Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
old age home

অন্তরায়

বৃদ্ধাশ্রম-নিবারক আইনই সুরাহা।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২১ ০৫:০১
Share: Save:

রাজ্যে বৃদ্ধাশ্রম বাড়িতেছে, সন্তান কর্তৃক পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়া আসিবার প্রবণতাও। তাই অসম সরকার আইন আনিতেছে— সন্তান জীবিত থাকিতে পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখা চলিবে না। যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সন্তান নাই, কিংবা যাঁহারা নিরাশ্রয়, বৃদ্ধাশ্রমে তাঁহারাই থাকিবেন। অন্য শহরে বা দূর প্রবাসে জীবন গুছাইয়া লওয়া সন্তান মাসান্তে কিছু অর্থ ও বৃদ্ধাশ্রমের ভাড়া মিটাইয়া দায় ঝাড়িয়া ফেলিবে, তাহা হইবে না। তাহাতে পরিবারের ক্ষতি, সামাজিক সংস্কার ও মূল্যবোধেরও। বৃদ্ধাশ্রম-নিবারক আইনই সুরাহা।

সত্যই কি তাহাই সমাধান? ভারতীয় রীতির সুসংবদ্ধ পারিবারিক কাঠামোয় বৃদ্ধাশ্রমের অস্তিত্ব সুখকর নহে ঠিকই, সম্পত্তির লোভে বৃদ্ধ পিতামাতাকে সন্তান কৌশলে বা জোর করিয়া বাড়ি হইতে বাহির করিয়া দিতেছে, রাজপথে বা রেল স্টেশনে রাখিয়া আসিতেছে— এহেন ঘটনাও বাস্তবচিত্র। ‘বৃদ্ধাশ্রম’ শীর্ষক আধুনিক বাংলা গানে একাকিনী বৃদ্ধা মায়ের করুণ আক্ষেপ হৃদয় কাঁপাইয়া দেয়, অসম সরকারের বৃদ্ধাশ্রম-রোধী আইন আনিবার পশ্চাতে এই সব অস্বস্তিকর ও অমানবিক নজিরগুলি কাজ করিয়া থাকিবে। যে সব সরকারি কর্মী বৃদ্ধ পিতামাতার দেখাশোনা করিবেন না, তাঁহাদের বেতনের অংশ সরাসরি পিতামাতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাইবে, অসমে পূর্বেই এমন আইন হইয়াছে। ভারতের শাসনব্যবস্থায় আইন প্রণয়ন হয় মুহুর্মুহু, তাহাতে কাজের কাজটি হয় কি না বলা দুষ্কর। নবপ্রস্তাবিত আইনে সন্তানকে পিতামাতার দেখাশোনায় ‘বাধ্য’ করা হইবে, তাহাতে কি কাজ হইবে? বরং বৃদ্ধ পিতামাতা নিজেই ঠিক করিবেন কোথায় কোন সন্তানের কাছে থাকিবেন, কিংবা আদৌ থাকিবেন কি না— তাহাই কি অভিপ্রেত ও সঙ্গত নহে? পিতামাতা বৃদ্ধ বা অশক্ত হইলেও নিজস্ব মতামতহীন নহেন, অথচ তাঁহাদের বক্তব্যকে কোনও আমল না দিয়াই প্রস্তাবিত আইনে তাঁহাদের ‘অনিচ্ছুক’ সন্তানের কাঁধে বোঝার ন্যায় চাপাইয়া দেওয়া হইবে। অসম সরকারের যুক্তি, বৃদ্ধাশ্রম ভারতীয় পারিবারিক মূল্যবোধের, সামাজিক সংস্কারের পরিপন্থী— যে মূল্যবোধ ও সংস্কার বলে, সন্তান বড় হইলে বৃদ্ধ পিতামাতার দেখাশোনা করিবে। অর্থাৎ ধরিয়া লওয়া হইতেছে, সন্তানই বৃদ্ধ পিতামাতার দেখাশোনা সবচেয়ে ভাল করিয়া থাকে। বাস্তব যে ভিন্ন, প্রমাণিত। ‘করা উচিত’ মানেই ‘করিব’ নহে, দুইয়ের মধ্যে বিস্তর ফাঁক রহিয়া যাইতেছে।

বহু-আচরিত সংস্কারকে আইন করিয়া চাপাইয়া দিলে হিতে বিপরীত হইবার শঙ্কা। পিতামাতার দায় লইতে অনিচ্ছুক সন্তান তাঁহাদের বৃদ্ধাশ্রমে ঠেলিবে না হয়তো, কিন্তু ঘরে ঘরেই তখন বৃদ্ধাশ্রম না গড়িয়া উঠে। যে ভারতীয় মূল্যবোধের দোহাই পাড়িয়া অসম সরকার বৃদ্ধাশ্রমে ঝাঁপ ফেলিতে চাহিতেছে, চার দেওয়ালের ভিতরেও তাহা রক্ষিত হইবে কি না বলা মুশকিল। সত্যবাদিতা, অচৌর্যের ন্যায় পিতামাতার প্রতি ভালবাসাও অন্তরগত অনুভব, আইন করিয়া তাহার অভ্যাস করানো যায় না। বহু বয়স্ক মানুষ সন্তান থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায়, নিজ স্বাধীনতা যাপন করিবেন বলিয়াও বৃদ্ধাশ্রমে গিয়া থাকেন; বার্ধক্যে খাদ্য-স্বাস্থ্য-চিকিৎসার পরিষেবাগুলি বৃদ্ধাশ্রমের ঘেরাটোপে সুরক্ষিত বলিয়াও অনেকে যান। যাঁহাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম, সেই বয়স্ক মানুষগুলির মতামত না লইয়া প্রণীত ‘সংস্কারী’ আইন সহায়ক নহে, অন্তরায় হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

old age home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy