—প্রতীকী ছবি।
গত কয়েক বছরে দেশে ডিজিটাল লেনদেন যত বেড়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে জালিয়াতিও। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র বার্ষিক রিপোর্টে মিলেছে তেমনই ইঙ্গিত। সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে কার্ড তথা ইন্টারনেট মিলিয়ে ২০২২-২৩ সালে সাড়ে ছ’হাজারেরও বেশি লেনদেন প্রতারণা হয়েছে, অর্থমূল্যে যা প্রায় ২৭৬ কোটি টাকা। আগের বছরই প্রতারণার সংখ্যাটি ছিল অর্ধেকের সামান্য বেশি। ফলে, ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল জালিয়াতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে। যার জেরে বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ করতে হচ্ছে তাদের। যেমন, অনলাইন প্রতারণা রুখতে কিছু কাল আগে সত্তর লক্ষ মোবাইল সংযোগ বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে প্রতারকদের হাত থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি তাদের। কিন্তু দেশের ডিজিটাল লেনদেনের পরিকাঠামোটি যে এখনও পাকাপোক্ত নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ইউকো ব্যাঙ্কের কিছু অ্যাকাউন্টে ভুল করে ৮২০ কোটি টাকার হস্তান্তর তারই প্রমাণ। ঘটনাটি প্রযুক্তিগত গোলমালের জেরে হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, ডিজিটাল প্রতারণার বিষয়টিও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে প্রতারণা ঠেকাতে নিত্যনতুন পথ বাতলাতে হচ্ছে সরকারকে। সম্প্রতি এক শীর্ষস্থানীয় বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়েছে, দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রথম বার ২০০০ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের লেনদেন হলে তাতে চার ঘণ্টার ব্যবধান রাখা হবে। কোনও প্রকার জালিয়াতি হলে ওই চার ঘণ্টার মধ্যে লেনদেনটি বাতিল করা হবে। কিন্তু প্রতারকরাও যে ভাবে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতারণার নিত্যনতুন ফন্দিফিকির বার করছে, তাতে সরকারের এ-হেন পদক্ষেপগুলি আখেরে কাজে আসবে কি না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সরকারকে প্রতারণার এই বিষয়টিকে সামাল দিতে হবে বিভিন্ন স্তর থেকে। যেমন, ব্যাঙ্ক পরিষেবায় বৈদ্যুতিন লেনদেন বাড়াতে তার খরচ কমানো এবং পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপরে জোর দেওয়া প্রয়োজন। বাড়াতে হবে সাইবার সুরক্ষাও। সময়ে সময়ে এই প্রক্রিয়ায় কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারির পাশাপাশি সেগুলির মানোন্নয়নও জরুরি। প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়লে ব্যাঙ্কগুলিকে দ্রুত সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক, যা ইতিবাচক পদক্ষেপ বটে। তা ছাড়া, অনলাইন জালিয়াতির বিষয়ে নাগরিককে সচেতন করার উদ্যোগ ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। এই সচেতনতা-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের সাধুবাদ প্রাপ্য হলেও প্রশ্ন থেকেই যায়— এই উদ্যোগটুকু যথেষ্ট কি? সচেতনতার পাঠ সত্ত্বেও যাঁরা হয়তো নিজেদের ভুলেই প্রতারিত হবেন, তাঁদের কি সেই ভুলের মাসুল গোনা ভিন্ন কোনও উপায়ান্তর থাকবে না? অন্য দিকে, গ্রাহকের ভান্ডার থেকে তথ্যচুরির পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য চুরি যায়। সমীক্ষা বলছে, কৃত্রিম মেধা ও অটোমেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তথ্য তছরুপের প্রবণতা ঠেকাতে। কিন্তু এই প্রযুক্তির প্রয়োগ ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ার দরুন অধিকাংশ সংস্থাই তা এড়িয়ে চলে, যার মাসুল শেষ পর্যন্ত গুনতে হয় গ্রাহককে। এই সব ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা সরকারের কর্তব্য। বাজারব্যবস্থায় গোটা দেশকে যখন ডিজিটাল লেনদেনের আবহে ঠেলে দিতে আগ্রহী তারা, তখন গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষার দায়িত্বটিও এড়াতে পারে না সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy