Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

অগণতান্ত্রিক

শুধু পেগাসাস কাণ্ডই নহে, গত সাত বৎসরে সংসদকে এড়াইয়া বহু গুরুতর সিদ্ধান্ত হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২১ ০৪:৫৫
Share
Save

পেগাসাস লইয়া শুনানির দিন স্থির করিয়াছিল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। কমিটির সভাপতি কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। ফলে, অনুমান করা চলে যে, কিছু বাছাই করা সাংবাদিক বা চিত্রতারকা যে ভঙ্গিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার লইয়া থাকেন, কমিটির প্রশ্নোত্তর ঠিক সেই পথে চলিত না। সম্ভবত সেই আশঙ্কাতেই কমিটির সদস্য বিজেপির সাংসদেরা উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করিলেন না— ফলে, ‘কোরাম’ না হওয়ায় বৈঠকটি ভেস্তাইয়া গেল। কিন্তু আরও উদ্বেগের কথা হইল, বৈঠকে যে সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিত থাকিবার কথা ছিল, তাঁহারা প্রত্যেকেই গরহাজির থাকিলেন। অনুমান করা চলে, আধিকারিকরা পূর্বেই স্থির করিয়া লইয়াছিলেন যে, তাঁহারা বৈঠকে আসিবেন না, সংসদীয় কমিটির প্রশ্নের উত্তর দিবেন না। তাঁহারা এহেন সিদ্ধান্ত সরকারের অজ্ঞাতসারে অথবা অনুমতি ব্যতিরেকে করিবেন, তাহা হয় না। গরহাজির থাকিবার সিদ্ধান্তটিও তাঁহাদের নিজস্ব, ইহাও অবিশ্বাস্য। বরং, গত সাত বৎসরে বিজেপি দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে যে ভাবে রাজনৈতিক পথে ব্যবহার করিতেছে, ইহা তাহারই আরও একটি নিদর্শন— সরকারের অঙ্গুলিনির্দেশেই আমলারা কমিটির সম্মুখে হাজির হন নাই।

ইহা গুরুতর বিধিভঙ্গ। শশী তারুর লোকসভার স্পিকারের নিকট পত্র লিখিয়া সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাইয়াছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই সাংবিধানিক বিধিভঙ্গের ঘটনাটিকেও বিজেপি রাজনৈতিক তরজায় পরিণত করিতে উদ্গ্রীব— বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এক প্রতিবাদপত্রে যে ভাষায় তারুরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিয়াছেন, তাহা রাজনৈতিক শালীনতার সকল গণ্ডি অতিক্রম করিয়া যায়। কিন্তু, বিজেপি সাংসদ যে ভঙ্গিতে আধিকারিকদের হইয়া সাফাই গাহিয়াছেন, তাহা আরও বিপজ্জনক— তিনি বলিয়াছেন, যে হেতু আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগের মধ্যে সম্পর্কটি ‘পারস্পরিক সম্মান’-এর, অতএব কমিটির সম্মুখে উপস্থিত না হইয়া আমলারা আইনবিভাগের অমর্যাদা করিয়াছেন, এমন বলা যাইবে না। রাজনীতির ঘোলা জলে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকায় বিজেপি ভুলিয়াছে যে, জনপ্রতিনিধিদের নিকট জবাবদিহি করিবার দায় শাসনবিভাগের পক্ষে অপরিহার্য— সংসদীয় কমিটির নির্দেশ অমান্য করিয়া আমলারা অনুপস্থিত থাকিলে তাহা কেবলমাত্র বিধিভঙ্গ নহে, সংবিধানের অবমাননাও। কারণ, যাঁহারা শাসনকার্য পরিচালনা করেন, তাঁহারা জনপ্রতিনিধিদের মারফত জনগণের নিকট জবাবদিহি করিতে বাধ্য থাকিবেন, ইহাই গণতন্ত্রের মূল সুর। আধিকারিকরা সংবিধান-নির্দেশিত এই ব্যবস্থাকে অমান্য করিয়াছেন। তাঁহাদের কঠোর শাস্তি হওয়া বিধেয়।

শুধু আধিকারিকদের শাস্তিবিধান করিলে অবশ্য বিচার অসম্পূর্ণ থাকিবে। কেন তাঁহারা এহেন বিধিভঙ্গ করিতে সাহস পান, সেই কারণটি অতি স্পষ্ট— কেন্দ্রে এখন যে রাজনৈতিক শাসন, তাহা গণতন্ত্রের তোয়াক্কা করে না। নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরে নজরদারির ন্যায় গুরুতর অভিযোগ উঠিবার পরও সরকার সংসদে সে বিষয়ে আলোচনা করিতে নারাজ— প্রধানমন্ত্রীও তাঁহার চর্চিত নীরবতা ত্যাগ করেন নাই। শুধু পেগাসাস কাণ্ডই নহে, গত সাত বৎসরে সংসদকে এড়াইয়া বহু গুরুতর সিদ্ধান্ত হইয়াছে; কার্যত কোনও প্রসঙ্গেই সরকার বিরোধীদের প্রশ্নের সম্মুখীন হয় নাই। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিকে স‌ং‌সদীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্যাস বলা চলিতে পারে। গত সাত বৎসরে সেই ব্যবস্থাটিকে কার্যত নিধিরাম সর্দারে পরিণত করিয়াছে সরকার। লোকসভার স্পিকার এই প্রবণতার বিচার না করুন, অন্তত তাহার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিবেন, তেমন আশা করিবার উপায় নাই। বিচারের দায়, অতএব, জনগণের হাতেই।

BJP sashi tharoor Pegasus

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।