—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। Sourced by the ABP
এও এক যুদ্ধ, কূটনৈতিক যুদ্ধ। এমন যুদ্ধ ভারত কোনও পশ্চিমি দেশের সঙ্গে সচরাচর লড়ে না। এই মুহূর্তে কানাডা-ভারত যে উত্তপ্ত দ্বৈরথে অবতীর্ণ, আজ নয়, প্রায় এক বছর ধরে তার বীজ ছড়ানো চলছিল। এখন ক্ষেত্র কেবল প্রস্তুত নয়, অতি উর্বর, তপ্তশিখানলে পুড়ে চলেছে দুই দেশের সম্পর্ক। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতিমধ্যে একটি অদ্ভুত মন্তব্য করে সঙ্কট আরও বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, তাঁর দেশ হরদীপ সিংহ নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডের পিছনে ভারত সরকারের হাত নিয়ে যে অভিযোগ এনে তার ভিত্তিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে, সেই অভিযোগ বিষয়ে অবশ্য এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। বিচিত্র পরিস্থিতি! এত বড় অভিযোগ, তাকে কূটনীতির চত্বরে এনে ফেলে এত রকম পদক্ষেপ, অথচ অভিযোগটি যে এখনও বায়বীয় তা নিজমুখেই স্বীকার করা হচ্ছে। স্বভাবতই প্রমাণহীন ‘অসার’ অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে ভারত সরকার কঠিনতর দাবি তুলতে শুরু করেছে। বিদেশ মন্ত্রক থেকে বার্তা গিয়েছে: এই অত্যন্ত অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির দায় সর্বতোভাবে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকেই নিতে হবে। রাজনৈতিক স্বার্থে সে দেশের বিস্তীর্ণ অভিবাসী শিখ সমাজের সমর্থন আদায় করতে চান ট্রুডো। সেই সমাজের মধ্যে তীব্র ভাবে প্রবহমান খলিস্তানি প্রভাবকে উস্কানি দিতে চান। খলিস্তানি সমর্থক নিজ্জরের হত্যা প্রসঙ্গে এই ভিত্তিহীন দাবি তোলা হচ্ছে কানাডাবাসী শিখ সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে— ভারত সরকারের এই পাল্টা অভিযোগ এখন নানা দিক থেকেই সঙ্গত ও সত্য বলে প্রতিভাত হচ্ছে।
বিষয়টি এমন স্তরে পৌঁছেছে যে অভূতপূর্ব ভাবে দুই দেশ অন্তত ছয় জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, বাক্স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে এঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচুর অভিবাসন ভিসা সোজাসুজি বাতিল হচ্ছে, বেড়াতে যাওয়ার ভিসার আবেদন গ্রাহ্যই হচ্ছে না। সাধারণত এই ধরনের পদক্ষেপগুলি পারস্পরিকতার ভিত্তিতে করা হয়। এ ক্ষেত্রে যে-হেতু আক্রমণ ও সম্পর্কচ্ছেদ প্রথমেই শুরু করেছে কানাডা, ভারতের বিদেশ মন্ত্রক যে পাল্টা পদক্ষেপ করতেই পারে, বুঝতে অসুবিধা হয় না। বাস্তবিক, পরিস্থিতি এখন যেমন, তাতে ভারত বলতেই পারে যে অভিযোগ প্রমাণের মতো নথিপত্র না দেখাতে পারলে কানাডার আন্তর্জাতিক মঞ্চে জবাবদিহি করা উচিত।
তবে, একটি অন্ধকার খাদও আছে বইকি। কানাডার বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর চড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির বিশেষ সতর্ক হয়ে তদন্ত করা আবশ্যক যে, দেশীয় কূটনীতিকরা সেখানে ঠিক কী ধরনের অপ্রকাশ্য ‘অপারেশনস’ করেছেন। কথাটা উঠছে এই জন্যই যে ভারতের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কিন্তু এই প্রথম নয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা নিজের সীমা পেরিয়ে গিয়ে আগেও এমন কাজ করেছে, হয়তো খোদ সরকারও সে বিষয়ে যথেষ্ট অবগত ও অবহিত থাকেনি। এই প্রসঙ্গে অপরাধ জগতের অন্যতম নেতা লরেন্স বিশ্নোই-এর নামটি এখন গুরুত্বপূর্ণ, কানাডার পুলিশি তদন্তসূত্রে। নানা নিধনপ্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত এই বিশ্নোই: সম্প্রতি জঙ্গি-সম্পর্কে অভিযুক্ত মরাঠা রাজনীতিক বাবা সিদ্দিকির হত্যার ঘটনায় তাঁর নাম শোনা গিয়েছে। বিশ্নোই-এর নাম কেন আসছে কানাডার ঘটনাসূত্রে, প্রশ্ন এটাই। স্বভাবতই, কানাডা এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এখন চেষ্টায় আছে ভারতের অন্যান্য শত্রুভাবাপন্ন দেশ থেকে ভারতের এই ধরনের গোপন অনৈতিক পদক্ষেপের নিদর্শন জোগাড় করতে। হয়তো পাকিস্তান, এবং অন্যান্য পশ্চিম এশীয় দেশগুলি থেকে তেমন সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলেও যাবে। এমন ঘটনা অতীতে কম ঘটেনি। এমন তথ্য যদি মিলে যায়, তা হলে কিন্তু ভারতের এক বিপুল দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক ক্ষতি হতে চলেছে। শত্রুকে আক্রমণ করতে হলে আত্মপক্ষের সঙ্কটটি আগে সামলে নেওয়া দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy