E-Paper

ছাড়পত্র কেন

২০১৯-২০২৪ সময়কালে ভারত থেকে রফতানি হওয়া ৫২৭টি খাদ্যবস্তুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা নজরদারি দফতর খুঁজে পেয়েছে এথেলিন অক্সাইডের মতো রাসায়নিক, যা শরীরে ঢুকলে হতে পারে ক্যানসার।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৮:৪৬
Share
Save

পাতে পড়ছে বিষ। ২০১৯-২০২৪ সময়কালে ভারত থেকে রফতানি হওয়া ৫২৭টি খাদ্যবস্তুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা নজরদারি দফতর খুঁজে পেয়েছে এথেলিন অক্সাইডের মতো রাসায়নিক, যা শরীরে ঢুকলে হতে পারে ক্যানসার। তালিকায় আছে বাদাম, তিল, নানা মশলা, ভেষজ খাদ্যসামগ্রী। এতেই শেষ নয়। আরও চারশোরও বেশি খাদ্যবস্তুতে পাওয়া গেছে সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়ামের মতো বিষাক্ত ধাতু— যা খেলে কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্কের ক্ষতি তো হবেই, মারাত্মক ব্যাহত হবে হজমশক্তি ও সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই তালিকায় রোজকার চেনা হলুদগুঁড়ো, চাল, লঙ্কা, কফি থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক সাপ্লিমেন্ট, রফতানি হওয়া অক্টোপাস-স্কুইড, মাংস, সব আছে। মনে রাখতে হবে, এদের অনেক ক’টিতেই ‘অরগ্যানিক’ মার্কা সাঁটা, এবং সবই ‘এক্সপোর্ট কোয়ালিটি’ পাশের পরীক্ষায় ভারত থেকে সগৌরবে ছাড়পত্র পেয়ে এসেছে।

এমন খবরে আতঙ্ক জাগতে বাধ্য। স্বাস্থ্যের অধিকারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি খাদ্যের অধিকার, এমন খাদ্য যাতে শরীর ভাল থাকে। পাশ্চাত্যে, বিশেষত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে খাদ্যের গুণাগুণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনও আপস করা হয় না, এই সংক্রান্ত নিয়মকানুন অত্যন্ত কড়া— মানুষেরই কল্যাণে। ভারত থেকে রফতানি হওয়া খাদ্যে যদি এত বিষ ধরা পড়ে, তা হলে বোঝাই যাচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাজে কতটা অসতর্ক। যে খাদ্য ‘অরগ্যানিক’ ও ‘এক্সপোর্ট কোয়ালিটি’ তকমা পাওয়া, তাদের গুণমান ও বিশুদ্ধতা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, এমন ভাবনাই কি স্বাভাবিক নয়? কোন গাফিলতিতে বিষাক্ত, মারণরোগ ঘটাতে পারে এমন রাসায়নিকযুক্ত খাবারও ছাড় পেয়ে যাচ্ছে? এ শুধু দক্ষতা বা ব্যর্থতারও প্রশ্ন নয়, মানবিকতারও প্রশ্ন— এমন খাবার বিদেশে পাঠিয়ে কি জেনেশুনে কিংবা অজানতে এক ভয়ঙ্কর অপরাধ ঘটানো হচ্ছে না? খবরে প্রকাশ, ৮৭টি চালান বিদেশের সীমান্ত থেকেই পত্রপাঠ বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ খাদ্যের গুণমান নিয়ে পরীক্ষায় ডাহা ফেল তো বটেই, তদুপরি অর্ধচন্দ্র। এর প্রভাব দেশের রফতানি-অর্থনীতি ও সার্বিক বাণিজ্য-ভাবমূর্তিতেও পড়তে বাধ্য। তা কি খুব সুখকর অভিজ্ঞতা হবে?

দেশের মধ্যে খাদ্যের গুণাগুণ বিচার করে দেখার কাজটি ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র। আর বিদেশে পাঠানো খাবারের ক্ষেত্রে এর ভার ‘এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি’র উপর, যা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কেন্দ্র কোনও ভাবেই এই দায় এড়াতে পারে না। এর আগেও দেশের মধ্যেই বহু খাদ্য-বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক গোষ্ঠী খাবারে রাসায়নিক-দূষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যে জলের উৎস, তার দূষণের দিকে আঙুল উঠেছে; কারখানার বিপুল রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশনে গাফিলতি নিয়েও। এই সবই নাগরিকের মুখে তোলা খাবারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে। বিদেশে রফতানি করা খাবারেই যদি এত বিষ ধরা পড়ে, তা হলে ভারতের একশো চল্লিশ কোটি মানুষ রোজ পাতে কোন গুণমানের খাবার খাচ্ছেন, ভেবে শিউরে উঠতে হয়। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলবেন, বিষ কোথায়, দেশে তো ‘অমৃত’কাল চলছে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Foods Chemicals Sample Tests India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।