E-Paper

অন্য পরীক্ষা

দুঃখের কথা, সব চর্চা বাইরের পরীক্ষা ঘিরেই, ভিতরের পরীক্ষাটি নিয়ে প্রায় কোনও কথাই হয় না। অনেক সময় পরীক্ষা চলতে চলতেই এই দ্বিতীয় ও কঠিনতর পরীক্ষাটির ফল বেরিয়ে যায়— মর্মান্তিক ফলাফল।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৯
Share
Save

মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার মুখে, অঙ্কের প্রশ্নপত্র ঘিরে কিছু সংশয় ছাড়া এখনও পর্যন্ত অন্য কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পরীক্ষা তো শুধু এক-একটা বিষয়ে ভাল নম্বর পাওয়ার পরীক্ষা নয়, রাজ্য জুড়ে প্রায় দশ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জীবনেরও প্রথম বড় ‘পরীক্ষা’— নিজের আশা পূরণের, অন্যের প্রত্যাশার চাপ নিতে পারারও পরীক্ষা। মাধ্যমিকের সমান্তরালে সেই পরীক্ষাতেও বসতে হয় সমস্ত পরীক্ষার্থীকে। কিন্তু দুঃখের কথা, সব চর্চা বাইরের পরীক্ষা ঘিরেই, ভিতরের পরীক্ষাটি নিয়ে প্রায় কোনও কথাই হয় না। অনেক সময় পরীক্ষা চলতে চলতেই এই দ্বিতীয় ও কঠিনতর পরীক্ষাটির ফল বেরিয়ে যায়— মর্মান্তিক ফলাফল। যেমন হল পশ্চিম মেদিনীপুরে, পিংলার গ্রামে নিজের বাড়িতে সিলিং ফ্যানে বাঁধা শাড়ির ফাঁসে এক পরীক্ষার্থীর দেহ উদ্ধার হল। ইংরেজি পরীক্ষার পর থেকেই সে মনমরা ছিল, অঙ্ক পরীক্ষাও ভাল হয়নি।

খেয়াল করলে দেখা যাবে, এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রতি বছরই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন ঘটে। খবরও হয় তা নিয়ে। কিন্তু কাজের কাজটি হয় না— এই মৃত্যুর খতিয়ান লেখা কখনওই বন্ধ হয় না। প্রায় দশ লক্ষ যেখানে পরীক্ষার্থী, সেখানে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা একটি-দু’টি, শতাংশের এ-হেন অমানবিক হিসাব কোনও কথাই নয়— কেন তরতাজা সম্ভাবনাময় একটি তরুণ প্রাণও ঝরে যাবে স্রেফ পরীক্ষা খারাপ হওয়ার জেরে? এমন ঘটনা ঘটলেই অবধারিত ভাবে চর্চা হয় বাড়ির পরিবেশ বা অভিভাবকদের অসতর্কতা নিয়েও। ক্ষেত্রবিশেষে তা অবশ্যই সত্য, কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্য— পরীক্ষা চলাকালীন একটি অল্পবয়সি ছাত্র বা ছাত্রীর মনের খবর কেউই পায়নি বা রাখেনি— তার বাবা-মা, শিক্ষক, ভাইবোন বা প্রিয় বন্ধুও না।

পরিবার, বিদ্যালয়, সমাজ, প্রশাসন— কোনও প্রতিষ্ঠানই কি এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে? ছাত্রছাত্রীদের মানসিক-স্বাস্থ্য রক্ষায় এই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই উল্লেখযোগ্য ভাবে ব্যর্থ। এখানে অভিভাবকেরাই ভাল নম্বর ও ফলাফলের বিপুল প্রত্যাশার ভার চাপিয়ে দেন ছেলেমেয়েদের উপরে, স্কুলে সহপাঠীদের করে তোলা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী, ভাল নম্বর না পেলে ছাত্র বা ছাত্রীর সমাজে মুখ দেখাতে না পারার মতো হীনম্মন্যতা তৈরি করানো হয় প্রতি পদে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, কিন্তু তা অতি নগণ্য বা সামাজিক ভাবে খুব কম দৃশ্যমান। তবে একেবারেই যা নেই তা হল, এ ব্যাপারে প্রশাসন তথা সরকারের হেলদোল। রাজ্যের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রক কি শুধুই স্কুল চালানো আর পরীক্ষা নেওয়ার যন্ত্র? শিক্ষা, বিশেষত পরীক্ষার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের যে মানসিক উদ্বেগ ভয় আশঙ্কা অবসাদ অঙ্গাঙ্গি, তা নিরসনে কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি কী করেছেন? অথচ এ কোনও কঠিন কাজ নয়: বছরভর এবং বিশেষ করে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষার আগে নিয়ম করে ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিংয়েই অনেক কাজ হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকেরা সানন্দে তা করবেন, সরকার এ উদ্যোগে শামিল করতে পারে মনোবিদ, চিকিৎসক এবং সমাজের বিশিষ্ট মানুষদেরও। তাঁরা পরীক্ষার্থীদের সামনে এসে যদি এ কথা বার বার বলেন যে, পরীক্ষায় সাফল্য নিশ্চয়ই মূল্যবান কিন্তু অমূল্য জীবনের পাশে তা কিছুই না, তা হলে তাদের ভয় ভাঙবে, বদ্ধ ঘরের অন্তরালে চরমতম সিদ্ধান্তটি নিতে হবে না। সরকার এর গুরুত্বটি বুঝে অবিলম্বে পদক্ষেপ করুক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Students Suicide Mental Health madhyamik exam

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।