—প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষায় নকল করার অভ্যাসটি সাম্প্রতিক নয়। দীর্ঘ কালই এক শ্রেণির পরীক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা বৈতরণি পার করার চেষ্টা করেছে। তারা জীবন গঠনের বৃহত্তর উদ্দেশ্যটিতে আস্থা না রেখে তাৎক্ষণিক সাফল্যকেই মোক্ষ ধরেছে। তবে শতাংশের বিচারে সেই ভাবনাধারীরা এত কাল ছিল নগণ্যই। বরং ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি এবং পরবর্তী শিক্ষাজীবনে স্থায়ী দাগ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সংখ্যাগরিষ্ঠরা এই পথ থেকে সচেতন ভাবে নিজেকে বিরত রাখত। কিন্তু বর্তমান সময়টি কিছু অন্য রকম। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫০টিরও বেশি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন যে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নকল করার প্রবণতা বাড়ছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যাধিক্য এবং নজরদারের অপ্রতুলতা তো বটেই, এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়াও অন্যতম বড় সমস্যা।
কোনও পরীক্ষায় এক বড় সংখ্যক পরীক্ষার্থী নকলের সঙ্গে যুক্ত থাকলে পরীক্ষাটি কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়। পূর্বে পরীক্ষা পরিচালনা-সহ শিক্ষাব্যবস্থার এক সুনির্দিষ্ট ছন্দ ছিল। টোকাটুকি রোখার এক কার্যকর পদ্ধতি এবং অসৎ পরীক্ষার্থীদের কড়া শাস্তির বিধান ছিল। এখন সেই ছন্দপতনের চিহ্ন স্পষ্ট। শিক্ষকের অপ্রতুলতা শুধুমাত্র বিদ্যালয়েই নয়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও ঘোর বাস্তব। এই কারণে শিক্ষাদানের কাজটি যথাযথ সম্পন্ন হয় না এবং প্রায়শই অ-প্রস্তুত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসে ফাঁকেতালে উতরে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থায়ী শিক্ষকদের অপ্রতুলতার কারণে নজরদারির দায়িত্বও পড়ে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের উপর। সামান্য বেতনভোগী অস্থায়ী এই শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অনুচিত নয়। অন্য দিকে, আগে যে কাজটি চলত গোপনে, প্রহরারত শিক্ষকদের নজর এড়িয়ে, এখন অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রকাশ্য। নকল করতে গিয়ে ধৃত পরীক্ষার্থীর হাতে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনাও ক্রমশ বাড়ছে। নকল কেন করতে দেওয়া হয়নি— সেই দাবিতে অসন্তুষ্ট পরীক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ঘেরাও করেছে, এমন ঘটনাও দুর্লভ নয়। এই বছরেই বোর্ড পরীক্ষায় কড়াকড়ি আগের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় উত্তরপ্রদেশে তিন লক্ষের অধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিল।
নকল করা এখন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং, শিক্ষাব্যবস্থার সর্ব স্তরে যে এই প্রবণতা লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা পরিকাঠামোর অসুখের দিকে ইঙ্গিত করে। সারা বছর শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠন সুষ্ঠু ভাবে হলে নকলের প্রয়োজন পড়ে না। সেটা যে হয় না, নকলের বৃদ্ধি তারই অন্যতম প্রমাণ। উত্তর খুঁজতে হবে এই প্রশ্নেরও, কেন এক শ্রেণির পরীক্ষার্থীর মধ্যে নকল করার অপরাধে শাস্তি পাওয়ার ভয়টুকুও থাকছে না? এই বিশ্লেষণ না করলে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রযুক্তির প্রবেশ আটকানো সম্ভব হলেও টোকাটুকির প্রবণতা কমবে না। সমাজতত্ত্ববিদদের একাংশ নকল বৃদ্ধির পিছনে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন। সমাজে সর্ব স্তরে দুর্নীতি বাড়ছে, অসাধুতা ‘স্বাভাবিকতা’য় পরিণত হচ্ছে। এমতাবস্থায় পরীক্ষার্থীদেরও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। নকল করা বৃদ্ধির যাবতীয় দায় পরীক্ষার্থীদের অসৎ মানসিকতার উপর চাপিয়ে দেওয়ার পূর্বে তাই আয়নায় নিজেদের দেখে নেওয়া ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy