Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

বিচ্ছেদ প্রহর

এআইএডিএমকে বিজেপির সঙ্গ ছাড়ল, না বিজেপি তাকে ছাড়তে বাধ্য করল? কিছু কাল ধরেই ভারতীয় জনতার পার্টির রাজ্য সভাপতি আন্নামালাই ‘একলা চলা’র নীতি অনুসরণ করছিলেন।

An image of PM Narendra Modi

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:০০
Share: Save:

তামিলনাড়ুতে ভারতীয় জনতা পার্টি এখন কার্যত একাকী। রাজ্যের শাসক দল ডিএমকে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রধান শক্তি। রাজ্য রাজনীতিতে তার প্রধান প্রতিপক্ষ এআইএডিএমকে বিজেপির পাশে ছিল। সেই সহ-অবস্থান অনেক দিন ধরেই সুস্থিত ছিল না, শেষ পর্যন্ত এমজিআর প্রতিষ্ঠিত ‘জয়ললিতার দল’ আনুষ্ঠানিক ভাবে এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না ঠিকই, তবে আপাতত ধরে নেওয়া যায়, আগামী লোকসভা নির্বাচনে ডিএমকে তথা ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিপক্ষ হিসাবে এআইএডিএমকে এবং বিজেপি স্বতন্ত্র দল হিসাবেই লড়বে। রাজ্য রাজনীতিতে অন্য কোনও দলের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, বস্তুত এনডিএ-র অন্য শরিক তামিল মানিলা কংগ্রেস অতঃপর এনডিএ-তে থাকবে না এআইএডিএমকে-র অনুগামী হবে, সে বিষয়েও সংশয় স্বাভাবিক। আরও বড় কথা, তেমন কোনও বোঝাপড়া বিজেপি আদৌ চাইবে কি?

এখানেই নিহিত আছে সাম্প্রতিক বিচ্ছেদটির গূঢ় তাৎপর্য। প্রশ্ন হল: এআইএডিএমকে বিজেপির সঙ্গ ছাড়ল, না বিজেপি তাকে ছাড়তে বাধ্য করল? কিছু কাল ধরেই ভারতীয় জনতার পার্টির রাজ্য সভাপতি আন্নামালাই ‘একলা চলা’র নীতি অনুসরণ করছিলেন। এমনকি প্রয়াত জয়ললিতার সমালোচনাতেও তিনি মুখর হয়েছেন, যা এআইএডিএমকে-র সমস্ত মহলের পক্ষেই— অন্তত জনসমক্ষে— অসহনীয়। সম্প্রতি ডিএমকে-র উদীয়মান নেতা এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র উদয়নিধি স্ট্যালিনের ‘সনাতন ধর্ম’ সম্পর্কিত উক্তির প্রতিবাদে তিনি যে প্রবল এবং উচ্চকণ্ঠ অবস্থান নিয়েছেন, সেটিও তামিল তথা দ্রাবিড় মানসিকতার অনুকূল নয়। স্পষ্টতই, নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি আন্নামালাইকে এই নীতি অনুসরণের ছাড়পত্র দিয়েছে। তার পিছনে রাজনীতির হিসাবটি বুঝতে বিশেষ অসুবিধা নেই। সেই হিসাব নিতান্তই লাভ-লোকসানের। এআইএডিএমকে-র শরিক হয়েও তামিলনাড়ুতে বিজেপির পক্ষে লোকসভায় বেশি আসন পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, সুতরাং একক লড়াইয়ে ক্ষতির অবকাশ কম। অন্য দিকে, একাকী লড়াই করতে পারলে হিন্দুত্ববাদী অবস্থানটিকে অনেক জোরের সঙ্গে সামনে রাখা যায় এবং এতদ্দ্বারা দ্রাবিড়ভূমির হৃদয়পুরে সেই অবস্থানের শক্তি ও সম্ভাবনা যাচাই করা যায়, যা পরবর্তী অধ্যায়ে রাজ্য রাজনীতিতে কাজে লাগবে। অঙ্ক পরিষ্কার।

সেটাই শেষ অঙ্ক কি না, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য ভবিষ্যতের গর্ভে। নাগপুরের সঙ্ঘ পরিবার থেকে উঠে এসে অনেক দিন অবধি উত্তর ভারতের তথা হিন্দি বলয়ের দল হিসাবে পরিচিত বিজেপি গত তিন দশক ধরে সর্বভারতীয় হয়ে ওঠার যে চেষ্টা চালিয়ে আসছে, আজও— নরেন্দ্র মোদীর বিপুল নির্বাচনী সাফল্যের পরেও— সেই প্রকল্প বহুলাংশেই অসম্পূর্ণ। এখনও উত্তর (এবং পশ্চিম) ভারতই এই দলের প্রধান ঘাঁটি। এই সত্যও অনস্বীকার্য যে, হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্থানের রাজনীতি এবং তার ধারক মানসিকতাটি পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতেও ইতিমধ্যে বিপজ্জনক প্রভাব বিস্তার করেছে, পশ্চিমবঙ্গেও প্রতিনিয়ত সেই মানসিকতার আস্ফালন চলছে। এই দিগ্বিজয়ের পথে দক্ষিণ ভারত এ-যাবৎ একটি বড় প্রতিরোধী শক্তি হিসাবে সক্রিয় এবং অনেকাংশে সফল। তার পিছনে দ্রাবিড় সমাজ-মানস, সাংস্কৃতিক স্বাভিমান ও তার অনুসারী রাজনীতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদয়নিধির অসংযত ‘যুদ্ধঘোষণা’র অন্তর্নিহিত দর্শনটি এই প্রতিস্পর্ধী অবস্থানের ইতিহাস-সঞ্জাত ধারাবাহিকতাকেই চিহ্নিত করে। বিজেপি স্পষ্টতই এই প্রতিস্পর্ধার শক্তি যাচাই করতে চাইছে, দেখতে চাইছে দ্রাবিড় ভারতের কেন্দ্রেও তার সনাতনি হিন্দুত্বের বাজার কতটা বাড়ল। সর্বভারতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝতেও তামিলনাড়ুর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। বাকি ইতিহাস ক্রমশ প্রকাশ্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy