কলকাতায় সাম্প্রতিক কালে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা এবং তার বিধ্বংসী রূপ— কোনওটিই উপেক্ষা করার মতো নয়। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনায় কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আগুন গিলে খেয়েছে বস্তি, বহুতল, বাজার। সর্বহারা বহু পরিবার। সম্প্রতি যোধপুর পার্কের ক্যাফেতে বিস্ফোরণ এবং আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনাটির পরিণতি যে ততটা মারাত্মক হয়নি, সেটা খানিক স্বস্তির কারণ। কিন্তু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল যথেষ্ট। প্রথমত, একটি বাড়ির নীচের অংশে ছিল ক্যাফেটি। আগুন উপরতলা অবধি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেকগুণ বাড়ত, সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়ত, ঘটনাটি ক্যাফে খোলার অব্যবহিত পর ঘটায় কোনও খরিদ্দার সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। শুধুমাত্র এক জন কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার সংবাদ মিলেছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি গুরুতর প্রশ্ন সামনে আসে। এ শহরে তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে অসংখ্য ক্যাফে গজিয়ে উঠেছে, সেগুলির সুরক্ষাবিধি নিয়ে প্রশাসন সচেতন কি?
সচেতন হওয়া প্রয়োজন ক্যাফেগুলির অবস্থান এবং তার পরিকাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই। আগুন নিয়ে কারবার, অথচ কোনও নজরদারি নেই— এমন ভাবেই চলছে এ বঙ্গের ক্যাফেগুলি। ক্যাফে সংস্কৃতি এখন প্রবল জনপ্রিয়। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যায় রসনাবিলাসের মূল ভরকেন্দ্রও এটাই। বিদেশের ধাঁচে খাদ্য, পানীয়, বই, আড্ডা সহযোগে ক্যাফে সংস্কৃতিকে এক সময়ে গ্রহণ করেছিল শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা। অতঃপর তার জনপ্রিয়তা শহরের গণ্ডি ছেড়ে মফস্সলকেও গ্রাস করেছে। সুতরাং, তার সুরক্ষার ব্যবস্থাটিও পাকাপোক্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তবে তাতে ফাঁকি রয়েছে অনেকখানি। এই ব্যবসা চালাতে স্বল্প পুঁজি এবং লোকবলের প্রয়োজন। ফলে, ছোট পরিসরে, অনেক সময়েই পুরনো বসতবাড়ির একটা অংশ বেছে মূল পরিকাঠামোয় সামান্য রদবদল ঘটিয়ে এবং কিছু ভিন্ন ভাবনাকে সঙ্গী করে ক্যাফে খোলা যায়। সমস্যা হল, বসতবাড়ির মাঝে এগুলি গড়ে ওঠায় ছোট অগ্নিকাণ্ডও দ্রুত ছড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। অগ্নিকাণ্ড ঠেকানোর জন্য যে আধুনিক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, ক’টি ক্যাফে সেই পথে হাঁটে? আজ পর্যন্ত তাদের ক’টির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করা হয়েছে?
সম্প্রতি ক্যামাক স্ট্রিটের রেস্তরাঁ এবং কসবার একটি মলের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছিল। দেখা গিয়েছিল, বেশ কিছু রেস্তরাঁ, ক্যাফে বাড়ির গোটা ছাদ ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। ফলে, সেই বাড়িতে আগুন লাগলে ভিতরে আটকে থাকাদের পরিণতি হবে মর্মান্তিক। উদ্ধার করার মতো জায়গাটুকুও থাকবে না। এ ক্ষেত্রে কড়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছে কলকাতা পুরসভা। প্রশ্ন হল, সে কাজ কবে হবে? অনেক সময়েই ক্যাফের দেওয়ালসজ্জায় দাহ্য পদার্থ ব্যবহৃত হয়। নজর রাখা হয় না সে দিকেও। রেস্তরাঁ বা ক্যাফে মালিক পুরসভার নিয়ম না মানলে জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু কড়া শাস্তির অনুপস্থিতিতে অনিয়মে অভ্যস্ত শহর নিজ শর্তেই চলে। রাজনৈতিক সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই। তাই অবিলম্বে ভাষণ না দিয়ে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হোক পুরসভা। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে, উপায় নেই। আগুন লাগার পর বুদ্ধি বাড়া-র দাম বড্ড বেশি পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy