎ, সামাজিক বা পারিবারিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য মহিলাদের বঞ্চিত করে, আপাতদৃষ্টিতে তার বাইরে থাকা কর্মক্ষেত্র, এমনকি অতি আধুনিক বিশ্বায়িত কর্পোরেট দুনিয়াতেও তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে। যে সমাজ যত বেশি লিঙ্গভূমিকা-নির্ভর, সেই সমাজে এই বৈষম্যের হারও ততই বেশি হওয়া স্বাভাবিক। নারীর ক্ষমতায়নের লড়াই লড়তে হবে সব যুদ্ধক্ষেত্রেই, কিন্তু পরিবার ও সমাজের অভ্যন্তরের লড়াইটির গুরুত্ব অপরিসীম। নয়তো, কাচের ছাদে আটকে যাওয়াই মহিলাদের ভবিতব্য হয়ে থাকবে।

Society Discrimination Workplace Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy