Advertisement
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
India Vs Bangladesh

অথ হুমকি কথা

বিজেপি-শাসিত রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনই যখন হিন্দুত্ববাদীদের হাঁকডাককে আমল দিচ্ছে না, তখন মনে হতে পারে যে এ বাস্তবিকই উগ্র হিন্দুত্বের বহ্বারম্ভ, হয়তো শেষাবধি লঘু ক্রিয়াতেই পর্যবসিত হবে।

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:০৬
Share: Save:

সেই ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চলেছে— বয়কটের, কিংবা ভয় দেখানোর। আগামী ৬ অক্টোবর গোয়ালিয়রে ভারত-বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ, চোদ্দো বছর পর মাধবরাও সিন্ধিয়া স্টেডিয়ামে কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হতে চলেছে, কিন্তু হিন্দু মহাসভার তা সইবে কেন। তারা সেই দিনই ‘গোয়ালিয়র বন্‌ধ’-এর ডাক দিয়েছে, ‘সংখ্যালঘু হিন্দুরা বাংলাদেশে নিপীড়িত হচ্ছেন’, সেখানে ‘মন্দির ধ্বংস করা হচ্ছে’ বলে। তাদের কর্মসূচি: বাংলাদেশি খেলোয়াড়েরা ‘তাঁদের শহর’-এ এলে তাঁরা শুধু প্রতিবাদেই থেমে থাকবেন না, থামিয়ে দেবেন গোটা শহরটাই, যাতে স্টেডিয়ামে ম্যাচ হতে না পারে। পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য অভয় দিয়েছে যে এ নেহাতই ওই হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর বাগাড়ম্বর, মাঝেমাঝেই তারা এমনটা করে থাকে— শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা বিধানেও কোনও গলদ থাকবে না, ম্যাচও হবে নির্বিঘ্নে।

বিজেপি-শাসিত রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনই যখন হিন্দুত্ববাদীদের হাঁকডাককে আমল দিচ্ছে না, তখন মনে হতে পারে যে এ বাস্তবিকই উগ্র হিন্দুত্বের বহ্বারম্ভ, হয়তো শেষাবধি লঘু ক্রিয়াতেই পর্যবসিত হবে। তা বলে একে হেলায় উড়িয়ে দেওয়া নিতান্ত ভুল হবে, কারণ প্রতিবেশী দেশের কোনও ঘটনার প্রতিবাদ এই ভাবে ভাষায় ও ভঙ্গিতে করা চলে না। প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাক্রমের ফলস্বরূপ সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রদর্শন নিশ্চয়ই সঙ্গত, কিন্তু সেই উদ্বেগ ও উত্তেজনা নিজের দেশের মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ ভন্ডুল করার, জনজীবন বিপর্যস্ত করার হুমকিতে নামিয়ে আনা চলে না। বাংলাদেশের জনপরিসরের একাংশে এবং সমাজমাধ্যমে এই মুহূর্তে ভারত-বিরোধিতা মাথাচাড়া দিয়েছে, এই যুক্তির প্রতিযুক্তি হিসেবেও এই আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়, তা যথেচ্ছাচার ও মৌলবাদের নামান্তর। তা যাতে এতটুকু জমি পেতে না পারে, স্থানীয় প্রশাসনের অতি অবশ্যই নজর দেওয়া দরকার।

ভারত ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতেও এ কাজ অতি জরুরি। কূটনীতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ; রাজনীতির বাইরের ক্ষেত্রগুলি, যেমন শিল্প সংস্কৃতি এবং বিশেষ করে খেলা সেই সম্পর্কে শক্তিশালী সেতুবন্ধের কাজ করে। মনে রাখা দরকার, যে সময়ে গোয়ালিয়রে হিন্দুত্ববাদীরা ক্রিকেট ম্যাচ বয়কট ও বন্‌ধের ডাক দিচ্ছে, সেই সময়েই আমেরিকায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদল যে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে ছায়া ফেলেছে, তাকে স্বীকার করে নিয়েও ভবিষ্যতের সুস্থ ও সুস্থিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় দুই দেশই আগ্রহ দেখিয়েছে। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে অশান্তির আশঙ্কা এই পরিস্থিতিতে কখনওই অভিপ্রেত নয়, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে তা অনাবশ্যক বাধা হয়ে দাঁড়াবে। উৎসবের আবহে বাংলাদেশের ইলিশ বা ভারতের মাটিতে ক্রিকেট ম্যাচ, এই সবই সৌজন্য ও অর্থনীতি ছাপিয়ে বৃহত্তর কূটনীতিরও বার্তাবহ। কিছু উগ্রবাদীর দুরাচারে তা টাল খাওয়া কোনও কাজের কথা নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE