E-Paper

সাধ্যাতীত

এ দেশেই বিশ্বের সর্বাধিক যক্ষ্মারোগীর খোঁজ মেলে। দেশে ইতিমধ্যেই চালু যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের মাধ্যমে রোগীকে নিখরচায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ ০৭:৩৫
Share
Save

কথা ছিল, ২০২০ সালের মধ্যেই ভারতে যক্ষ্মা-আক্রান্তদের পরিবারের উপর থেকে আর্থিক বিপর্যয়ের নিদারুণ বোঝা সম্পূর্ণরূপে সরে যাবে। সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। বরং সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় ফুটে উঠেছে ভয়াবহ চিত্র— এ দেশের যক্ষ্মা-আক্রান্ত দশটি পরিবারের মধ্যে ছ’টি পরিবারই ভুগছে সাধ্যাতীত খরচ, যাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘ক্যাটাস্ট্রফিক কস্ট’ হিসাবে, তার ধাক্কায়। স্বাস্থ্য গবেষকরা ‘ক্যাটাস্ট্রফিক কস্ট’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেন চিকিৎসা সংক্রান্ত সেই খরচকে, যা কোনও পরিবারের বার্ষিক রোজগারের কুড়ি শতাংশের অধিক। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকার যক্ষ্মা নির্মূল করা এবং ২০২০ সালের মধ্যে আক্রান্তের পরিবারের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণজনিত খরচকে শূন্যে নামিয়ে আনতে এক জাতীয় পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল। তা সত্ত্বেও অসম, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে ১৪৮২টি যক্ষ্মা-আক্রান্ত পরিবারকে নিয়ে করা সাম্প্রতিক সমীক্ষাটিতে দেখা গিয়েছে ৬১ শতাংশ পরিবারই রোগজনিত অতিরিক্ত খরচের সম্মুখীন হয়েছে। এবং এই আর্থিক বিপর্যয় এসেছে দু’দিক থেকেই— চিকিৎসার খরচ এবং রোজগার হারানোর পরোক্ষ প্রভাবের কারণে।

ভারতের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান উদ্বেগের। কারণ, এ দেশেই বিশ্বের সর্বাধিক যক্ষ্মারোগীর খোঁজ মেলে। দেশে ইতিমধ্যেই চালু যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের মাধ্যমে রোগীকে নিখরচায় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রায় স্থির থাকতে হলে এইটুকুই যথেষ্ট নয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রমাণিত, যক্ষ্মা প্রতিহত করতে ওষুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সাল থেকে যক্ষ্মারোগীদের পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান দেওয়ার লক্ষ্যে রোগীপিছু প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু দরিদ্র পরিবারগুলির পক্ষে তা যথেষ্ট নয়। সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে যে, উপসর্গ দেখা দেওয়ার সময়টি থেকে শুরু করে চিকিৎসা-পরবর্তী এক বছর রোগের কারণে ব্যয় হয় ২৬,৫০০-৩০,৫০০ টাকা। বহু ক্ষেত্রেই পরিবারগুলি নিজেদের সামান্য সম্পদ বিক্রি করে, কখনও ধারদেনা করে চিকিৎসা-পরবর্তী খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলত, পরিবারগুলির আর্থিক দুরবস্থা দীর্ঘ কাল বজায় থাকে।

কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণামতো আক্রান্তের পরিবারের রোগজনিত খরচ শূন্যে নামিয়ে আনতে তাই প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে ভাবা প্রয়োজন। দেখা গিয়েছে, এই খরচের প্রাথমিক ধাক্কা শুরু হয় চিকিৎসা শুরুরও বহু আগে থেকে। কারণ, উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর থেকে চিকিৎসা শুরু— এই পর্বটিতে গড়পড়তা ৭-৯ সপ্তাহের বিলম্ব ঘটে। বৃদ্ধি পায় রোগনির্ণয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া, ওষুধ, পরীক্ষা, যাতায়াতের ব্যয়ভার। যক্ষ্মার কারণে রোগী কর্মক্ষমতা হারালে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারের অন্নসংস্থানের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে বইকি। তাই নিখরচায় চিকিৎসা এবং পথ্যবাবদ সামান্য অর্থ বরাদ্দ করাই নয়, অর্থের অভাবে রোগীর যাতে চিকিৎসা আটকে না যায়, সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যক্ষ্মা এক সংক্রামক রোগ। রোগের পাশাপাশি তার সঙ্গে যুক্ত দুর্দশারও যাতে অবসান ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tuberculosis catastrophic costs Financial Burden

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।