Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
MSME Sector

ক্ষুদ্রের শক্তি

নোটবন্দি এবং অতিমারি বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল এই সংস্থাগুলির উপর, যার ধাক্কা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি তারা। এরই মাঝে ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা সমস্যা বাড়িয়েছে এই ক্ষেত্রের।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩১
Share: Save:

দেশের অর্থনীতির ‘অক্সিজেন’ বলেই ধরা হয় অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পক্ষেত্রকে (এমএসএমই)। ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি)-এর প্রায় ৩০ শতাংশ এই ক্ষেত্র থেকে আসে এবং মোট রফতানির ৪৫ শতাংশের বেশি ভার বহন করে এই সংস্থাগুলি। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এমএসএমই-র গুরুত্ব অপরিসীম। সেই কথা মাথায় রেখেই চলতি অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে এই ক্ষেত্রের উপরে বিশেষ জোর দিতে দেখা গেল কেন্দ্রকে। যেমন, উৎপাদন প্রকল্পের জন্য নয়া ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রকল্পের কথা ঘোষিত হয়েছে। কারখানার যন্ত্রাংশ কেনার মেয়াদি ঋণ পেতে সাহায্য করবে এই প্রকল্প। এর জন্য বন্ধক রাখা বা ‘থার্ড পার্টি গ্যারান্টি’র প্রয়োজন হবে না। অন্য দিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বাইরের সংস্থা বা উপদেষ্টার উপরে নির্ভর না করে এ বার নিজেরাই এমএসএমই-র ঋণযোগ্যতা নির্ধারণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করবে। এ ছাড়া, বাজেটে ‘তরুণ’ ঋণগ্রহীতাদের জন্য শর্তসাপেক্ষে ‘মুদ্রা’ ঋণের পরিমাণ বর্তমানের ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। যে সব উদ্যোগপতি তাঁদের আগের ঋণ পরিশোধ করেছেন, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তাঁদের আরও বড় অঙ্কের ঋণ পেতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্যই এই ব্যবস্থা।

নোটবন্দি এবং অতিমারি বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল এই সংস্থাগুলির উপর, যার ধাক্কা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি তারা। এরই মাঝে ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা সমস্যা বাড়িয়েছে এই ক্ষেত্রের। যার ফলে মূলধনের জোগানের মতো বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত থেকেছে এমএসএমইগুলি। সমীক্ষা বলছে, মোট এমএসএমই-র ৯৯ শতাংশই হল ক্ষুদ্র শিল্প, ছোট শিল্প ০.৫ শতাংশ আর মাঝারি শিল্প ০.০১ শতাংশ। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, এই শিল্পক্ষেত্রের সিংহভাগ শ্রমিক কেন্দ্রীভূত রয়েছে ক্ষুদ্র শিল্পে, যাঁদের ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে সীমিত বিবিধ কারণে। যেমন, সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র শিল্পসংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য পেতে অসুবিধা হয় মূলত তাদের বন্ধক রাখার অক্ষমতা এবং ঋণ পরিশোধ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির অবিশ্বাসের কারণে। তা ছাড়া অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর ফলে প্রভাবিত হয় এদের উৎপাদনও। শুধু তা-ই নয়, যে সংস্থাগুলি উন্নত প্রযুক্তির সুযোগসুবিধা নিতে পারে, তারা বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায়। অথচ, আর্থিক দুর্বলতার কারণে ক্ষুদ্র সংস্থাগুলি পিছনে পড়ে থাকে। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবও অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে।

মূল সমস্যায় নজর না দিয়ে মূলত প্রশাসনিক সুবিধা এবং আর্থিক পরিষেবা প্রদানের সুযোগের উপরে ভিত্তি করেই সরকারি তরফে নির্ধারিত হয় নীতি। ফলে, যাদের এ-হেন নীতির সুফল পাওয়া জরুরি, তারাই শেষ পর্যন্ত থেকে যায় বঞ্চিত। এমতাবস্থায়, সাম্প্রতিক বাজেটে ঘোষিত নয়া ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রকল্প কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির নিজস্ব ঋণযোগ্যতা নির্ধারণের ব্যবস্থা কতখানি কাজে আসবে? দেশে কর্মসংস্থানের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে বুঝতে বাধ্য হয়েছেন কেন্দ্রের শাসকরা। তার পরও যদি কর্মসংস্থানের অন্যতম ক্ষেত্রটিকে নিয়ে নিছক কথার খেলা চলতে থাকে, তা অতি দুঃখের।

অন্য বিষয়গুলি:

MSME Sector Union Budget 2024 Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy