ফাইল চিত্র।
ছোটদের দাবি বড় হইয়া উঠিতেছে। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করিতে হইবে দেশকে। আপৎকালীন ব্যবস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যসূচি— এই দুইয়েরই পরিকল্পনা দ্রুত প্রস্তুত করিতে হইবে। আশার কথা, এই একটি বিষয়ে বিরোধীদের কথায় কেন্দ্র কর্ণপাত করিয়াছে, এমন ইঙ্গিত মিলিয়াছে। কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী অতিমারিতে অভিভাবকহীন, অনাথ শিশুদের শিক্ষা, সুরক্ষা এবং সহায়তার প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখিয়াছিলেন। পর দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সকল রাজ্যের প্রতি এই বিষয়ে নির্দেশ জারি করিয়াছে। বিশেষত অনাথ শিশুরা যাহাতে অপরাধচক্রের শিকার না হয়, জেলায় জেলায় তাহার ব্যবস্থা করিবার নির্দেশ দিয়াছে। ইহা সুলক্ষণ। দীর্ঘ দিন বিরোধীদের সকল পরামর্শ, প্রস্তাব ও প্রশ্ন উপেক্ষা করিয়াছে কেন্দ্র। অন্তত শিশুদের প্রশ্নে যে সেই অবজ্ঞা দেখায় নাই, তাহা মন্দের ভাল। তবে অতিমারিতে শিশুসুরক্ষার জন্য কেন্দ্রের প্রথম এবং সর্বপ্রধান কাজ, কোভিড অতিমারির তৃতীয় ঢেউ হইতে শিশুর প্রাণরক্ষার উপায় নির্ধারণ। বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করিয়াছেন, বয়স্করা প্রতিষেধক পাইবার পরে শিশুরাই করোনাভাইরাসের সহজ লক্ষ্য হইয়া উঠিবে। এই আশঙ্কার জন্যই পাশ্চাত্যের কিছু দেশ বারো বৎসরের ঊর্ধ্বে শিশুদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করিয়াছে। ভারতে টিকার আকাল চলিতেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ করিতেই হয়রান হইতেছে রাজ্যগুলি। তাই নাবালকদের সুরক্ষা লইয়া ভয় ঘনাইতেছে।
মুম্বই এই বিষয়ে উদ্যোগী হইয়াছে। আক্রান্ত শিশুদের জন্য পুরসভা শহরে চারটি বৃহৎ ‘কোভিড কেয়ার ইউনিট’ প্রস্তুত করিয়াছে, টাস্ক ফোর্স গঠন করিয়াছে, এবং পরামর্শদাতা হিসাবে রাখিয়াছে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের। তবে কি এই পথই অনুসরণ করিতে হইবে? এ কথা জানাইবার কথা কেন্দ্রের, কিন্তু কেন্দ্র এখনও নীরব। তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার কোনও পরিকল্পনাই কেন্দ্র গ্রহণ করে নাই, এ কথা ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতে কবুল করিয়াছে কেন্দ্র। কিন্তু শিশুদের প্রাণসঙ্কট দেখা দিলে কী রূপে নির্বাচিত সরকার নীরব থাকিতে পারে? শিশুদের কোভিডমুক্তির জন্য কী পরিকাঠামো তৈরি করিতে হইবে, কোন কর্মপদ্ধতি মানিবে গ্রাম ও শহরের স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকরা, তাহার রূপরেখা অবিলম্বে প্রকাশ করা প্রয়োজন।
একই সঙ্গে প্রশাসন এবং নাগরিক সমাজকে পরম যত্নশীল হইয়া অতিমারি-বিপর্যস্ত জনপদগুলির শিশুদের সুরক্ষিত করিতে হইবে। প্রথম কর্তব্য, অভিভাবকের মৃত্যুর কারণকে সরকারি সহায়তার শর্ত হইতে না দেওয়া। গ্রাম ও শহরে কোভিড-আক্রান্তদের অধিকাংশেরই রোগ নির্ণয়ের সুযোগ ঘটে নাই। অতএব অকারণ জটিলতা না করিয়া, সকল অভিভাবকহীন শিশুকে চিহ্নিত করিতে হইবে। এই কাজে গ্রামসভা, পঞ্চায়েত, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সহায়তা কার্যকর হইতে পারে। শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিটি সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার নজরদারি এবং নথিভুক্তি করিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। দ্বিতীয় কাজ, এই সকল শিশুর শিক্ষা এবং অন্যান্য সকল চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা। এই কাজটিও সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের উপর ছাড়িলে চলিবে না— এই বিপুল সামাজিক বিপর্যয়ের সুদূরপ্রসারী প্রভাব মোকাবিলার আর্থিক সংস্থান রাজ্যগুলির নাই। এখনই তাহাদের ছাত্রাবাস, অনাথাশ্রম অপ্রতুল, সেগুলি দুর্দশাগ্রস্ত ও দুর্নীতিপূর্ণ। তদুপরি অপরাধচক্র সর্বদাই বিপন্ন শিশু ও নারীদের শোষণ করিতে সক্রিয়, তাহার মোকাবিলাও রাজ্যকেই করিতে হইবে। অতএব কেন্দ্রকেও পরিকাঠামো, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং অর্থ লইয়া শিশুকল্যাণের বিপুল কর্মযজ্ঞে যোগ দিতে হইবে। এই সেই সময়, যখন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রকৃত মুখ দেখিবে দেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy