Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Bihar

বিপজ্জনক কুটিরশিল্প

শুধু বিহারের চোলাই মদ প্রস্তুতকারকদের অদক্ষতার প্রমাণ নয়, কিছু দিন আগে অবধি পশ্চিমবঙ্গেও নিয়মিত বিষমদ পানে মৃত্যুর সংবাদ মিলত।

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যাই দাবি করুন না কেন, মদের উপর নিষেধাজ্ঞা বিহারে মদ্যপানের প্রবণতা বন্ধ করতে পারেনি।

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যাই দাবি করুন না কেন, মদের উপর নিষেধাজ্ঞা বিহারে মদ্যপানের প্রবণতা বন্ধ করতে পারেনি। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:১৯
Share: Save:

আরও এক বার বিষমদে মৃত্যু ঘটল বিহারে। সারণ জেলায় প্রাণ হারালেন সত্তরেরও বেশি মানুষ। বিষমদে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, শুধু ২০২২ সালেই অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার যাই দাবি করুন না কেন, মদের উপর নিষেধাজ্ঞা বিহারে মদ্যপানের প্রবণতা বন্ধ করতে পারেনি। যে কোনও নিষেধাজ্ঞাতেই যা হয়, বিহারে মদের ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনা ঘটেছে— কালোবাজার ফুলেফেঁপে উঠেছে। অভিজ্ঞ জনেরা বলেন যে, যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাঁরা কালোবাজার থেকে দামি বিলেতি মদ কেনেন; আর যাঁদের সেই সাধ্য নেই, তাঁরা চোলাই পান করেন। চোলাই মদ প্রস্তুত করার কোনও নির্দেশিকা নেই, কোনও প্রশিক্ষণও নেই— তা এক ‘বিপজ্জনক কুটিরশিল্প’, সামান্য ভুলেই যে মদ প্রাণঘাতী বিষ হয়ে উঠতে পারে। বিহারে বারে বারেই তাই ঘটছে। অবশ্য, তা শুধু বিহারের চোলাই মদ প্রস্তুতকারকদের অদক্ষতার প্রমাণ নয়, কিছু দিন আগে অবধি পশ্চিমবঙ্গেও নিয়মিত বিষমদ পানে মৃত্যুর সংবাদ মিলত। সমস্যা হল, কলমের এক খোঁচায় কোনও পণ্যের খোলা বাজারটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া যত সহজ, কালোবাজার বন্ধ করা ঠিক ততখানিই কঠিন। বিহারেও নীতীশ কুমার কথাটি বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন। অন্য দিকে, খোলা বাজারে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজস্ব খাতেও বিপুল ক্ষতি হচ্ছে বিহারের। একটি সাম্প্রতিক অনুমান হল, এই খাতে বছরে ১০,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব লোকসান হচ্ছে রাজ্যটির। বিহারের আর্থিক পরিস্থিতি, এবং উন্নয়নখাতে বিপুল খামতির কথা মাথায় রাখলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, সত্যিই কি মদ নিষিদ্ধ করার বিলাসিতা করা বিহারের পক্ষে সম্ভব? মদ নিষিদ্ধ করায় রাজ্যের যতখানি ‘লাভ’ হচ্ছে, উন্নয়নখাতে বাড়তি ১০,০০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলে লাভের পরিমাণ তার তুলনায় বেশি হত না কি?

অর্থশাস্ত্রের যুক্তির সঙ্গে রাজনীতির বিরোধ প্রসিদ্ধ। মদ নিষিদ্ধ করা একটি উদাহরণমাত্র— যাবতীয় যুক্তিকে বিসর্জন দিয়ে এমন কাজ রাজনীতিকরা করেই থাকেন। নীতীশ কুমার মহিলা ভোটারদের কথা মাথায় রেখেছেন। কিন্তু, তিনি একই সঙ্গে অনেকগুলি কথা ভুলেছেন— নিষেধাজ্ঞার অনিবার্য ব্যর্থতার কথা, রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্যের কথা, প্রশাসনের দায়িত্বের কথাও। নাগরিককে মদের নেশায় জড়িয়ে পড়তে উৎসাহ দেওয়া কোনও সুস্থ প্রশাসনের কাজ নয়, এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু, উদারনৈতিক গণতন্ত্রে সরকারের জেঠামশাই হয়ে ওঠাও কাজের কথা নয়। সাবালক নাগরিক সব দিক ভেবে স্বেচ্ছায় কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, এটাই কাম্য— নাগরিক কী করতে পারেন, আর কোনটি তাঁকে করতে দেওয়া হবে না, সরকার বেত হাতে সে কথা ঠিক করে দিতে পারে না। মদ্যপানের কুফল বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির অধিকার সরকারের অবশ্যই আছে। কেউ মদ খেয়ে বাড়িতে হিংসাত্মক কাজ করলে তাকে দেশের আইন অনুসারে শাস্তিও দিতে হবে। এমনকি, মদ্যপ স্বামীর হাতে না দিয়ে সরাসরি স্ত্রীদের হাতে বিবিধ আর্থিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার নীতিটিও ইতিমধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত— বিহার সরকারও চাইলে সে পথে হাঁটতেই পারে। কিন্তু, তার কোনওটাই না করে মদ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া আসলে প্রশাসনিক শর্ট কাট, প্রকৃত দায়িত্ব পালনে অপারগতার পরিচয়। পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতিকর মদ্যপানের প্রবণতা পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট হওয়ার বদলে নীতীশ কুমার নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটলেন। ভারতীয় রাজনীতি অবশ্য এই ভুলটি করেই থাকে— ভোটের বাড়া তাগিদ নেই। বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়া সব সময়ই বিপজ্জনক, নীতীশ কুমারের পক্ষেও পাঁচ বছরের পুরনো নীতির ভুল স্বীকার করে পথ পাল্টানো কঠিন হচ্ছে। তবে, তাঁর উদাহরণটি ভারতীয় রাজনীতির হ্যান্ডবুকে ঠাঁই পেতে পারে— কোন কাজটি করতে নেই, তার উদাহরণ হিসাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bihar Hooch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy