E-Paper

পুলিশের বিপদ

এক সময়ে কুখ্যাত অপরাধীও পুলিশের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করত, এখন সাধারণ গৃহস্থের কাছেও তা জলভাত।

police

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৬
Share
Save

এ রাজ্যে পুলিশ নিগ্রহের ঘটনা নিয়মিত উঠে আসছে সংবাদে, তবু সম্প্রতি এন্টালিতে এক শিশুর জন্মোৎসবে যা ঘটল, তা বিস্ময়কর। মধ্যরাত পার করে বক্স বাজানো হচ্ছে, এই অভিযোগ পেয়ে পুলিশের টহলদারি বাহিনী একটি আবাসনে গিয়েছিল। পুলিশকর্মীরা জোর করলে নিমন্ত্রিতরা তাঁদের মারধর শুরু করেন, তাঁদের জোর করে আটকে রাখেন। এন্টালি থানা থেকে পুলিশবাহিনী গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে। এই ঘটনাটি দেখাল যে, পাড়ার আবাসনের বাড়ির ছাদেও এখন পুলিশ নিরাপদ নয়। এক সময়ে কুখ্যাত অপরাধীও পুলিশের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করত, এখন সাধারণ গৃহস্থের কাছেও তা জলভাত। এলাকার কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে অতি সামান্য কারণেও পুলিশের উপর হামলা চালানোর ঘটনা তো প্রায় নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ঘটে চলেছে। এ মাসেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে দুই পরিবারে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত করতে গেলে পুলিশের গাড়ির কাছে বোমা ফাটে, পাঁচ পুলিশকর্মী লাঠির ঘায়ে আহত হন, তাঁদের উদ্ধার করতে বিশাল পুলিশবাহিনী পাঠাতে হয়। গত নভেম্বরে কালীপুজোর চাঁদার জন্য ক্লাবের সদস্যদের হাতে এক ট্রাক চালকের নিগ্রহ থামাতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে নিউ মার্কেট থানার অতিরিক্ত ওসি-সহ তিন পুলিশকর্মী নিগৃহীত হন, ঘটনাস্থলে র‌্যাফ নামাতে হয়। হাওড়ার বালিতে জুয়ার আসর ভাঙতে গিয়ে গুরুতর আহত হন এক এএসআই এবং এক হোমগার্ড। প্রতি বছরই বাজি ফাটানো বা মাইক থামানোর চেষ্টা করে নিগৃহীত হতে হয় পুলিশকে। রাজ্যের শহর, মফস্‌সল, গ্রামে নানা ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, পুলিশের ঝুঁকির নিরিখে অপরাধপ্রবণ এলাকা আর গৃহস্থ এলাকাকে আলাদা করা যাচ্ছে না।

পুলিশ নিগ্রহের নানা ঘটনায় ধৃত দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া দরকার। কিন্তু পুলিশের কর্তৃত্ব অগ্রাহ্য করার, পুলিশের নির্দেশকে তুচ্ছ করে পুলিশকেই ‘শিক্ষা’ দেওয়ার এই মানসিকতা কী করে এত ছড়িয়ে পড়ল পশ্চিমবঙ্গে, তার আলোচনাও প্রয়োজন। অবশ্য কারণগুলি খুঁজে বার করতে খুব বেশি অনুসন্ধানের প্রয়োজন নেই। দলীয় রাজনীতি নানা ভাবে পুলিশকে নিয়ত ব্যবহার করছে, যার লক্ষণগুলি চোখের সামনে দেখছে রাজ্যবাসী। রাজনৈতিক প্রশ্রয়প্রাপ্ত নানা অপরাধচক্র নিয়ত সচল রয়েছে। দুষ্কৃতীদের অবাধ আইনলঙ্ঘনের সামনে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা তার ভাবমূর্তিকে আহত করেছে, পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সন্দেশখালিতে ইডি-র আধিকারিক এবং সাংবাদিকদের উপর আক্রমণে পুলিশের অনুপস্থিতি তার সাম্প্রতিকতম নমুনা। গ্রাম-শহরে অবৈধ মদের ভাটির ব্যবসা, এবং মত্তদের লাগামহীন দাপট পুলিশের প্রতি আস্থা কমিয়েছে। পাশাপাশি, বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মী, অথবা শাসক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নাগরিকদের প্রতি পুলিশের নির্দয় আচরণ, নানা মিথ্যা মামলা আরোপও প্রায় ‘স্বাভাবিক’ হয়ে উঠেছে।

এ সবের ফলে পুলিশের প্রতি অনাস্থা, অশ্রদ্ধার মনোভাব ক্রমশ ছড়িয়েছে। সর্বোপরি দেখা দিয়েছে এই ধারণা, পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করা কঠিন নয়— রাজনৈতিক নেতার অভয়হস্ত থাকলে আইনের শাসনকে সহজেই শিথিল করা যায়। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে যে, পুলিশের উপরে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ যত বাড়ছে, ততই জনমানসে পুলিশের প্রভাব কমছে। রাজনৈতিক হিংসা বা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মতো জটিল পরিস্থিতি তো দূরের কথা, চাঁদার জুলুম, মাইকের অত্যাচারের মতো ছোটখাটো অপরাধও বড় সঙ্কট হয়ে দেখা দিচ্ছে। কেবল পুলিশের উপস্থিতিতেই যেখানে অপরাধীদের নিরস্ত হওয়ার কথা, সেখানে তাদের হাত থেকে পুলিশকে বাঁচাতে এখন পাঠাতে হচ্ছে বিশাল বাহিনী। আশঙ্কা, এই পরিস্থিতির মুখে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সাধারণ পুলিশকর্মীরা অপরাধ ঘটতে দেখেও তা আটকাতে এগিয়ে যাবেন না। তেমন ঘটলে আরও বিপদে পড়বেন সাধারণ মানুষই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police West Bengal attack

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।