Advertisement
E-Paper

বিধায়কের কাজ

খাদ্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করিয়া তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় এবং বিরোধী নেতা জ্যোতি বসুর দীর্ঘ, তীব্র বাদানুবাদ বিধানসভা দেখিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৯
Share
Save

গণতন্ত্রে বিধানসভার ভূমিকা কী, রাজ্যবাসী যেন ভুলিতে বসিয়াছিল। কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার তাহা মনে করাইলেন। কান্দির একটি নির্মীয়মাণ সেতুর বিকল্প রাস্তার (বাইপাস) নির্মাণ লইয়া তাঁহার প্রশ্ন এড়াইয়াছিলেন পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক। সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কেও ভ্রান্ত তথ্য দিয়াছিলেন। অপূর্ববাবু মন্ত্রীর ভ্রান্তি দর্শাইয়া প্রকৃত তথ্য দাবি করিয়াছেন। তিনি শাসক দলের বিধায়ক, তৎসত্ত্বেও দলকে বিব্রত করিবার চিন্তায় পশ্চাৎপদ হন নাই, তাঁহার এলাকা-সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলিয়া ধরিয়াছেন। নির্বাচিত প্রতিনিধির মৌলিক দায় পালন করিবার এই দৃষ্টান্তকে এক বিরল ব্যতিক্রম বলিতে হয়। আজ সকল রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ সাংসদ-বিধায়কের কাণ্ডকারখানা দেখিলে মনে হয়, তাঁহারা গণতন্ত্র বলিতে বুঝেন নির্বাচন। আপন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের সন্তুষ্টি বিধানকেই সাংসদ-বিধায়কের প্রধান কর্তব্য বলিয়া মনে করেন। ‘বিরোধিতা’ হইয়া উঠিয়াছে অপরাপর দলের সদস্যদের হেনস্থা। ফলে বিধানসভা এবং সংসদের কার্যসূচি যেন নির্বাচনী প্রচারের এক বিস্তৃত রূপ হইয়াছে, আলোচনা ও বিতর্কের স্থান লইয়াছে পরস্পর আক্রমণ, সভা বয়কট, সভার বাহিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন। সরকারকে প্রশ্ন করিবার, তাহার ভ্রান্তি ও ত্রুটিগুলি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করিবার, এবং সর্বোপরি সাধারণ নাগরিকের বিবিধ সমস্যা-সঙ্কটের কথা সরকারের সম্মুখে আনিবার উদ্যোগ দেখা যায় নাই। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের পর নবগঠিত বিধানসভার প্রথম অধিবেশন কার্যত বিরোধীশূন্য রহিল, বিজেপি সদস্যদের অনুপস্থিতিতে একটি পূর্ণ অধিবেশন হইল, ইহা এক লজ্জার ইতিহাস।

অথচ, পঞ্চাশ ও ষাট দশকের খাদ্য আন্দোলনকে কেন্দ্র করিয়া তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় এবং বিরোধী নেতা জ্যোতি বসুর দীর্ঘ, তীব্র বাদানুবাদ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা দেখিয়াছে। শস্যের উৎপাদন, মজুত এবং বণ্টনের বিস্তারিত তথ্য বিধানসভা অধিবেশনের সংবাদ হইতেই পাইত রাজ্যবাসী। পরবর্তী কালে জ্যোতি বসুর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে আবদুস সাত্তার, জয়নাল আবেদিন, সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিরোধী নেতারা বিধানসভায় সরকারের তীব্র সমালোচনা করিয়াছেন। বিধানসভা বয়কট বিরোধিতার পরাকাষ্ঠা হইয়া উঠে নাই। অপর পক্ষে, প্রশ্নের উত্তর দিবার কর্তব্যও গুরুত্ব পাইত সরকারের নিকট। বামফ্রন্ট আমলে ভূমি সংস্কার লইয়া বহু বিতর্ক উঠিয়াছে। বিধানসভায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর নিয়মিত উপস্থিতি এবং সকল প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বিরোধীদেরও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়াছিল। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভায় উপস্থিতি এবং উত্তর প্রদানের একটি ধারাও তৈরি হইয়াছিল। বিশেষত বাজেট অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির বরাদ্দ লইয়া দীর্ঘ আলোচনা হইবে, ইহাই প্রত্যাশিত ছিল। পুলিশ অথবা পূর্ত দফতরের বাজেটও যে বিনা বিতর্কে পাশ হইয়া যাইতে পারে, তাহা অতীতের বিধায়কদের নিকট সম্ভবত অকল্পনীয় ছিল। এখন তাহাই ‘স্বাভাবিক’ হইয়া উঠিয়াছে।

বিধানসভা ক্রমে প্রশ্নহীন হইয়া উঠিয়াছে বলিয়াই প্রশাসনের দুর্নীতি ও অবহেলার প্রতিকার করিতে আজ আদালতে ছুটিতেছেন নাগরিক। যে সকল তথ্য বিরোধীর প্রশ্নের উত্তরেই প্রকাশ হইতে পারিত, সেইগুলির জন্য আদালতকে তদন্তের নির্দেশ দিতে হইতেছে। সরকারি নীতির ভ্রান্তি, শাসক দলের অন্যায়, পুলিশ-প্রশাসনের নিপীড়ন— এই সকল বিষয় বিধানসভায় সরকারের সম্মুখে তুলিয়া ধরিবেন নির্বাচিত বিধায়ক, এই আশা করিয়াই মানুষ ভোট দেন। বিধানসভা বয়কট করিয়া, তাহাকে রাজনৈতিক বচসার ক্ষেত্র করিয়া বাংলার জনপ্রতিনিধিরা নাগরিকের প্রতি অপরাধ করিতেছেন।

WB Assembly

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।