শব্দবাজি।
চোরকে চুরি করতে, এবং গৃহস্থকে ঘর সামলাতে বলার পরিচিত রীতিই বহাল রইল এই দীপাবলিতে। শব্দবাজি ব্যবসায়ীরা অবাধে ব্যবসা করলেন, দূষণমোদীরা ফুর্তি করলেন, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবারও কর্মতৎপরতার নজির পেশ করল। নিট ফল— এ বছর কালীপুজোর আগের দিন থেকেই শব্দবাজির যেমন তাণ্ডব দেখা গেল, আগের বছর তেমনটা দেখা যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, জাতীয় পরিবেশ আদালত— সমস্ত প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নির্দেশ বন্দি রইল খাতায়-কলমে, শব্দের প্রকোপ রইল অব্যাহত। সবুজ বাজি, অর্থাৎ পরিবেশ-বান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত বাজি ছাড়া অন্যান্য বাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে রাজ্য সরকার। তা সত্ত্বেও শব্দবাজির দাপট কমেনি, তা কলকাতা-সহ রাজ্যের সব বড় শহর এবং সংলগ্ন শহরতলিতে ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বৈধ বাজি বাজারকে অতিক্রম করে নিষিদ্ধ বাজি পুজোর আগের কয়েক দিন খোলাখুলি বিক্রি হয়েছে শহরের ব্যস্ততম বাজারগুলিতে, ফুটপাতে, তার ছবি বা খবর প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম। সংবাদে প্রকাশ, বিক্রেতারা দাবি করেছেন যে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ‘কথা’ হয়েই আছে। রাজ্য দূষণ পর্ষদের রিপোর্ট দেখলে এ দাবি সহজে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ বছর পুজোর মরসুমেই ছ’হাজার কিলোগ্রাম বাজি উদ্ধার হয়েছে। কালীপুজোর রাতে বিধিভঙ্গের জন্য গ্রেফতার হয়েছে ৪৮০ জন। পুলিশ একে তৎপরতার নিদর্শন বলে দাবি করছে। কিন্তু সরকারি ধরপাকড় সত্ত্বেও দূষণকারী বাজির দাপট কমেনি কেন?
বছরের পর বছর এই প্রহসন চলছে। পরিবেশ আন্দোলনকারীদের একাংশের অভিযোগ, ‘সবুজ বাজি’ চালু রাখার সিদ্ধান্ত কার্যত খাল কেটে কুমির আনা। কোন বাজি বিধিসম্মত, কোনটা অবৈধ, তা নির্দিষ্ট করার মতো লোকবল বা তৎপরতা সরকারের নেই। ফলে সারা বছর ধরে অবৈধ বাজি বানানো ও বিক্রির চক্র চালু রয়েছে। সরকারি নথিতে তার খণ্ডচিত্র মেলে কেবল। বিধিভঙ্গের জন্য মাত্র বাহান্ন জনের গ্রেফতার হওয়াও যেন প্রহসন। হাওড়া কমিশনারেট, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াতে কোথাও পর্ষদ বা পুলিশ অবৈধ বাজি খুঁজে পায়নি, কাউকে গ্রেফতার করেনি, এ তথ্যও হাস্যকর। অথচ, এ সব তথ্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টেই মিলেছে। সরকার-আয়োজিত বাজি বাজারেও অবৈধ বাজি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
দিল্লিতে সরকার যেখানে সমস্ত ধরনের বাজি উৎপাদন, মজুত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কেন বাজির বৈধ-অবৈধ ভাগ করে দূষণের দরজা খোলা রাখছে? কেন শব্দসন্ত্রাস, দূষিত বায়ু, অগ্নিকাণ্ড, শ্বাসকষ্ট ও হৃদ্রোগের আধিক্য— কিছুই সরকারকে তৎপর করতে পারে না? উত্তরটি জানা— আইন রক্ষার কাজ সরকারের, কিন্তু সরকারে ক্ষমতাসীনরা অবাধে আইনভঙ্গ করেন। পুজো কমিটিগুলিতে তাঁদেরই আধিক্য, তবু মণ্ডপগুলিতে অবাধে ডিজে বক্স বাজানো থেকে শব্দবাজি পোড়ানো, সব উপায়েই শব্দসীমা লঙ্ঘন করে বিধিভঙ্গ করা হয়। পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয়। আইনের শাসনের এই শিথিলতা সকলকেই বিধিভঙ্গে উৎসাহিত করে। বাজি বানাতে গিয়ে, বাজি পোড়াতে গিয়ে যাঁরা অকালে প্রাণ দিয়েছেন, সমবেত উল্লাসে তাঁদের স্মৃতি মিলিয়ে যায় কটু ধোঁয়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy