Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Global Warming

জলবৎ

ভারতে জলসঙ্কটের সমাধানসূত্র খুঁজতে হলে কৃষিক্ষেত্রের দিকে তাকাতেই হবে, কারণ ৮০ শতাংশের বেশি মিষ্টি জলের ব্যবহার হয় সেচের কাজে।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৭
Share: Save:

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব যত প্রকট হচ্ছে, দুনিয়াতে জলসঙ্কট তত ক্রমবর্ধমান হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলেও জলসঙ্কট ক্রমে তীব্রতর হছে। একটি সমীক্ষা বলছে, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ তীব্র থেকে অতি তীব্র জলসঙ্কটের সম্মুখীন। মানবোন্নয়নের নিরিখে এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি— জীবন ধারণের জন্য শ্বাসবায়ু ব্যতীত আর কিছুই জলের মতো এমন অপরিহার্য নয়। পরিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে যেমন বিবিধ অসুস্থতার প্রকোপ বাড়ছে, তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি। ফলে খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কা প্রকটতর হচ্ছে। পাশাপাশি, জল সংগ্রহের কাজটি ক্রমে কঠিনতর এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠায় তাতে নষ্ট হচ্ছে মানব শ্রমঘণ্টা। প্রতিটি ঘটনাই উন্নয়নের পক্ষে নেতিবাচক। অন্য দিকে, এই সঙ্কটের একটি বৈষম্যমূলক দিকও রয়েছে। জল হয়ে উঠছে একটি বাজারজাত পণ্য— যাঁর আর্থিক সামর্থ্য আছে, তিনি জল কিনে নিচ্ছেন; যাঁদের সেই সামর্থ্য নেই, তাঁদের পক্ষে জল সংগ্রহ করা কঠিনতর হচ্ছে। ঘটনা হল, এই বাজারেরও একটি সীমা আছে। জল যত দ্রুত ফুরোচ্ছে, তাতে টাকা থাকলেও তা কিনে নেওয়া বহু ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে উঠবে, সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে। সম্প্রতি আর্থিক রেটিং সংস্থা মুডি’জ় জানাল যে, ভারতের ক্রেডিট রেটিংয়ে দেশের জলসঙ্কটের প্রভাব পড়বে। জলের অভাব ঘটলে যেমন কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে, তেমনই ধাক্কা খাবে শিল্পও। রেটিং সংস্থাটির আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি শেষ অবধি তুমুল সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে, যা ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পক্ষে ক্ষতিকর হবে। এখনই ততখানি আশঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন থাকছে। কিন্তু, একই সঙ্গে মনে রাখা জরুরি যে, ভারতের অভিমুখ সেই বিপজ্জনক দিকেই।

ভারতে জলসঙ্কটের সমাধানসূত্র খুঁজতে হলে কৃষিক্ষেত্রের দিকে তাকাতেই হবে, কারণ ৮০ শতাংশের বেশি মিষ্টি জলের ব্যবহার হয় সেচের কাজে। প্রথমত, জলনিবিড় শস্যের চাষ থেকে সরে আসতে হবে তুলনায় কম জলের চাষে। সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মাধ্যমে ফসল ক্রয়ের সিদ্ধান্তও এমনই হওয়া বিধেয়, যা এই নীতিকে সমর্থন করে। কৃষিক্ষেত্রে ক্ষুদ্র সেচের ব্যবহার কমাতেই হবে। বিবিধ সমীক্ষায় দেখা যায় যে, বাঁধে যথেষ্ট জল থাকলেও তা শেষ অবধি বহু খেতে পৌঁছয় না। বৃহৎ সেচ ব্যবস্থার এই শেষ মাইলের সংযোগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতি অনুসরণ করতে হবে। দরকার গোষ্ঠীভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থারও। জল চিরকালই একটি গোষ্ঠীসম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত— তার অপব্যবহার রোধের দায়িত্বও গোষ্ঠীর হাতে ছাড়াই বিধেয়। অন্য দিকে, শিল্পক্ষেত্রে জলের ব্যবহারের বিষয়েও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। একাধিক শিল্পে বিপুল পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে। সংস্থাগুলিকে বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে, অথবা তাদের থেকে চড়া হারে শুল্ক আদায় করতে হবে। অন্য দিকে, শিল্পক্ষেত্রের দূষণের ফলে জলের বহু উৎস কার্যত ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জলাশয় থেকে নদী, মিষ্টি জলের এই উৎসগুলিকে শিল্পদূষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যও নির্দিষ্ট নীতি চাই। কিন্তু বাস্তব হল, ভারতে ২০১২ সালের পর আর জল-নীতির সংস্কার হয়নি। ২০১৮-১৯ থেকে নতুন জাতীয় জল-নীতি প্রণয়নের যে চেষ্টা চলছে, তার দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Global Warming Water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy