Advertisement
E-Paper

অনাদর

প্রকৃত ইতিহাস তথ্যবিকৃতির চাপে ক্রমশ পিছু হটছে। ইতিহাসের নামে অসত্য, অর্ধসত্য এবং বিকৃত কাহিনি গলাধঃকরণ করানোর সুবন্দোবস্ত হয়েছে।

এই প্রজন্মের অনেকেই লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক সেতুর নামমাহাত্ম্যটুকুও জানে না।

এই প্রজন্মের অনেকেই লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক সেতুর নামমাহাত্ম্যটুকুও জানে না।

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২২ ০৫:২৯
Share
Save

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হল। কিন্তু ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’র মতো রঙিন বাক্যের ব্যবহারে আর উৎসব-আড়ম্বরের আড়ালে কি ঢাকা পড়ে গেল না, অনেক ছোট-বড় গৌরবগাথা? যাঁরা প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায় এক প্রবল পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাঁরা কি সকলেই তাঁদের প্রাপ্য স্বীকৃতি, সম্মানটুকু পেলেন? প্রশ্নগুলি জরুরি, কারণ জাতীয় স্তরে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও প্রকৃত ইতিহাসকে রক্ষা করা, তাকে উত্তরকালের কাছে যথাযোগ্য মর্যাদা-সহকারে তুলে ধরার মধ্যে এক বিষম কার্পণ্যের চিহ্ন স্পষ্ট। যেমন— স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মেদিনীপুরের ভূমিকাটি সামান্য ছিল না। ১৯৩০ সালের লবণ সত্যাগ্রহে গোটা দেশ যখন উত্তাল, কাঁথি-রামনগর সীমানায় ইংরেজ শাসকদের সামনে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসীরা গর্জে উঠেছিলেন ‘আমরা পিছাবনি’। অধুনা পূর্ব মেদিনীপুরের অন্তর্গত সেই অঞ্চল আজও পরিচিত পিছাবনি নামেই। ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’-এ অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও এই স্থান উজ্জ্বল হয়ে আছে। অথচ, পিছাবনিতে একদা স্থাপিত শহিদ স্তম্ভ আজ অনাদরে পড়ে আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক মিউজ়িয়াম’ গড়ার প্রতিশ্রুতিও পূর্ণ হয়নি। এমনকি এই প্রজন্মের অনেকেই লবণ সত্যাগ্রহ স্মারক সেতুর নামমাহাত্ম্যটুকুও জানে না।

এই বিস্মরণ বেদনার, আশঙ্কারও। এই সময়ে, যখন ভারতের ইতিহাসকে নতুন ভাবে নির্মাণের মাতামাতি চলছে, তখন প্রকৃত ইতিহাসের প্রতি যদি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন না করা হয়, তবে তথ্যবিকৃতির সম্ভাবনা প্রবল। এব‌ং ইতিহাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অর্থ বিপুল ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভ, মূর্তি নির্মাণ নয়, বরণীয়দের নামে পথঘাট-মেট্রো স্টেশনের নতুন নামকরণও নয়। ইতিহাসকে সম্মান জানাতে হলে প্রথম কাজ— যত্ন সহকারে তার সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি সুসম্পন্ন করা। তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাস গড়তে উপযুক্ত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, সংগ্রহশালা নির্মাণের প্রয়োজন। পিছাবনির লবণ সত্যাগ্রহ সংগ্রহশালায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম, স্মৃতিচিহ্ন ও মহাত্মা গান্ধীর ব্যবহৃত কিছু জিনিস রাখার কথা বলা হয়েছিল। নতুন প্রজন্মের সামনে সেই চিহ্নগুলি উপযুক্ত তথ্য-সহকারে তুলে ধরা হলে প্রকৃত ইতিহাসের প্রতি তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেত। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা হয়নি। পিছাবনি ব্যতিক্রম নয়, জাতীয় এবং আঞ্চলিক স্তরে এখনও বহু কাজ বাকি। যেটুকু হয়েছে, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, প্রচারের অভাবে তা অনেকাংশে সাধারণের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে গিয়েছে।

ফলত, প্রকৃত ইতিহাস তথ্যবিকৃতির চাপে ক্রমশ পিছু হটছে। ইতিহাসের নামে অসত্য, অর্ধসত্য এবং বিকৃত কাহিনি গলাধঃকরণ করানোর সুবন্দোবস্ত হয়েছে। কিছু দিন পূর্বে ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব বলেছিলেন— অতীত সম্পর্কে জ্ঞান হবে সুসংহত ও সঠিক। ইতিহাস কেবল শাসক, রাজা, সম্রাটদের নয়, সাধারণ মানুষেরও। একটি দেশের ইতিহাস হল সেই দেশের জাতীয় স্মৃতি। কারও যদি স্মৃতি লোপ পায়, তাতে তাঁর জীবনে যেমন বিপদ নেমে আসে, একই ভাবে কোনও দেশের জাতীয় স্মৃতি বা ইতিহাস যদি ভ্রান্ত হয়, তা হলে সেই জাতিরও সমূহ বিপদ। দুর্ভাগ্য, ভারত সেই বিপজ্জনক পথেই পা বাড়িয়েছে।

India History

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।